ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ডিসেম্বরেই চালু হচ্ছে সিম্পল সাইকেল, পাওয়া যাবে ৩৭২ মেগাওয়াট বিদ্যুত

আশুগঞ্জ বিদ্যুত কেন্দ্রে অবশেষে গ্যাস সরবরাহের নির্দেশ

প্রকাশিত: ০৬:০৯, ৮ সেপ্টেম্বর ২০১৫

আশুগঞ্জ বিদ্যুত কেন্দ্রে অবশেষে গ্যাস সরবরাহের নির্দেশ

রশিদ মামুন ॥ অবশেষে আশুগঞ্জ ৪৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুত কেন্দ্রে গ্যাস সরবরাহ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। মৌখিক আলোচনায় গ্যাস সরবরাহ পাওয়ার আশ্বাসের ভিত্তিতে বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ করে বিপাকে পড়ে আশুগঞ্জ পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড। গ্যাস সরবরাহ নিয়ে চলে আসা জটিলতার মধ্যে বিদ্যুত বিভাগ এ নির্দেশনা দিল। এতে বিদ্যুত কেন্দ্রটির ঋণগ্রহণের শর্তপূরণ হওয়ায় নির্মাণ জটিলতা কেটে যাবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। যদিও জ্বালানি বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, গ্যাস সরবরাহে সঙ্কট হবে এ কথা বারবার বলার পরও বিদ্যুত বিভাগ কেন্দ্রগুলো নির্মাণ করছে। শেষ পর্যন্ত গ্যাস সরবরাহ কতটা করা সম্ভব হবে তা নিয়ে আশঙ্কা রয়েছে। বিদ্যুত এবং জ্বালানি বিভাগের সাম্প্রতিক এক বৈঠকে বিদ্যুত বিভাগ আশুগঞ্জ ৪৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুত কেন্দ্রে ৪৫০ পিএসআইজি (গ্যাস চাপের একক) চাপে গ্যাস সরবরাহের অনুরোধ করে। কিন্তু জ্বালানি বিভাগের তরফ থেকে জানানো হয় তারা ইতোপূর্বে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তার বাইরে গিয়ে গ্যাস সরবরাহ সম্ভব নয়। পরে অন্তত দুই বছরের জন্য এই চাপে গ্যাস সরবরাহের জন্য মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ পর্যায় থেকে নির্দেশ দেয়া হয়। আশুগঞ্জে তিনটি নতুন গ্যাসচালিত বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে। এর মধ্যে আশুগঞ্জ-দক্ষিণে ৪৫০ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুত কেন্দ্রটির ৮৮ ভাগ কাজ এর মধ্যে শেষ হয়েছে। গ্যাস সরবরাহ পেলে বিদ্যুত কেন্দ্রটি আগামী ডিসেম্বরেই সিম্পল সাইকেল থেকে ৩৭২ মেগাওয়াট বিদ্যুত সরবরাহ করতে পারবে। কিন্তু এখনও গ্যাস সরবরাহের জন্য কার্যকর কোন ব্যবস্থা না হওয়ায় তা অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। বিদ্যুত কেন্দ্রটির সম্ভাব্যতা জরিপ চালানোর সময় ২০১০ সালে ওই এলাকায় গ্যাস সরবরাহ করত তিতাস গ্যাস বিতরণ কোম্পানি। সে সময় তিতাসের সঙ্গে মৌখিক আলোচনায় তিতাস গ্যাস সরবরাহে সম্মতি জানায়। কিন্তু এত বড় একটি বিদ্যুত কেন্দ্র কিভাবে মৌখিক আলোচনার মাধ্যমে গ্যাস সরবরাহের নিশ্চয়তার ওপর ভিত্তি করে নির্মাণ শুরু হয়, তা নিয়ে পরে প্রশ্ন ওঠে। পরে তিতাস গ্যাস বিতরণ কোম্পানি ভেঙ্গে ওই এলাকা নিয়ে বাখরাবাদ গ্যাস বিতরণ কোম্পানি গঠন করা হয়। বাখরাবাদ গ্যাস বিতরণ কোম্পানির সঙ্গে অনেক দেন দরবার করে ১৫০ পিএসআইজি চাপে গ্যাস সরবরাহ করার বিষয়ে চুক্তি হয়। কিন্তু বিদ্যুত কেন্দ্রটি চালাতে হলে ৪৫০ পিএসআইজি চাপে গ্যাস সরবরাহ প্রয়োজন। আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি বলছে সরকারের সভরেন গ্যারান্টি নিয়ে বিদ্যুত কেন্দ্রটি নির্মাণ করা হচ্ছে। বিদ্যুত কেন্দ্রটির অর্থায়ন নিশ্চিত করতে গ্যাস সেলস এগ্রিমেন্ট স্বাক্ষর জরুরী ছিল। সঙ্গতকারণে দ্রুত ওই চুক্তি স্বাক্ষর করা হয়। এতে নির্মাণ চুক্তি এবং গ্যাস সেলস এগ্রিমেন্ট এই দুই চুক্তির মধ্যে তারতম্য তৈরি হয়। বাখরাবাদ গ্যাস বিতরণ কোম্পানি বিষয়টি মানতে রাজি না হলে পেট্রোবাংলার মাধ্যমে তাদের অনুরোধ করা হয়। কিন্তু বাখরাবাদ গ্যাস বিতরণ কোম্পানি বলছে গ্যাস সরবরাহ করতে হলে আশপাশের অন্য ব্যবহারকারীরা সঠিক চাপে গ্যাস পাবে না। তাই তাদের পক্ষে গ্যাসের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। পরে মন্ত্রণালয় বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করে। তবে আশুগঞ্জ বিদ্যুত কোম্পানি বলছে, আশুগঞ্জে বরাদ্দকৃত ২৩০ মিলিয়ন ঘনফুট (এমএমসিএফটি) বরাদ্দের মধ্যেই তারা বিদ্যুত কেন্দ্রটি পরিচালনা করবে। এছাড়া বেসরকারী কোম্পানি এগ্রিকোর বিদ্যুত কেন্দ্র বন্ধ হয়ে যাবে আগামী বছর মার্চে। তখন আরও ৫২ এমএমসিএফটি গ্যাস সাশ্রয় হবে। আশুগঞ্জ ভাল্ব স্টেশনে গ্যাস সঞ্চালন কোম্পানি জিটিসিএলের ভাল্ব স্টেশন-৩ এ গ্যাসের চাপ রয়েছে ৬০০ থেকে ৮০০ পিএসআইজি। দরপত্রের শর্ত অনুযায়ী ৪৫০ পিএসআইজিতে চলতে পারেÑ এমন যন্ত্রাংশ আমদানি করা হয়েছে। এখন ওই চাপে গ্যাস না পাওয়া গেলে বিদ্যুত কেন্দ্রটি চালানো যাবে না। বিদ্যুত কেন্দ্রটির প্রকল্প পরিচালক আব্দুস সামাদ এ প্রসঙ্গে জনকণ্ঠকে বলেন, সমস্যাটির সমাধান হয়েছে। এখন আশা করছি বিদ্যুত কেন্দ্রটি চালাতে আর কোন সমস্যা হবে না। তিনি জানান, ডিসেম্বরেই সিম্পল সাইকেল চালু করার লক্ষ্য নিয়ে আমরা কাজ করছি।
×