ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সহিংসতায় আহত অর্থনীতি

প্রকাশিত: ০৩:৩৫, ১৬ এপ্রিল ২০১৫

সহিংসতায় আহত অর্থনীতি

সহিংসতা বা সন্ত্রাসে মানুষের আহত ও নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটেই চলেছে। বিএনপি নেত্রী সুদীর্ঘকাল নিজ কার্যালয়ে কাটিয়ে আদালত থেকে জামিন নিয়ে ঘরে ফিরেছেন এক সপ্তাহের বেশি হয়ে গেল। দেশবাসী ভেবেছিল তাঁর নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের নব্য আবিষ্কার পেট্রোলবোমা বুঝি এবার বন্ধ হলো। সে আশায় গুড়েবালি। বাংলা নববর্ষের প্রাক্কালে গভীর রাতে কুমিল্লার দাউদকান্দিতে ঘুমন্ত ট্রাকচালককে দগ্ধ করা হয়েছে পেট্রোলবোমা ছুড়ে। লক্ষণীয় হলো, সহিংসতায় সম্পদ এবং মানবসম্পদের ক্ষতির কথাই বেশি উচ্চারিত হয়ে থাকে। এতে যে একটি দেশের অর্থনীতিও ক্ষতিগ্রস্ত হয় সে কথা জোরেশোরে সামনে খুব একটা আসে না। অথচ একটি রাষ্ট্রের চালিকাশক্তিই হলো তার অর্থনীতি। অর্থনীতি জখম হলে সঠিক শুশ্রুষা দিয়ে তাকে সারিয়ে তুলতে যথেষ্ট সময় লেগে যায়। চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাস অর্থনীতির চাকা বেশ সচলই ছিল। গত রবিবার ঢাকায় বিশ্বব্যাংক প্রকাশিত ‘বাংলাদেশের হালনাগাদ উন্নয়ন’ (বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট) শীর্ষক এক প্রতিবেদনে বলা হয়, রাজনৈতিক অস্থিরতায় বাংলাদেশে আর্থিক ক্ষতি হয়েছে প্রায় ১৭ হাজার কোটি টাকা। এ ক্ষতির প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়বে জিডিপিতে। চলতি ২০১৫ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমে দাঁড়াবে ৫ দশমিক ৬ শতাংশে। লাগাতার জ্বালাও পোড়াও নামক অপরাজনীতির শিকার না হলে অর্থাৎ স্বাভাবিক অবস্থা বিরাজ করলে এই প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে ৬ দশমিক ৬ শতাংশ হতে পারত। সমাজের সুস্থিতি বিনষ্ট করার জন্য যা যা দরকার তার সব উপাদানই বিদ্যমান সন্ত্রাসের শেকড় ও ডালপালায়। সন্ত্রাস এক বিকট বিপুল রাক্ষস, তার রয়েছে হাজারো বাহু, শত শত মস্তক। সন্ত্রাসের সূচনামুখ তাহলে কোথায়? নিঃসন্দেহে তা অবিবেচক স্বার্থান্ধ সত্তায় এবং অপরাজনীতিতে। সন্ত্রাস অনেকটা বিষাক্ত সাপের মতোই। যে সাপ সমাজদেহে দংশন করলে তার বিষক্রিয়া ছড়িয়ে পড়ে সর্বশরীরে। সন্ত্রাসের পথ রচনার নানা কৌশল আছে। হরতাল ও অবরোধ- এ দুটি মহাশক্তিমান পথ। রাজনৈতিক কর্মসূচী হিসেবে আখ্যা দেয়া হলেও তা আসলে আহ্বান করে হরেক রকম সন্ত্রাসকে। আগামী দিনগুলোতে আহত এই অর্থনীতিকে সুস্থতার ধারায় ফিরিয়ে এনে চাঙ্গা করে তুলতে বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে যেসব পরামর্শ প্রদান করা হয়েছে তার প্রত্যেকটি যৌক্তিক বলে আমরা মনে করি। এটা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই যে, আছে অনেক বাধা আছে বিপুল বিঘœতা, তবু এগিয়ে চলেছে বাংলাদেশ। আছে শত্রুতা, আছে উল্টো পথের গাড়ি চালক- কিন্তু সঠিক পথে অগ্রসরমান আমাদের প্রাণপ্রিয় মাতৃভূমি। ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ কিংবা ‘বাংলাদেশ একটি উন্নয়নের পরীক্ষাগার’- এ জাতীয় শ্লেষ ও বিদ্রুপ গায়ে না মেখে মানুষ আত্মশক্তি অর্জনের পথে এগিয়ে বিশ্ব মানচিত্রে মর্যাদার আসনে স্বদেশকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। সম্প্রতি প্রাপ্ত আন্তর্জাতিক পরিসংখ্যানে বাংলাদেশের ক্রমোন্নতি বিষয়টির স্বীকৃতি মিলেছে। মানবসম্পদ উন্নয়নে ১৮ দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান শীর্ষে। মানব উন্নয়নের ক্ষেত্রে স্বল্পোন্নত দেশের কাছে বাংলাদেশ এখন অনুকরণীয়। শুধু অর্থনীতি ও মানব উন্নয়ন নয়; বাংলাদেশ এশিয়ার কোন কোন দেশের তুলনায় এগিয়ে রয়েছে আইনের শাসন, জবাবদিহিতা ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ক্ষেত্রেও। ভবিষ্যতে দেশের উন্নয়নের স্বার্থে সব ধরনের সহিংসতাকে প্রতিরোধ করতে হবে যে কোন মূল্যে। পাশাপাশি নারীর ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। চলমান সময়ে বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা। তাই স্থিতিশীলতা বিনষ্টকারী অপশক্তিকে রুখতে হবে জাতীয় স্বার্থেই।
×