
ছবি: দৈনিক জনকণ্ঠ
নির্মাণ করা হবে স্লইস গেট। তাই রাস্তা কেটে রাখা হয়েছে প্রায় দুই বছর যাবত। ফলাফল গলাচিপা পৌরবাসীর দীর্ঘ ভোগান্তি। দ্বিগুণ পথ ঘুরে বিকল্প সড়ক দিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে স্থানীয়দের। প্রকল্পটির কাজ চলছে ধীরগতিতে। দেড় বছরে কাজের অগ্রগতি ৫০ ভাগও হয়নি। অথচ প্রকল্পের মেয়াদ জুন মাসে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। চলতি বর্ষা মৌসুম মানুষকে কষ্ট করতে হবে বলে জানায় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, গলাচিপা পৌর শহরের মধ্য দিয়ে বহমান রয়েছে পাঁচশ’ বছরের পুরাতন একটি খাল। এ খালটি ‘গলাচিপা বন্দর খাল’ নামে পরিচিত। এক সময় গলাচিপার রামনাবাদ নদী এবং উলানিয়ার বুড়াগৌরাঙ্গ নদীর সঙ্গে সংযোগ ছিল এ খালটি। যে খাল দিয়ে জোয়ার-ভাটার পানি প্রবাহিত হতো। চলাচল করতো লঞ্চ, ট্রলার ও নৌকা। ১৯৭০ সালের প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের পর গলাচিপা শহর ও উলানিয়ার অংশ দিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধ নির্মাণ করে। এর ফলে এ খালটির গলাচিপা ও উলানিয়া অংশের নদীর মুখে বাঁধ দেওয়া হয়। এর পর এ খালটি বদ্ধ খালে পরিণত হয়। এর ফলে খালটি ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হয়ে ওঠে এবং ধীরে ধীরে খালটি বেদখল হতে থাকে।
জানা যায়, পানির প্রবাহ এবং পুরানো ঐতিহ্য বজায় রাখতে খালটি দেড় কিলোমিটার খনন এবং দুই পার্শ্বে ওয়ার্কওয়ে নির্মাণের উদ্যোগ নেয় পটুয়াখালী পানি উন্নয়ন বোর্ড। সে অনুযায়ী ৬ কোটি ৩৭ লাখ ৮৬ হাজার টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। টেন্ডারে ‘ন্যাচারাল’ নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ২০২৩ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর প্রকল্পের কার্যাদেশ দেওয়া হয়। সাব ঠিকাদার হিসেবে কাজটি করছেন আল-আমিন নামে গলাচিপার গজালিয়া এলাকার এক ঠিকাদার। চুক্তি অনুযায়ী ২০২৫ সালের ৩০ জুন প্রকল্পটি শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু প্রকল্পের কাজ এখনও সম্পন্ন হয়নি ৫০ ভাগ।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানায়, জোয়ার-ভাটার স্বচ্ছ পানি ওঠানামার জন্য ডাকুয়া এলাকা একটি স্লুইস গেট রয়েছে। কিন্তু ওই স্লুইস গেটটি বাহির অংশে চর পড়ে ভড়াট হয়ে যাওয়ায় সেটি এখন অচল। ওই স্লুইস গেটের পানি ওঠানামা করতে পারে না। এ কারণে শহরের প্রাণকেন্দ্রে গলাচিপা থানার সামনে দিয়ে নতুন স্লুইস গেট নির্মাণের উদ্যোগ নেয় পানি উন্নয়ন বোর্ড। এ লক্ষ্যে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান প্রকল্পের কার্যাদেশ পাওয়ার পর পরই পৌর শহরের প্রধান ও ব্যস্ততম সড়কটি কেটে ফেলে। ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে শত বছরের বিভিন্ন স্থাপনা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। যা গত দেড় বছর একই অবস্থায় পড়ে রয়েছে। প্রকল্পের কাজ ধীরগতিতে চলায় শহরবাসীর মধ্যে চরম অসন্তোষ ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। শহরবাসী প্রকল্পের কাজ দ্রুত সম্পন্ন করার দাবি জানিয়েছেন।
স্থানীয়রা জানান, ঢাকা থেকে লঞ্চ, কার্গো কিংবা পরিবহনে মালামাল পৌছতে চরম ভোগান্তী হয়। ঘুর পথে মালামাল পরিবহন করতে আগের চেয়ে ভাড়া বাড়তি দিতে হয়। চলতি বর্ষা মৌসুমেতো ভোগান্তির শেষ নেই। রাস্তা কাটা তাই শহরের পূর্ব পাশের বিক্রেতাদের কাছে মালামাল বিক্রি করতে পারছি না দেড় বছর। তাই ব্যবসা মন্দা। খেয়া ঘাট থেকে যাত্রী পারাপার হলে তাদের কাছেও বিক্রি করতে পারিনা। কারন তারা বর্তমানে ঘুর পথে শহরের দিকে চলে যায়।
লঞ্চঘাটের লেবার সর্দার আব্দুল খালেক জানান, কার্গো, ট্রলার কিংবা লঞ্চ থেকে মালামাল নামিয়ে শহরের মধ্যে নিতে আধা কিলোমিটার ঘুরে বাজারে ঢুকতে হয়। এতে করে আমাগো সময় ও শ্রম দু’ই বেশি লাগে। তাই তাড়াতাড়ি স্লুইস গেটের কাজ শেষ করা উচিত।
গলাচিপা শহরের ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দরা জানান, জেলা শহর থেকে উপজেলায় প্রবেশদ্বারে স্লুইস গেটটি নির্মাণ করা হচ্ছে। গলাচিপা শহর দক্ষিণাঞ্চলের অন্যতম একটি ব্যবসা কেন্দ্র। কাজের ধীরগতি থাকায় গত দেড় বছর ধরে স্থানীয় ব্যবসায়ীসহ জনসাধারণের চরম ভোগান্তি হচ্ছে। শুধু গলাচিপা উপজেলায় নয়, প্রধান সড়কটি কেটে রাখায় পার্শ্ববর্তী রাঙ্গাবালী উপজেলা মানুষের যাতায়াতে সীমাহীন দুর্ভোগ হচ্ছে। এ স্লুইসটি এখন শহরবাসীর গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই দ্রুতগতিতে কাজটি সম্পন্ন করার জন্য ঠিকাদারসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্তা ব্যক্তির প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি।
কাজের দায়িত্বে থাকা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ সহকারী প্রকৌশলী মো. ইরতিজা হাসান বলেন, স্ট্রাকচারাল কাজের প্রায় ৬০ শতাংশ কাজ হয়ে গেছে। একটি স্লুইস গেটের মূল কাজই হচ্ছে নিচে। যেমন মাটির নিচে স্যান্ড পাইল, স্যান্ড ফিলিং, সীট পাইল, বেইজ ঢালাই, বেজমেন্ট, রিটার্ন ওয়াল। এর মধ্যে বর্তমানে রিটার্ন ওয়ালের কাজ চলছে। আশা করছি মূল কাজ জুলাই মাসের মধ্যেই শেষ হয়ে যাবে।
এ ব্যাপারে সাব ঠিকাদার মো. আল-আমিনকে মুঠোফানে একাধিকবার কল করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তাই তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
পটুয়াখালী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাকিব জানান, স্লুইসটির কাজ চলমান রয়েছে। আগে কাজটি একটু ধীরগতিতে চললেও বর্তমানে দ্রুত গতিতেই কাজটি চলছে। সার্বিক ভাবে কাজের অগ্রগতি ৫০ ভাগ হয়েছে। কাজটি দ্রুত সম্পন্ন করতে এবং জনগণের ভোগান্তি কমিয়ে আনা যায় সে জন্য সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারকে প্রতিনিয়ত তাগিদ দেওয়া হচ্ছে। চলতি বর্ষা মৌসুমে মানুষের একটু কষ্ট হবে বলেও জানান তিনি।
স্টাফ রিপোর্টার, পটুয়াখালী