ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

রমনা বটমূলে বোমা হামলা

ফাঁসির দণ্ডাদেশ মাথায় নিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে চার জঙ্গী

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ২৩ জুলাই ২০১৫

ফাঁসির দণ্ডাদেশ মাথায় নিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে চার জঙ্গী

শংকর কুমার দে ॥ ফাঁসির দণ্ডাদেশ মাথায় নিয়ে ফেরার জীবন কাটাচ্ছে ৪ জঙ্গী। এই ৪ জঙ্গীকে ধরিয়ে দিতে পারলে প্রত্যেকে জঙ্গীর মাথার পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে ৫০ হাজার টাকা। পুরস্কার ঘোষণা করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গী সংগঠন জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) সদস্য তারা। রমনা বটমূলের বোমা হামলায় এই ৪ জঙ্গীকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছে আদালত। এ খবর দিয়েছে র‌্যাবের গোয়েন্দা শাখা। গোয়েন্দা সূত্র জানান, মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত পলাতক জঙ্গীদের মধ্যে আছে, বিএনপি নেতা ও সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুর ভাই মাওলানা তাজউদ্দিন আহমেদ, হাফেজ জাহাঙ্গীর আলম বদর, মাওলানা আবু বকর, মুফতি শফিকুর রহমান ও মুফতি আবদুল হাই। ২০১৪ সালের ২৩ জুন ৮ জনকে ফাঁসি ও ৫ জনের যাবজ্জীবন কারাদ- দেয় নিম্ন আদালত। রমনার বটমূলে বোমা হামলা মামলায় সাজাপ্রাপ্তদের মধ্যে ফাঁসির দ-প্রাপ্ত পলাতক ৪ আসামি গ্রেফতার হয়নি আজও। রায় ঘোষণার সময় এই ৪ জঙ্গী আদালতে ছিল অনুপস্থিত। ফাঁসির দ-প্রাপ্ত আসামির মধ্যে মাওলানা আবু বকরকে গত ৫ নবেম্বর ঢাকার কেরাণীগঞ্জ থেকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। বাকি ৪ আসামি অধরা। তাদেরকে ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। প্রত্যেক আসামিকে ধরিয়ে দেয়ার জন্য মাথার দাম ঘোষণা করা হয় ৫০ হাজার টাকা। আদালতের মৃত্যুদ-প্রাপ্ত পলাতক ৪ আসামিকে খুঁজছে র‌্যাব। পলাতকদের আত্মীয়-স্বজনদের ওপর মনিটর করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত দেশে তাদের সম্ভাব্য কোন অবস্থান শনাক্ত করা যায়নি। র‌্যাবের গোয়েন্দা শাখার একটি সূত্র জানায়, বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় থাকাকালে বিএনপির নেতা ও সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু তার ভাই মাওলানা তাজউদ্দিনকে বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে যেতে সাহায্য করেছেন। মাওলানা তাজউদ্দিন আহমেদ সম্ভবত এখন আত্মগোপন করে আছেন দক্ষিণ আফ্রিকায়। পলাতক অপর মৃত্যুদ-াদেশপ্রাপ্ত আসামি হাফেজ জাহাঙ্গীর আলম বদর আছেন আরব আমিরাতের দুবাইয়ে। দুবাইয়ের আজমানের এমারত গ্যাস ফ্যাক্টরির পাশে একটি ফ্লাটে বসবাস করছেন। মুফতি আব্দুল হাই আত্মগোপন করে আছেন দেশের ভেতরেই। র‌্যাব সূত্র জানতে পেরেছে গত বছরের ডিসেম্বর মাসে মুফতি শফিকুর রহমানকে সর্বশেষ দেখা গেছে পাকিস্তানের করাচীতে। ২০০১ সালের ১৪ এপ্রিল পহেলা বৈশাখে বর্ষবরণের অনুষ্ঠানে বোমা হামলার ঘটনার দিনই নীলক্ষেত বাবুপুরা পুলিশ ফাঁড়ির সার্জেন্ট অমল চন্দ্র বাদী হয়ে রমনা থানায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা দায়ের করেন। এ ঘটনায় বিস্ফোরক আইনে দায়েরকৃত আরেকটি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডির ইন্সপেক্টর আবু হেনা মোঃ ইউসুফকে সম্প্রতি ঢাকার সিআইডি থেকে চট্টগ্রাম সিআইডিতে বদলি করা হয়েছে। ২০০১ সালে রমনা বটমূলে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বোমা হামলায় ঘটনাস্থলে নিহত হন আবুল কালাম আজাদ, মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন, মোহাম্মদ এমরান হোসেন, অসীম চন্দ্র সরকার, মামুন হোসেন এবং তার চাচাতো ভাই রিয়াজুল ইসলাম ও বোন জান্নাতুল ফেরদৌস শিল্পী, ইসমাইল হোসেন স্বপন ও আনসার আলী। পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও একজন অজ্ঞাত ব্যক্তি মারা যান। ঢাকা মহানগর পিপি (পাবলিক প্রসিকিউটর) অফিস জানায়, বিস্ফোরক আইনে দায়ের করা মামলাটি ঢাকার ১ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন। এ মামলায় ৮৪ জন সাক্ষী রয়েছেন। এদের মধ্যে ৭ জন ইতোমধ্যে সাক্ষী দিয়েছেন। চলতি বছরের শেষের দিকে এ মামলার বিচারিক কার্য শেষ হতে পারে। র‌্যাবের একজন কর্মকর্তা বলেন, জেএমবির পলাতক ৪ জঙ্গীর মধ্যে যারা দেশের ভেতরে আছে তাদের গ্রেফতারের বিষয়ে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। যারা বিদেশে পালিয়ে বেড়াচ্ছে তাদেরকে কিভাবে ফিরিয়ে আনা যায় সেই বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। পলাতক জঙ্গীদের পরিবারসহ স্বজনদেরকে নজরদারীর আওতায় আনা হয়েছে।
×