ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ব্যাংকিং মেলা উদ্বোধনকালে গবর্নর ড. আতিউর

শুধু মুনাফায় না ছুটে জনকল্যাণে মন দিতে হবে ব্যাংকগুলোকে

প্রকাশিত: ০৫:১৯, ২৫ নভেম্বর ২০১৫

শুধু মুনাফায় না ছুটে জনকল্যাণে মন দিতে হবে ব্যাংকগুলোকে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ শুধু মুনাফার পেছনে না ছুটে মানুষ ও সমাজের কল্যাণে এগিয়ে আসতে ব্যাংকগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নর ড. আতিউর রহমান। তিনি বলেন, ব্যাংক শুধু উচ্চবিত্তের ধনাগার নয়, দরিদ্রের ক্ষমতায়নে নিবেদিত কারখানা। মানুষ হচ্ছে তার আর্থিক উন্নতির সহযোগী বন্ধু। বুধবার সকালে রাজধানীর বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে ‘ব্যাংকিং মেলা বাংলাদেশ-২০১৫’ উদ্বোধন ও প্রধান অতিথির বক্তব্যে গবর্নর এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের আয়োজনে পাঁচ দিনব্যাপী এই মেলায় দেশী-বিদেশী ৫৬টি ব্যাংক, ছয়টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও সাতটি আর্থিক সেবাসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান অংশ নিচ্ছে। এতে ব্যাংকগুলো ঋণ ও আমানত স্কিমসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্য ও সেবা সম্পর্কে তথ্য তুলে ধরবে। গবর্নর বলেন, আমাদের পরিশ্রমের লক্ষ্য দেশের অর্থনীতিকে বেগবান করা। এই লক্ষ্যকে সামনে রেখে প্রতিদিন বিভিন্ন সেবা ও দ্রব্যের যোগান পৌঁছে দিতে চাই মানুষের দ্বারে। মেলার মাধ্যমে ব্যাংকগুলো একে অন্যের কাছ থেকে বিভিন্ন বিষয়ে শিখতে পারবে। তিনি বলেন, একটি জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতি গড়ে তুলতে চাই। সদিচ্ছার সঙ্গে ভুলত্রুটি থেকে শিক্ষা গ্রহণের মানসিকা থাকতে হবে। অর্থ পরিধি সমাজের সবার মধ্যে বিস্তৃত না হলে প্রবৃদ্ধি টেকসই হয় না। এজন্য দরিদ্র, নারী, স্কুলগামী শিক্ষার্থী, পথশিশু ও পোশাক শিল্পের কর্মী বা অবহেলিত জনগোষ্ঠীকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। আতিউর রহমান বলেন, টেকসই প্রবৃদ্ধি আমাদের দীর্ঘমেয়াদী উন্নতি বা অস্তিত্বের জন্য অপরিহার্য। তাই আসুন আমরা মানবিক ব্যাংকিংয়ের প্রতিশ্রুতি গ্রহণ করি। ব্যাংককর্মীদের নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠানের পারিবারিক সদস্যের মতো সম্মান করার আহ্বানও জানান গবর্নর। অর্থমন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব ড. এম আসলাম আলম বলেন, তিনি বলেন, দারিদ্র্য দূর করার বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির হার বাড়িয়ে ৮ শতাংশে উন্নীত করতে হলে বেসরকারী বিনিয়োগ বাড়ানো দরকার। এজন্য ঋণের সুদহার একক সংখ্যায় (সিঙ্গেল ডিজিট) নামিয়ে আনতে ব্যাংকগুলোকে উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান জানান আসলাম আলম। তিনি বলেন, আমি জানি আমাদের অনেক সীমাবদ্ধতা আছে। এই সীমাবদ্ধতার মধ্যে সবাইকে একযোগে কাজ করে সুদ হার কমিয়ে আনতে হবে। জাতীয় স্বার্থে একাজ করতে হবে। কেন্দ্রীয় আয়োজনের পাশাপাশি বিভাগীয় শহর ও জেলা শহরেও এই মেলা আয়োজনের আহ্বান জানান ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব। তিনি বলেন, বীমা সংক্রান্ত জনসচেতনার অনেক ঘাটতি রয়েছে। সে বিষয়েও মেলা করা প্রয়োজন। ২০৪১ সালের মধ্যে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত জাতি গড়ার লক্ষ্যে আর্থিক বাজার ও সেবা বিভাগকে শক্তিশালী কাঠামোও দাঁড় করতে কাজ যাচ্ছে সরকার। ব্যাংকের পণ্য ও সেবার ক্রমাগত পরিবর্তন হচ্ছে। ইন্টারনেট ও কার্ড ব্যাংকিংয়ের তেমন উন্নতি হয়নি। এজন্য ব্যাংক ও গ্রাহকের মধ্যে যেসব সীমাবদ্ধতা আছে তা যৌথভাবেই অতিক্রম করতে হবে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মোঃ নজিবুর রহমান বলেন, ব্যাংকিং সেক্টরে দুষ্টচক্র কাজ করছে, অনিয়ম রয়েছে, রয়েছে গরমিল এ দুষ্ট চক্রকে ভাঙতে হবে। এ চক্র রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান বলেন, ব্যাংকিং মেলা সফল হলেই প্রমাণিত হবে দিনদিন মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত হচ্ছে। রাজস্ব আদায় করতে গিয়ে বিভিন্নখাতে যে দুষ্টচক্র কাজ করছে তাদের প্রতিহত করতে কিছুটা সক্ষম হয়েছি। ব্যাংকিং খাতেও দুষ্টচক্র কাজ করছে। এটা ভাঙতে হবে। ইতোমধ্যে এনবিআর-এফবিসিসিআই হাতে হাত মিলিয়ে দুষ্টচক্র দমনে সফল হয়েছে। একইভাবে ব্যাংকিংখাতেও করতে হবে। এজন্য এনবিআরের আহ্বানে ব্যাংক খাতকে এগিয়ে আসতে হবে। সভাপতির বক্তব্যে ডেপুটি গবর্নর সিতাংশু কুমার সুর চৌধুরী বলেন, আধুনিক ব্যাংকিং সেবার মূল উপাদান জনগণের সামনে তুলে ধরাই মেলার উদ্দেশ্য। এই সেবা পাওয়ার অধিকার সম্পর্কে মানুষকে জানাতে হবে। সরকারের উন্নয়ন কৌশর বাস্তবায়ন করতে আর্থিক খাত সংশ্লিষ্ট সকল প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে ব্রতী হয়েছি। আগামী দুই বছরের মধ্যে ব্যাংকিং খাত ডিজিটাইজড হবে বলেও জানান তিনি। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গবর্নর মোঃ আবুল কাশেম, নাজনীন সুলতানা, আবু হেনা মোহাঃ রাজী হাসান, ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাগণ। মেলায় বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক শিক্ষা, টাকা জাদুঘর, বাংলাদেশ সিকিউরিটি প্রিন্টিং প্রেস (টাকা তৈরির মেশিন), বিভিন্ন প্রকাশনা, স্মারক মুদ্রা ও নোট ক্রয়, জনসাধারণকে সেবা, সিআইপিসি এবং অভিযোগ কেন্দ্র খোলা হয়েছে। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত আর্থিক শিক্ষা কর্মসূচীর আওতায় স্কুলগামী শিক্ষার্থীদের নিয়ে দু’দিন, কর্মজীবী শিশুদের নিয়ে একদিন, উন্মুক্ত উপস্থিতদের নিয়ে একদিন ও ভালনারেবল এ্যাডাল্টদের নিয়ে আর্থিক শিক্ষা বিষয়ক কর্মসূচী অনুষ্ঠিত হবে। প্রতিদিন দুপুর দুইটা থেকে বেলা ৪টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে বির্তক প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে। প্রতিযোগিতার বিষয় থাকবে, ব্যাংকিং খাতে উচ্চ সুদের প্রধান কারণ, মুদ্রার বিনিময় হার বাজারভিত্তিক, পুঁজির অবাধ প্রবাহ, বৈদেশিক বিনিয়োগ, মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ, কর্মের সময়সীমা ও মুনাফা। বিকেল সাড়ে ৪টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত আর্থিক খাতের বিশেষজ্ঞদের অংশগ্রহণে আর্থিক উন্নয়ন, শিক্ষা, মূল্যস্ফীতি, প্রবৃদ্ধি, অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যাংকের ভূমিকা, গ্রহণযোগ্য সুদহার নির্ধারণ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে কৃষি, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে ঋণ প্রবাহের ভূমিকা, মুদ্রানীতির কার্যকারিতা ও প্রযুক্তি নির্ভর ব্যাংকিং সেবা বিষয়ে সেমিনার, গোলটেবিল ও ওয়ার্কশপ। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত বিনোদনের মাধ্যমে আর্থিক শিক্ষা কর্মসূচী পরিচালনা করতে পরিবেশন করা হবে ব্যাংকিং পণ্য ও সেবা সম্পর্কে লোকজ গান এবং নাটিকা।
×