ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২২ জুলাই ২০২৫, ৬ শ্রাবণ ১৪৩২

রাজধানীতেই তিন লাখ মানুষের যাতায়াতে ভরসা বৈঠাচালিত নৌকা : দাবি একটিমাত্র সেতু

রাজু আহমেদ, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার,  ঢাকা

প্রকাশিত: ২২:১৯, ২১ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ২২:১৯, ২১ জুলাই ২০২৫

রাজধানীতেই তিন লাখ মানুষের যাতায়াতে ভরসা বৈঠাচালিত নৌকা : দাবি একটিমাত্র সেতু

রাজধানীর অতি নিকটতম তুরাগ নদীবেষ্টিত বিচ্ছিন্ন একটি দ্বীপখ্যাত ইউনিয়ন কাউন্দিয়া ইউনিয়ন পরিষদ। সাভার উপজেলাধীন একটি ইউনিয়ন হলেও বর্তমানে সেটি ঢাকা-১৪ আসনের অন্তর্ভুক্ত। যেখানে প্রায় আড়াই লক্ষাধিক বাসিন্দাদের বসবাস। তবে স্বাধীনতা পরবর্তী সময় থেকেই নাগরিক সুবিধাবঞ্চিত এই অঞ্চলের বিপুল সংখ্যক বাসিন্দাদের বাণিজ্যিক যোগাযোগসহ রাজধানীর সাথে সার্বিক যোগাযোগ রক্ষার্থে দিয়াবাড়ি ঘাটসহ প্রায় ১৬ টি খেয়াঘাট ব্যবহার করে যোগাযোগ রক্ষার একমাত্র মাধ্যমই বৈঠাচালিত নৌকা। 

শত বছরের পুরোনো এই জনবহুল জনপদ এবং ইউনিয়নের আওতায় বসবাসরত প্রায় তিন লাখ মানুষের প্রাণের দাবি একটি মাত্র সেতু। 
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দিয়াবাড়ি ঘাটসহ আশপাশের প্রায় ১৬ টি খেয়াঘাট  থেকে শতশত নৌকা এপার-ওপার  চলাচল করছে। দিয়াবাড়ি খেয়াঘাটে দাড়িয়ে মনে হলো যেনো কোনো সীমান্ত দাড়িয়ে আছি। মাত্র শত গজ প্রশস্থ তুরাগ নদীর ওইপাড়ে সাভারের কাউন্দিয়া ইউনিয়ন, এই পাড়ে রাজধানী ঢাকা। মাঝখানে  ফারাক  শুধুমাত্র শত গজ প্রশ্বস্থ তুরাগ নদটি। যাত্রী পরিবহন এমনকি দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় যে কোন মালামাল পরিবহনেও একমাত্র যানবাহন হিসেবে  ব্যবহৃত হচ্ছে নৌকা। 

এবিষয়ে কাউন্দিয়ার স্থানীয় বাসিন্দা আবুল কাশেম বলেন, কাউন্দিয়ায় বসবাসরত দুই লক্ষাধিক বাসিন্দারা তাদের দৈনন্দিন কর্মযজ্ঞ সাধনে মিরপুরেই বেশি যাতায়াত করে থাকেন। এখানকার বাসিন্দাদের বেশির ভাগই মিরপুরে বিভিন্ন ব্যবসা-বাণিজ্য চাকরি-বাকরি করেন। প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যা দৈনন্দিন যাতায়াতে  যানবাহন হিসেবে একমাত্র ভরসাই নৌকা। 

মোহাম্মদ রিপন নামে এক বাসিন্দা বলেন, ইউনিয়নবাসির সকল দাপ্তরিক কর্মকান্ড সাধন সাভার উপজেলা ও সাভার থানা কেন্দ্রীক হয়ে থাকে। কিন্তু দৈনন্দিন চলাফেরায় দিয়াবাড়িসহ খেয়া ঘাট গুলিকে ব্যবহার করে
মিরপুর হয়েই রাজধানীতে চলাফেরা করেন এই অঞ্চলবাসী। 

ইয়াসমিন আক্তার নামে এক নারী বলেন, আমি প্রায় নয় বছর যাবত কাউন্দিয়াতে বসবাস করি। চাকরি করি মিরপুর একটি গার্মেন্টসে। প্রতিদিন আমাকে খুব কষ্ট করে নৌকা পারাপার হয়ে অফিসে যাতায়াত করতে হয়। 
মোহাম্মদ আলী নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা  বলেন, রাজধানী লাগোয়া হওয়া সত্ত্বেও এখান থেকে কোন অসুস্থ রোগীকে হাসপাতালে নিতে গেলেও চরম বেগ পোহাতে হয়। কারণ এখানে তিন লক্ষাধিক বাসিন্দাদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসার জন্য নেই কোন হাসপাতাল। 
আল ইসলাম নামে আরো এক ব্যক্তি বলেন, সেদিন আমার এক প্রতিবেশী প্রসূতি মাকে হাসপাতালে নেওয়ার সময় নৌকাতে প্রসব করে দিয়েছিলেন। বর্ষাকালে অনেক সময় চলাচলের সমস্যা হয় অনেকে মৃত্যুবরণ করেছেন।

এখানে উন্নত শিক্ষার জন্য তেমন উল্লেখযোগ্য কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান না থাকায় রাজধানীর মিরপুর সহ বিভিন্ন এলাকার স্কুল কলেজে নিয়মিত যাতায়াত করতে হয় শিক্ষার্থীদের। নৌকায় যাতায়াতে চরম জনদুর্ভোগ পোহাতে হয় তাদেরকে।
স্থানীয় এক দোকানি বলেন, এখানে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য আনা নেওয়ায় অতিরিক্ত ব্যয় হয়। হলে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি বেশি মূল্যে আমাদেরকে বিক্রি করতে হচ্ছে। মাঝে মাঝে পণ্যের দাম বেশি-কম কেন্দ্রীক ক্রেতাদের সঙ্গে আমাদের বাক বিতন্ডাও হয়। এটিও এক ধরনের ভোগান্তি। 
ভুইয়া কামরুল নামে আরো একজন স্থানীয় বাসিন্দা জানান, এই নদীপথে অসংখ্য মাটি-বালুবাহী ইঞ্জিন চালিত ট্রলার ও মাঝারি সাইজের জাহাজ চলাফেরা করে। প্রায়শই দুর্ঘটনায় ঘটে প্রাণীর মতো ঘটনা।

এস এম আর শহীদ নামে আরো এক বাসিন্দা বলেন, বিগত সরকারের আমলে একনেকে বৈঠকে একটি সেতুর অনুমোদন দেয়। বেশ ঘটা করে ভিত্তিপ্রস্তরও নির্মাণ হয় সেতুর। এতে করে শত বছরের জনদুর্ভোগ লাঘবের স্বপ্নে বিভোর হয় ইউনিয়টির আড়াই  লক্ষাধিক বাসিন্দারা। শুরু হয় সেতু নির্মাণ কাজ। কিন্তু আকস্মিক অজানা কারণে সেতুটি নির্মাণ কাজ বন্ধ হয়ে যায় তাদের সেই স্বপ্ন গুড়েবালি ও স্বপ্ন পূরণের সম্ভাবনা ফিকে হয়ে  যায়। 
হাজী মনির নামের স্থানীয় আরেক বাসিন্দা বলেন, শত বছরের এই জনপদে দাদা স্বপ্ন ছিল একটি সেতু। বাবার স্বপ্ন ছিল একটি সেতু। কিন্তু তারা এসে তো দেখে যেতে পারেননি। সেতুটি একনেকের বৈঠকে অনুমোদন এবং নির্মাণকাজ শুরু হওয়ায় সেই স্বপ্ন পূরণের সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছিল। কেন জানি সেই সেতো নির্মাণ কাজ আবার বন্ধ হয়ে যায়। হতাশ আমরা কাউন্দিয়া ইউনিয়নের আড়াই লক্ষাধিক বাসিন্দা।

অঞ্চলবাসীর একটি মাত্র প্রাণের দাবি, কাউন্দিয়া ইউনিয়নের তিন লক্ষ বাসিন্দাদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে, অঞ্চলবাসীর শত বছরের জনদুর্ভোগ লাঘবে একটি সেতু নির্মাণ করা হোক।

Jahan

×