ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

শিল্পকলায় সুচিত্রা স্মরণ সভা ও চলচ্চিত্র উৎসব

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ১৮ জানুয়ারি ২০১৫

শিল্পকলায় সুচিত্রা স্মরণ সভা ও চলচ্চিত্র উৎসব

স্টাফ রিপোর্টার ॥ পাবনার মেয়ে রমা দাশগুপ্তা। সাতচল্লিশের দেশভাগের প্রেক্ষাপটে পরিবারের সঙ্গে পাড়ি জমান ভারতে। সেখানেই বিয়ে হয় দিবানাথ সেনের সঙ্গে। বিয়ের পর স্বামীর উপাধি গ্রহণ করে হয়ে যান রমা সেন। পরবর্তীতে সেলুলয়েডের পর্দায় বনে যান সুচিত্রা সেন। বাংলা চলচ্চিত্রের আঙিনায় নতুন দিগন্তের রেখা টেনে পরিণত হন মহানায়িকায়। গত বছরের ১৭ জুন লাখো কোটি অনুরাগীকে চোখের জলে ভাসিয়ে ঘটে যায় মহানায়িকার মহাপ্রয়াণ। শনিবার ছিল কিংবদন্তি এই চিত্রনায়িকার প্রথম প্রয়াণবার্ষিকী। এ উপলক্ষে স্মরণসভার আয়োজন করে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি। সেই সঙ্গে একই দিনে শুরু হয় তিন দিনের সুচিত্রা সেন চলচ্চিত্র উৎসব। শীতের সন্ধ্যায় একাডেমির সঙ্গীত ও নৃত্যকলা মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয় সুচিত্রা সেনকে নিবেদিত স্মরণসভা। এতে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট চলচ্চিত্র নির্মাতা মসিহউদ্দিন শাকের ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মোঃ মোজাম্মেল হক খান। একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকীর সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য রাখেন একাডেমির নাট্যকলা ও চলচ্চিত্র বিভাগের পরিচালক সারা আরা মাহমুদ। এর আগে বিকেলে প্রদর্শিত হয় উত্তম-সুচিত্রা অভিনীত চলচ্চিত্র ‘শিল্পী’ এবং স্মরণসভা শেষে দেখানো হয় চলচ্চিত্র ‘হারানো সুর’। আজ রবিবার বিকেল ৪টায় ‘সাড়ে চুয়াত্তর’ সন্ধ্যা ৬টায় ‘ওরা থাকে ওধারে’ প্রদর্শিত হবে। সমাপনী দিন সোমবার বিকেল ৪টায় ‘সাগরিকা’ ও সন্ধ্যা ৬টায় ‘সাত পাকে বাঁধা’ দেখানো হবে। শিশুসাহিত্যিক এখ্লাসউদ্দিন আহ্মদ স্মরণ ॥ সদ্য প্রয়াত বিশিষ্ট শিশুসাহিত্যিক ও বাংলা একাডেমির ফেলো এখ্লাসউদ্দিন আহ্মদকে স্মরণ করা হলো শনিবার। বিকেলে বাংলা একাডেমির আয়োজনে একাডেমির কবি শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষে স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে স্মৃতিচারণ ও এখ্লাসউদ্দিন আহ্মদের সাহিত্যকর্মের মূল্যায়নমূলক আলোচনায় অংশ নেন সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক, লোকগবেষক শামসুজ্জামান খান, চিত্রশিল্পী রফিকুন নবী, কবি আসাদ চৌধুরী, সুলতানা কামাল, হায়াৎ মামুদ, মাহবুব তালুকদার, আলী ইমাম, আখতার হুসেন, হাবীবুল্লাহ সিরাজী, সৈয়দ মোহাম্মদ শাহেদ, শুভ রহমান, আবু নাহিদ, লুৎফর রহমান রিটন প্রমুখ। এ ছাড়া উপস্থিত ছিলেন কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা, রামেন্দু মজুমদার, আতাউর রহমান, কাইজার চৌধুরী, কবি মুহাম্মদ সামাদ, রফিকুল হক দাদুভাই, আনোয়ারা সৈয়দ হক, তারিক সুজাত, শিল্পী আবুল বারক আলভী, মাহমুদউল্লাহ, সুজন বড়ুয়া, খালেক বিন জয়েনউদ্দীন, রহীম শাহ প্রমুখ। সভার শুরুতে মুক্তিযুদ্ধের প্রেরণাদায়ী সঙ্গীতব্যক্তিত্ব গোবিন্দ হালদার ও এখ্লাসউদ্দিন আহ্মদ স্মরণে পালন করা হয় এক মিনিটের নীরবতা। সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির সভাপতি এমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। স্মরণসভায় বক্তারা বলেন, এখ্লাসউদ্দিন আহ্মদ শিশুসাহিত্যিক হিসেবে ছিলেন অনন্যসাধারণ। তাঁর এক যে ছিল নেংটি, তুনুর দুপুর, তুনুর হারানো পুুতুলগুলো, বৈঠকি ছড়া, প্রতিরোধের ছড়া ইত্যাদি বাংলা শিশুসাহিত্যের স্বর্ণসম্পদ। তাঁর সৃষ্ট শিশুসাহিত্যিক চরিত্র ‘তুনু’ কয়েক প্রজন্মের শিশু-কিশোরদের প্রিয় চরিত্র হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। সাহিত্য-সংগঠক হিসেবেও তিনি ছিলেন অসাধারণ। শিশুসাহিত্যের পত্রিকা টাপুর টুপুর সম্পাদনা এবং চট্টগ্রামের বইঘর প্রকাশনা সংস্থার মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রকাশনা জগতে আধুনিকতা ও রুচিস্নিগ্ধতার স্বাক্ষর রেখেছেন তিনি। শিশুদের তিনি প্রকৃতি ও মানুষকে ভালবাসতে শিখিয়েছেন বাংলাদেশের শিশু-কিশোর সাহিত্যকে যুক্ত করেছেন প্রগতিশীল ধারার সঙ্গে। সংবাদপত্রের সঙ্গে যুক্ত থাকাকালে গতানুগতিক বৃত্তের বাইরে সংবাদপত্রের মানবিক দিককে করেছেন সমৃদ্ধ। তিনি তাঁর ব্যক্তিত্বের লাবণ্যে মুগ্ধতা ছড়িয়েছেন সভার মাঝে। ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান ও একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে তাঁর অবদান অবিস্মরণীয়। শামসুর রাহমানসহ আমাদের সেরা সাহিত্যিকদের তিনি শিশুদের জন্য লিখতে অনুপ্রাণিত করেছেন। কথাসাহিত্যিক আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের খোয়াবনামা উপন্যাস সংবাদপত্রের পাতায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশেও তাঁর অবদান ভুলবার নয়। বক্তারা আরও বলেন, তাঁর সাহিত্যকর্ম ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক ভূমিকার মূল্যায়নে একটি স্মারক প্রকাশনা এবং এখ্লাসউদ্দিন আহ্মদ ও প্রয়াত গুণী শিশুসাহিত্যিকদের স্মৃতিতে একটি জাতীয় স্মরণ কমিটি গঠন করা প্রয়োজন। খেলাঘরের জাতীয় সম্মেলন সমাপ্ত ॥ শেষ হলো দুই দিনব্যাপী খেলাঘর আসরের জাতীয় সম্মেলন-২০১৫। শনিবার সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত। সম্মেলনে শিল্পী মুর্তজা বশীরকে শহীদ শহীদুল্লাহ কায়সার স্মৃতিপদক করা হয়। এ ছাড়াও সর্ব ভারতীয় শিশু-কিশোর সংগঠন সব পেয়েছির আসরের পাঁচজন সংগঠককে সংবর্ধনা প্রদান করা হয়। এবারের সম্মেলনে অধ্যাপিকা পান্না কায়সার সভাপতিম-লীর চেয়ারম্যান এবং আবুল ফারাহ্ পলাশকে সাধারণ সম্পাদক করে ৮১ সদস্য বিশিষ্ট কার্যকরী কমিটি গঠন করা হয়। সাতটি তারার দীপ এ্যালবামের প্রকাশনা ॥ পশ্চিম বাংলার সাত তারকা কণ্ঠশিল্পী। তাঁরা হলেন বাবুল সুপ্রিয়, শ্রীকান্ত আচার্য, শুভমিতা বন্দ্যোপাধ্যায়, রূপঙ্কর বাগচী, শ্রীরাধা বন্দ্যোপাধ্যায়, মনোময় ভট্টাচার্য ও অন্বেষা দত্ত গুপ্তা। তাঁদের গাওয়া অডিও এ্যালবাম ‘সাতটি তারার দীপ’-এর প্রকাশনা অনুষ্ঠিত হলো শনিবার। বিকেলে ধানম-ির ছায়ানট মিলনায়তনে লেজার ভিশন প্রযোজিত এ্যালবামটির প্রকাশনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধূরী। ভাওয়াইয়া সঙ্গীতবিষয়ক গোলটেবিল বৈঠক ॥ বাংলা লোকসঙ্গীতের অন্যতম প্রধান ধারা ভাওয়াইয়া গান। জনপ্রিয় এই ধারাটির বিকাশ অব্যাহত থাকলেও এর যথাযথ সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও প্রসারের ক্ষেত্রে গুরুত্বের অভাব ও সঠিক পদ্ধতি প্রয়োগের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। আলোচ্য বিষয়টি বিবেচনায় রেখে শিল্পকলা একাডেমি বহুমুখী উদ্যোগ নিয়েছে। এর প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে ঢাকায় কেন্দ্রীয় পর্যায়ে প্রশিক্ষণ বিভাগের ব্যবস্থাপনায় পঞ্চগীতিকবির ভাওয়াইয়া গানের তিন মাসব্যাপী প্রশিক্ষণ কর্মশালা চলছে শতাধিক প্রশিক্ষণার্থী নিয়ে। সেই ধারাবাহিকতায় শনিবার একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার সেমিনার কক্ষে ‘ভাওয়াইয়া গানের সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও প্রসার কর্মসূচী’ বিষয়ক গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকীর সভাপতিত্বে বৈঠকে বক্তব্য রাখেন মুস্তাফা জামান আব্বাসী, ইন্দ্র মোহন রাজবংশী, নাদিরা বেগম, অধ্যাপক ড. এ কে এম শাহনেওয়াজ, দিজেন্দ্রনাথ বর্মণ, একাডেমির প্রশিক্ষণ বিভাগের পরিচালক শাওকাত ফারুক প্রমুখ। জাতীয় পিঠা উৎসবের সমাপ্তি ॥ বাংলাদেশ শিশু একাডেমি প্রাঙ্গণে জাতীয় পিঠা উৎসব উদযাপন পরিষদ আয়োজিত চার দিনব্যাপী জাতীয় পিঠা উৎসবের শেষ ছিল শনিবার। এদিনের বৈকালিক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সৈয়দ হাসান ইমাম ও কবি নাসির আহমেদ। চার দিনের আয়োজনের সমাপনী দিনে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের একক সঙ্গীত পরিবেশন করেন শিশির অধিকারী, জুরান ম-ল, অলক দাস গুপ্ত, নুসরাত নওরীন, শহীদুল ইসলাম সৌরভ, ডাক্তার শাওলি, খায়রুল আলম ও রাফসান বাউল। দলীয় সঙ্গীত পরিবেশন করে দৃষ্টি ও আনন্দন। একক আবৃত্তি পরিবেশন করেন মিজানুর রহমান সজল, নাসরিন আক্তার শিমু, জি এম মোর্শেদ, আনোয়ার পারভেজ, জালাল উদ্দিন হীরা, তামান্না রহমান, মৌসুমী হাসান, মাহমুদা আক্তার, আফরোজা কনা, শামীমা সুলতানা ও লাবণ্য। দলীয় আবৃত্তিতে অংশ নেয় চারুকণ্ঠ আবৃত্তি সংসদ, স্বরব্যঞ্জন ও ত্রিলোক। দলীয় নৃত্য উপস্থাপন করে ধৃতি নর্তনালয়, নৃত্যম, জসীম উদ্দীন ললিতকলা ও কিচিরমিচির। উপস্থাপনায় ছিলেন সঙ্গীতা চৌধুরী, মামুনুর রশিদ, রূপা, সুরাইয়া আক্তার রিমা ও তামান্না। উৎসবে দেশের নানা অঞ্চল থেকে আগত প্রায় ১৭টি স্টল স্থান পায়। এসব স্টলে নানা রকম পিঠাপুলি প্রদর্শন ছাড়াও উৎসবে আগত দর্শনার্থীর কাছে বিক্রি করা হয়। উৎসবের শেষ দিনে আয়োজক কমিটির স্টল থেকে মেলায় আগত সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের মাঝে পিঠা বিতরণ করা হয়। এ ছাড়া মেলায় আগত স্টলগুলোর মধ্যে শ্রেষ্ঠ পিঠা স্টল ও শ্রেষ্ঠ পিঠা শিল্পীকে পুরস্কৃত করা হয়। জাতীয় সঙ্গীতের মাধ্যমে চার দিনব্যাপী ২১তম জাতীয় পিঠা উৎসবের সমাপ্তি হয়।
×