ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আগামী বছর মেট্রোরেল প্রকল্পের দরপত্র আহ্বান

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ৬ নভেম্বর ২০১৪

আগামী বছর মেট্রোরেল প্রকল্পের দরপত্র আহ্বান

জানালেন সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের স্টাফ রিপোর্টার ॥ নানা অনিশ্চয়তার মুখে আবারও মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়নের আলোর দেখা মিলছে। আগামী বছর মেট্রোরেল প্রকল্পের আটটি দরপত্র আহ্বান করা হবে বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। প্রতি চার মিনিট পরপর এক হাজার ৮০০ যাত্রী নিয়ে ছুটবে এই রেল। ঘণ্টায় প্রায় ৬০ হাজার যাত্রী পরিবহন করা সম্ভব হবে। সর্বোচ্চ ১০০ কিলোমিটার গতিতে এই ট্রেন চলবে। ইতোমধ্যে প্রকল্পের জন্য ১৬ স্টেশনের নকশা চূড়ান্ত হয়েছে। প্রকল্প ব্যয় প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা। বাংলাদেশ সরকার ও জাইকার আর্থিক সহযোগিতায় মেট্রোরেল হওয়ার কথা। ওবায়দুল কাদের জানান, ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেলের বাণিজ্যিক পরিচালনা শুরু হবে। যানজট নিরসনে সরকার আরও তিনটি মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে বলে জানান মন্ত্রী। রাজধানীর যানজট পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে স্ট্রাটেজিক ট্রান্সপোর্ট প্লান তৈরি করা হয়। এরমধ্যে তিনটি মেট্রোরেল ও তিনটি বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) বাস্তবায়নের সুপারিশ করা হয়েছিল ২০০৫ সালে। এরপর আর্থিক সঙ্গতি না হওয়াসহ নানাবিধ সংকটের কারণে প্রকল্পগুলো আর আলোর মুখ দেখেনি। বুধবার রাজধানীর নিউ ইস্কাটনের প্রবাসী কল্যাণ ভবনে মেট্রোরেল প্রকল্প (এমআরটি লাইন-৬) কার্যালয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিদের সঙ্গে বৈঠক করেন ওবায়দুল কাদের। বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, বাস্তবায়নাধীন মেট্রোরেল লাইন-৬ এর পাশাপাশি পূর্বাচল থেকে নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত ৩৫ কিলোমিটার দীর্ঘ মেট্রোরেল লাইন-৭ এর প্রক্রিয়াও শুরু হবে। বাস্তবায়নের সুবিধার জন্য পুরো প্রকল্পকে আটটি ‘কনট্রাক্ট প্যাকেজে’ (সিপি) বিভক্ত করে আগামী বছর দরপত্র আহ্বান করা হবে। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এর মধ্যে সিপি-১ ও সিপি-২ এর আওতায় ডিপো উন্নয়ন ও নির্মাণ এবং সিপি-৩, সিপি-৪, সিপি-৫ ও সিপি-৬ এর মাধ্যমে ২০ দশমিক ১ কিলোমিটার লাইন ও ১৬টি স্টেশন নির্মাণের কাজ হবে। সিপি-৭ ও সিপি-৮ এ হবে ইলেকট্রো মেকানিক্যাল সিস্টেমের কাজ এবং রোলিং স্টক সংক্রান্ত কাজ। আগামী বছর জানুয়ারি থেকে পর্যায়ক্রমে সব দরপত্র আহ্বান করা হবে এবং ২০১৬ সালের মধ্যে চুক্তি সই হবে। কয়েকটি বিদেশী পত্রিকায় এসেছে, ‘জন ম্যাকআসলান’ নামে একটি ব্রিটিশ কোম্পানি মেট্রোরেল স্টেশনের নকশা করার কাজ পেয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে কাদের বলেন, তারা একটি প্রস্তাব নিয়ে এসেছিল। তবে তাদের সঙ্গে কোন ধরনের চুক্তি হয়নি। মন্ত্রী জানান, মেট্রোরেলের ডিপো নির্মাণের জন্য ২২ হেক্টর জমির মধ্যে ইতোমধ্যে ৫ দশমিক ৬৯ হেক্টর জমি রাজউক বুঝিয়ে দিয়েছে। বাকি জমি বুঝে নেয়ার কার্যক্রম চলছে। বাস্তবায়নাধীন মেট্রোরেল লাইন-৬ এ ট্রেনের সংখ্যা হবে ২৪ সেট। প্রতি সেটে ৬টি করে কার থাকবে। মেট্রোরেলের সর্বোচ্চ গতি হবে প্রতি ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার। যাত্রী পরিবহন ক্ষমতা হবে প্রতিঘণ্টায় উভয় দিক থেকে মোট ৬০ হাজার। আগামী ২০১৯ সালের মধ্যে উত্তরা তৃতীয় প্রকল্প থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত বাণিজ্যিকভাবে মেট্রোরেল চলাচল শুরু হবে বলে আশা প্রকাশ করেন সড়ক পরিবহন মন্ত্রী। মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকার মধ্যে ১৬ হাজার ৫৯৫ কোটি টাকা দিচ্ছে জাইকা। বাকি ৫ হাজার ৩৯০ কোটি টাকার যোগান দেবে সরকার। ২০১২ সালে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) এ প্রকল্প অনুমোদন পায়। মেট্রোরেলের ১৬টি স্টেশন হবে উত্তরা (উত্তর), উত্তরা (সেন্টার), উত্তরা (দক্ষিণ), পল্লবী, মিরপুর ১১, মিরপুর-১০ নম্বর, কাজীপাড়া, তালতলা, আগারগাঁও, বিজয় সরণি, ফার্মগেট, সোনারগাঁও, জাতীয় জাদুঘর, দোয়েল চত্বর, জাতীয় স্টেডিয়াম এবং বাংলাদেশ ব্যাংক এলাকায়। মন্ত্রী জানান, মেট্রোরেল লাইন-৭ করারও প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। পূর্বাচল থেকে বাড্ডা-কমলাপুর হয়ে নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত মোট ৩৫ কিলোমিটার পথ এ লাইনের আওতায় থাকবে। এর বাইরে মেট্রোরেলের আরও একটি লাইন করার পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে। তবে এ বিষয়ে এখনই বিস্তারিত কিছু জানানো সম্ভব নয় বলেন, মন্ত্রী। মেট্রোরেলের প্রকল্প পরিচালক মোঃ মোফাজ্জেল হোসেন, ডিটিসিএ নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ কায়কোবাদ হোসেন সহ জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
×