ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

স্মরণসভা

সুজাতুল ইসলামের জীবন ও দর্শন অনুসরণ করলে হানাহানি থাকত না

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ১৫ নভেম্বর ২০১৫

সুজাতুল ইসলামের জীবন ও দর্শন অনুসরণ করলে হানাহানি থাকত না

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আইন কমিশনের চেয়ারম্যান ও সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক বলেছেন, সুজাতুল ইসলামের জীবন, দর্শন, আদর্শ, মূল্যবোধ এবং কবিতার মর্মবাণী উপলব্ধি করতে পারলে আজকের সমাজের হানাহানি ও সন্ত্রাস থাকত না। সৃষ্টিকর্তায় দৃঢ় বিশ্বাস ছিল তার দর্শনের মূল বিষয়। তিনি বিশ্বাস করতেন মানব মঙ্গলই হচ্ছে সব ধর্মের নির্যাস। রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে সুজাতুল ইসলামের বড় ছেলে বিশিষ্ট সাংবাদিক শাহাজাহান মিয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমেরিটাস অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান, প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান ও সংসদ সদস্য সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলি। সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক আরও বলেছেন, সুজাতুল ইসলামের দর্শন নিয়ে এগিয়ে গেলে আজ সমাজে হানাহানি হতো না। সারা বিশ্বে আজ অস্থিরতা বিরাজ করছে। আমাদের কৃতী সন্তানদের সম্মান দেখাতে হবে। তাদের অনুসরণ করতে হবে। তারা যা রেখে গেছেন, ভবিষ্যত প্রজন্মের মধ্যে তা প্রবাহিত করতে হবে। বাঙালী জাতি দুটো দেশকে স্বাধীন করেছিল। পাকিস্তান সৃষ্টি করেছিল ভোটের জোরে। আবার সৃষ্টি করেছে বাংলাদেশ। তিনি বলেন সুজাতুল ইসলাম সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। এটাই তো কৃতিত্ব। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন মেহেদী হাসান বাবলু। স্মারক গ্রন্থের লেখক সুজাতুল ইসলামের মেজ ছেলে ড. এম শাহ আলম গ্রন্থের বিষয়বস্তু তুলে ধরেন। এরপর গ্রন্থের ওপর আলোচনায় অংশ নেন নির্ধারিত আলোচক আবদুল গাফফার শিকদার, ড. মজিবুর রহমান, গোলাম মোহাম্মদ ও সুজাতুল ইসলামের জামাতা আবদুল হাকিম মিয়া, আইন কমিশনের মুখ্য গবেষণা কর্মকর্তা ফজলে আজিম। অনুষ্ঠানে এমেরিটাস অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান বলেন, মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত বাংলাদেশে যে ঔদার্য ও সহিষ্ণুতা আশা করা হয়েছিল তা এখন অনুপস্থিত। বাংলাদেশসহ বর্তমান বিশ্বের ধর্মের নামে যে সহিংসতা ও হানাহানি চলছে তা ধর্মীয় সঙ্কীর্ণতা এবং ধর্মের বিভ্রান্ত ব্যাখ্যার ওপর প্রতিষ্ঠিত। এ ধরনের অসহিষ্ণু পরিবেশে সুজাতুল ইসলামের দর্শন অনেক বেশি প্রয়োজন। তিনি হিংসা, বিদ্বেষ, ক্রোধের বিপরীতে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ ও উদার পরিবেশ গড়ে তোলার আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, সুজাতুল ইসলাম তিনজন মুক্তিযোদ্ধা সন্তান জাতিকে উপহার দিয়ে গেছেন। তার এই তিন সন্তানের চরিত্র, ন্যায়, নিষ্ঠা ও বাবা-মায়ের প্রতি অকৃত্রিম ভালবাসাই প্রমাণ করে তিনি কতটা ভাল মানুষ ছিলেন। তিনি বলেন, সন্ত্রাস, জঙ্গীবাদ ও মৌলবাদে আচ্ছন্ন আজকের সমাজ ব্যবস্থায় সুজাতুল ইসলামের মতো মানবতাবাদী মানুষের খুবই প্রয়োজন। ২০ বছর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। কিন্তু অন্যায় তাকে স্পর্শ করতে পারেনি। সংসদ সদস্য সাগুফতা ইয়াসমিন এ্যামিলি বলেন, মুন্সীগঞ্জের মাটি সোনার চেয়েও খাঁটি। এই মুন্সীগঞ্জে অনেক বিজ্ঞানী ও স্বনামধন্য ব্যক্তি জন্মগ্রহণ করেছে। সুজাত আলীও তাদের মধ্যে একজন। উনি ভাল মানুষ ছিলেন। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। মুন্সীগঞ্জে অনেক উন্নয়ন হয়েছে। এখন লঞ্চযোগে যাতায়াত হয় না। সুজাতুল ইসলাম ছিলেন সত্যিকার অর্থে একজন আকর্ষণীয় চরিত্রের অধিকারী। কর্তব্যবোধ, মানবতা ও ন্যায়-অন্যায়বোধ তাকে এই চরিত্রের অধিকারী করে তুলেছে। বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান তার বক্তৃতায় বলেন, তিনি বলেন এবার মানবাধিকার কমিশনের যে সমস্ত কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ করা হয়েছে সেখানে সুজাতুল ইসলামের জীবনদর্শন অনুসরণ করা হয়েছে। এখানে নিয়োগে একটি ফুটো পয়সাও লাগেনি। একজন ভাল মানুষ হতে হলে যে সমস্ত গুণাগুণ দরকার তা সুজাতুল ইসলামের মধ্যে ছিল।
×