ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

তামিম-সাকিবদের চিন্তায় আজও রাবাদা!

প্রকাশিত: ০৬:৩৩, ১২ জুলাই ২০১৫

তামিম-সাকিবদের চিন্তায় আজও রাবাদা!

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশে আসার আগেই পেসার কাগিসো রাবাদা হুংকার দিয়েছিলেন, ‘সুযোগ পেলেই কাজে লাগাব।’ সঙ্গে বলেছিলেন, ‘সত্যি বলতে উপমহাদেশের উইকেটে খেলার অভিজ্ঞতা নেই আমার। সুতরাং খেলা আসলেই চ্যালেঞ্জিং। আমার লক্ষ্য দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে টেস্ট খেলা। তবে স্টেইন, ফিল্যান্ডার, পারনেলদের ভিড়ে তা সহজ নয়। এজন্য যে ফরমেটেই সুযোগ পাব, সেখানেই নিজেকে প্রমাণ করতে হবে। কোচ, অধিনায়ক ও সিনিয়রদের কাছ থেকে জেনেছি, আরব আমিরাত ও বাংলাদেশের কান্ডিশনের মধ্যে খুব একটা পার্থক্য নেই। আমিরাতে এরআগে দারুণ সময় কাটিয়েছি। আমরা শিরোপা জয়ের আনন্দ করেছিলাম, যা আমাকে বাংলাদেশ সিরিজে ভাল করতে অনুপ্রাণিত করবে। তবে এটা ঠিক, অনুর্ধ-১৯ আর জাতীয় পর্যায়ে খেলাটা এক নয়। আমাকে তাই সেরাটাই দিতে হবে।’ ক্যারিয়ারের প্রথম ওয়ানডেতেই চ্যালেঞ্জ জিতে গেলেন, আবার সেরাটাও দিলেন। একাই ৬ উইকেট তুলে নিয়ে বাংলাদেশের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতেই ম্যাচ সেরা হয়েছেন এ পেসার। হ্যাটট্রিকও করেছেন রাবাদা। আবার প্রথম পেসার হিসেবে অভিষেকেই হ্যাটট্রিক করার বিশ্বরেকর্ডও আছে। রয়েছে অভিষেকেই সবচেয়ে কম রান দিয়ে ৬ উইকেট নিয়ে বিশ্বরেকর্ড গড়ারও কৃতিত্ব। আজ বাংলাদেশের বিপক্ষে দ্বিতীয় ওয়ানডেতেও কী এ পেসারের ঝড় দেখার মিলবে? তামিম, সাকিব, মুশফিকদের সামনে আজও রাবাদার গতির ঝলক মিলবে? বাংলাদেশে সিরিজ খেলতে আসার আগে জাতীয় দলের জার্সি গায়ে দিয়ে ৩টি মাত্র টি২০ ম্যাচ খেলেছিলেন। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দুটি ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে একটি ম্যাচ খেলেছেন। উইকেট নিয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ১টি। বিসিবি একাদশের বিপক্ষে যে টি২০ প্রস্তুতি ম্যাচ খেলে দক্ষিণ আফ্রিকা, সেই ম্যাচে রাবাদা খেলেন; ১টি উইকেটও নেন। প্রথম টি২০তে সুযোগও মিলে। ২টি উইকেট নিয়ে নৈপুণ্যও দেখান। কিন্তু দ্বিতীয় টি২০তে আর খেলার সুযোগ মিলেনি। আবার যখন ওয়ানডে সিরিজ শুরু হয়, রাবাদাকে নামিয়ে দেয় দক্ষিণ আফ্রিকা। তাতে বিপজ্জনক বোলার হয়েই ধরা দেন রাবাদা। ১৭ রানের সময় টানা তিন বলে তামিম ইকবাল, লিটন কুমার দাস ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদকে আউট করে হ্যাটট্রিক করেন রাবাদা। অভিষেকেই তাইজুল ইসলামের পর দ্বিতীয় বোলার হিসেবে হ্যাটট্রিক করার রেকর্ড গড়েন। তবে পেসার হিসেবে অভিষেকেই প্রথম বোলার হিসেবে হ্যাটট্রিক করেন রাবাদা। এরপর সৌম্য সরকার, মাশরাফি বিন মর্তুজা, জুবায়ের হোসেন লিখনের উইকেটও শিকার করেন। ৬ উইকেট নেন। অভিষেকেই ফিদেল এ্যাডওয়ার্ডস যে ২২ রান দিয়ে ৬ উইকেট নিয়েছিলেন, রাবাদা ১৬ রান দিয়ে সমান উইকেট নিয়ে সবচেয়ে উজ্জ্বল বোলিং করেন। যদি ম্যাচ ৪০ ওভারের না হত, আর রাবাদা ৮ ওভারের বেশি করার সুযোগ পেতেন; কে জানে আরেকটি উইকেটও পেতে পারতেন। তাহলে রানের দিক দিয়ে নয়, উইকেটের দিক দিয়েই অভিষেকে ৭ উইকেট নিয়ে সবার উপরে থাকতেন পারতেন রাবাদা। তা না হলেও আফসোস নেই রাবাদার। যা পেয়েছেন তাতেই ভীষণ খুশি। প্রথম ওয়ানডের ম্যাচ সেরা এ পেসার বলেছেন, ‘সত্যিই অসাধারণ লাগছে। দলের জন্য কিছু করার চেষ্টা করেছি। চেষ্টা করেছি দলকে ভাল অবস্থানে রাখতে। শেষপর্যন্ত স্বাচ্ছন্দ্যেই জয় মিলেছে। হ্যাটট্রিক করার বলটি কী করব তা জানতাম না। কখনো মনে হয়েছে বাউন্ডার দেই। কখনো মনে হয়েছে ইয়র্কার দেই। দেখলাম হ্যাটট্রিক করে ফেললাম। আসলে সাধারণভাবেই সব ভাবতে হয়। লাইন ও লেন্থ বজায় রেখে ব্যাটসম্যানকে প্রতিহত করার চেষ্টা করি। আমরা বিশ্বের সেরা দলগুলোর একটা। এ দলে কোনভাবেই দুর্বল হয়ে থাকা সম্ভব নয়।’ বাংলাদেশের ইনিংসের শুরুতেই ওয়ানডে ইতিহাসের ৩৪তম বোলার হিসেবে ৩৯তম এ হ্যাটট্রিকের ঘটনা ঘটান রাবাদা। ইনিংসের চতুর্থ ওভারের চতুর্থ, পঞ্চম ও ষষ্ঠ বলে যথাক্রমে তামিম ইকবাল, লিটন কুমার দাস ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদকে আউট করে বিশ্বের প্রথম পেসার হিসেবে অভিষেক ওয়ানডেতে হ্যাটট্রিকের কৃতিত্ব দেখালেন। এরআগে বাংলাদেশের বাঁ-হাতি স্পিনার তাইজুল ইসলাম গত বছর ১ ডিসেম্বর জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে ঢাকায় অভিষেক ওয়ানডে খেলতে নেমেই হ্যাটট্রিক করেছিলেন। সেটাই ছিল ওয়ানডে ইতিহাসের অভিষেকেই প্রথম হ্যাটট্রিকের ঘটনা। আট মাসের মধ্যেই তাঁর বিশ্বরেকর্ডে ভাগ বসালেন রাবাদা। তবে কম রান দিয়ে ৬ উইকেট নিয়ে ইতিহাসই গড়েছেন রাবাদা। তিনি অবশ্য এমনটি কল্পনাতেও ভাবেননি। নিজেই বলেছেন, ‘সত্যি বলতে আমি ভাবতেও পারিনি। এমন কিছু স্বপ্ন দেখিনি। ম্যাচের আগে গা-গরমের সময় মনে হচ্ছিলো বেশ ছন্দ পাচ্ছি। মাঠে নামতে তাই মুখিয়ে ছিলাম। বোলিং করলাম, একের পর এক উইকেট আসতে থাকল। পরিকল্পনা করে হয়নি। এমন শুরুর কল্পনাও করিনি। আমি চেয়েছিলাম স্রেফ ভাল লাইন-লেংথে বল করে যেতে। সঙ্গে মাঝেমধ্যে দু-একটি বাউন্সার ও ইয়র্কার মিশিে দেয়া। এই তো!’ তবে তামিমকে যে বলে বোল্ড করলেন।
×