ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৮ জুলাই ২০২৫, ৩ শ্রাবণ ১৪৩২

ইবিতে সাঁতারু সাজিদের অস্বাভাবিক মৃত্যু, বিচারের দাবিতে লাশ আটকে বিক্ষোভ

সাজিদ সাঁতার জানতো, তাহলে কীভাবে ডুবে মারা গেল? প্রশ্ন শিক্ষার্থীদের

আজাহারুল ইসলাম, ইবি

প্রকাশিত: ১৭:৫৯, ১৮ জুলাই ২০২৫

সাজিদ সাঁতার জানতো, তাহলে কীভাবে ডুবে মারা গেল? প্রশ্ন শিক্ষার্থীদের

ছবিঃ সংগৃহীত

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষার্থী সাজিদ আবদুল্লাহ’র মৃত্যুকে ঘিরে রহস্য সৃষ্টি হয়েছে। ঘটনা উন্মোচনের জন্য হল প্রশাসন ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পৃথক দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। শুক্রবার পৃথক অফিস আদেশে এই তথ্য জানা গেছে। গত বৃহস্পতিবার বিকেল সোয়া ৫টার দিকে সাজিদের লাশ শাহ আজিজুর রহমান হল সংলগ্ন পুকুরে ভাসতে দেখা যায়। পরে বিকেল সাড়ে ৬টায় ইবি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার উপস্থিতিতে লাশ তোলা হয়। সাজিদ বিশ্ববিদ্যালয়ের আল-কোরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র এবং শহীদ জিয়াউর রহমান হলের ১০৯ নম্বর কক্ষে থাকতেন। তার বাড়ি টাঙ্গাইল জেলার ঘাটাইল উপজেলায়। তার বাবা আহসান হাবিবুল্লাহ দেলোওয়ার, যিনি একটি মাদ্রাসার সুপারিটেনডেন্ট। সাজিদ তাদের চার সন্তানের মধ্যে একমাত্র ছেলে।

পুকুর থেকে মরদেহ তোলার পর প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, নাক থেকে রক্ত ঝরছিল। সুরতহাল রিপোর্টে নাক থেকে রক্ত বের হওয়া, বাম হাতের কব্জির উপরে ও ডান পায়ের হাঁটুর নিচে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে উল্লেখ করা হয়েছে। বিকেল সোয়া ৫টার দিকে পুকুরে লাশ ভাসতে দেখে শিক্ষার্থীরা পুকুরপাড়ে জমায়েত হন। প্রথমে লাশ শনাক্ত করা যায়নি, পরে পুলিশ এসে লাশ কাছে আনার পর শিক্ষার্থীরা সাজিদকে শনাক্ত করেন।

তার সহপাঠী ও ক্যাম্পাসের জুনিয়র-সিনিয়ররা জানান, সাজিদ সাঁতার জানতেন এবং আগে বিভিন্নবার পুকুরে সাঁতার কাটতে নেমেছেন। তাই তারা ভাবছেন, কীভাবে সে ডুবে মারা গেল? সাধারণত পানিতে ডুবে মারা গেলে লাশ উপুড় হয়ে থাকে এবং শরীর ফুলে যায়, কিন্তু সাজিদের লাশ চিত হয়ে ছিল এবং শরীরে এমন কোনো লক্ষণ দেখা যায়নি। এজন্য তারা এই মৃত্যুকে রহস্যজনক মনে করছেন এবং সঠিক তদন্তের মাধ্যমে সত্য উদঘাটনের দাবি করছেন।

সাজিদের রুমমেটরা জানান, সোমবার দুপুর ২টায় আমি বাড়ির উদ্দেশ্যে চলে গিয়েছিলাম, তখন সাজিদের সাথে কথা হয়েছিল। আরেক রুমমেট বলেন, বুধবার আমি দুপুর ৩টার পর ঢাকার উদ্দেশ্যে রুম থেকে বের হই, তখন সাজিদ রুমেই ছিল।

সাজিদের বাবা আহসান হাবিবুল্লাহ বলেন, "আমার ছেলের মৃত্যু রহস্যজনক। আমরা সুষ্ঠু তদন্ত চাই।"

সুরতহাল প্রতিবেদনের বিষয়ে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক হোসেন ইমাম সাংবাদিকদের বলেন, প্রাথমিকভাবে তার শরীরে অপমৃত্যুর কোনো লক্ষণ দেখা যায়নি। তবে ভিসেরা রিপোর্ট আসার পর নিশ্চিত বলা যাবে।

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. শাহিনুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, সাজিদের পোস্টমর্টেম সম্পন্ন হয়েছে। সব প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর প্রকৃত ঘটনা জানা যাবে।

বিচারের দাবিতে লাশ আটকে বিক্ষোভ

শিক্ষার্থী মৃত্যুর ঘটনায় বিভিন্ন ছাত্রসংগঠন যেমন- শাখা ছাত্রদল, ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্রশিবির, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন ইত্যাদি শোকবার্তায় সুষ্ঠু বিচারের দাবি জানিয়েছেন। শুক্রবার দুপুর ১২টায় কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের মসজিদে সাজিদের প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় তার সহপাঠীরা লাশবাহী ফ্রিজিং ভ্যান আটকে বিক্ষোভ করেন। পরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ১০ দিনের মধ্যে তদন্তের আশ্বাস দিয়ে লিখিত মুচলেকা দিলে ভ্যান ছেড়ে দেওয়া হয়। এরপর লাশ তার পরিবারের কাছে পাঠানো হয়। সেখানে মাগরিবের নামাজের পর জানাজা শেষে কবরস্থানে দাফন করা হবে।

তদন্ত কমিটি গঠন

সাজিদের মৃত্যুর ঘটনায় বৃহস্পতিবার দুটি পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। হল প্রশাসনের তিন সদস্যের কমিটিতে হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. আব্দুল গফুর গাজীকে আহ্বায়ক করা হয়েছে, সদস্য হিসেবে রয়েছেন সহকারী প্রক্টর অধ্যাপক ড. আব্দুল বারী এবং সদস্য সচিব হিসেবে হলের আবাসিক শিক্ষক অধ্যাপক ড. আ.হ.ম. নুরুল ইসলাম। অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পাঁচ সদস্যের কমিটির আহ্বায়ক হলেন কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. এমতাজ হোসেন। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন শাহ আজিজুর রহমান হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান, লালন শাহ হলের প্রভোস্ট ড. গাজী মো. আরিফুজ্জামান খান, আল-হাদিস বিভাগের অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান এবং সহকারী প্রক্টর অধ্যাপক ড. খাইরুল ইসলাম। উভয় কমিটিকে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
 

 

মারিয়া

আরো পড়ুন  

×