
ছবি: সংগৃহীত
কক্সবাজারের হিমছড়িতে উচ্ছেদ অভিযান ঘিরে সম্প্রতি এক চাঞ্চল্যকর ঘটনার জন্ম হয়েছে। উচ্ছেদ অভিযান চলাকালে রামুর সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. সাজ্জাদ জাহিদ রাতুল ও বন বিভাগের এক কর্মকর্তার মধ্যে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে শুরু হয় ব্যাপক আলোচনা ও সমালোচনা।
ভিডিওতে দেখা যায়, "আপনি কে আমাকে কথা বলা শিখাচ্ছেন?"
> "আপনি আমার স্যার?"
> "আমাকে কিভাবে কথা বলতে হবে ?"
এইসব বাক্য বিনিময় উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনার মাত্রা স্পষ্ট করে তোলে।
বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারে ভ্রমণে আসা পর্যটকদের জন্য হিমছড়ি ঝরনা অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান। সেই হিমছড়ি বাজার সংলগ্ন এলাকায় কফিশপসহ কিছু বাণিজ্যিক স্থাপনা গড়ে উঠছিল বলে জানায় কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগ।
তারা জানান, ১ নম্বর ঘাস খতিয়ানে অন্তর্ভুক্ত ৪ একর ৮০ শতক জমিতে নির্মিত এই স্থাপনাগুলো *অবৈধ। সেই দাবি তুলে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করেন এসি ল্যান্ড সাজ্জাদ জাহিদ রাতুল। কিন্তু বন বিভাগ দাবি করে, জমিটি সংরক্ষিত বনভূমির অংশ, যা ১৯৮০ সালে সরকারি গেজেট অনুযায়ী সংরক্ষিত বন ঘোষণা করা হয়।
বন বিভাগের হিমছড়ি রেঞ্জ কর্মকর্তা জানান, “১৯৮০ সালে হিমছড়ি ঝরনা ও আশেপাশের এলাকাকে ‘সংরক্ষিত বনভূমি’ হিসেবে গেজেট প্রকাশ করা হয়। কিন্তু ২০১০ সালে এটি ভুলবশত এক নম্বর খাস খতিয়ানে অন্তর্ভুক্ত হয়।”
এ সুযোগে উপজেলা প্রশাসন জমিটি *খাসজমি* হিসেবে দাবি করে উচ্ছেদ অভিযান চালায়। দুই পক্ষের মধ্যে জমি মালিকানা নিয়ে এই দ্বন্দ্বই মূলত উত্তেজনার জন্ম দেয়।
ঘটনার পর এসি ল্যান্ড রাতুল অভিযোগ করেন, “উচ্ছেদ অভিযানে বাঁধা দিতে পরিকল্পিতভাবে ভিডিও ধারণ করে তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়ানো হয়েছে। যারা খাস জমিতে অবৈধ স্থাপনা গড়েছেন, তারাই অপপ্রচার চালাচ্ছেন।”
তিনি আরও বলেন, “ন্যায়সংগতভাবে কাজ করছি, তাই এই কাজ থেকে বিরত থাকবো না।”
এর আগে হিমছড়ি পর্যটন এলাকায় নির্মিত একটি পাবলিক টয়লেট উচ্ছেদ করে দক্ষিণ বন বিভাগ। এতে পর্যটকসহ স্থানীয়দের মাঝে দেখা দেয় চরম দুর্ভোগ।
হিমছড়ি বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটির আয়োজনে রোববার সকালে প্রতিবাদে *মানববন্ধন* হয়।
এক স্থানীয় ব্যবসায়ী জানান, “হাজার হাজার পর্যটক আসেন হিমছড়িতে। টয়লেট ভেঙে ফেলা হলেও কোনো বিকল্প ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। এটি পর্যটকদের প্রতি চরম অবহেলা।”
হিমছড়ি ঝরনা প্রতিবছর ইজারা দেয় কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগ, আর ঝরনার সামনের বাজার, পার্কিং ও গণশৌচাগার ইজারা দেয় রামু উপজেলা প্রশাসন। জমি সংক্রান্ত প্রশাসনিক দায়িত্বের এই দ্বৈততা এবং সমন্বয়হীনতাই প্রকৃতপক্ষে এ ঘটনার মূল উৎস।
সচেতন মহলের মতে, পর্যটন স্পট হিসেবে হিমছড়ির গুরুত্ব অপরিসীম। এমন এলাকায় সরকারি দুই সংস্থার মধ্যে প্রকাশ্য বিরোধ পর্যটন খাত ও স্থানীয় জনসাধারণের জন্য নেতিবাচক বার্তা দেয়।
তাদের দাবি, “সরকারের উচিত হিমছড়ির মালিকানা ও ব্যবস্থাপনার বিষয়টি দ্রুত নিরসন করা, যেন ভবিষ্যতে এমন অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি না ঘটে।”
ছামিয়া