
ছবি: দৈনিক জনকণ্ঠ
চলতি মাসে শুরু হওয়া অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় নোয়াখালীর ৬টি উপজেলার ৫৭টি ইউনিয়ন কমবেশি অনেকটাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অতিবৃষ্টির কারণে সৃষ্ট বন্যায় ২৪০ কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে। সবচেয়ে বেশি মৎস্য খাতে, এই খাতে ক্ষতির পরিমাণ ১৩৫ কোটি ৯ লাখ টাকা। ক্ষতিগ্রস্ত উপজেলাসমূহে এখনো পানিবন্দি রয়েছেন ছয় উপজেলার ১৭ হাজার ৪৬০ পরিবার। উপজেলাসমূহ থেকে থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে এসব তথ্য গণমাধ্যমকর্মীদেরকে জানানো হয়েছে।
কার্যালয়ের তথ্যমতে, চলতি ৮ জুলাই থেকে শুরু হওয়া অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় নোয়াখালীর ৬টি উপজেলার ৫৭টি ইউনিয়ন কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে পানিবন্দি হন ২ লাখ ৩ হাজার মানুষ।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ‘সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে যোগাযোগ করে ক্ষয়ক্ষতির এই তথ্য নেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত ছয় উপজেলার ৪৫ হাজার ৭০৩ জন পানিবন্দি রয়েছেন।’
অতিবৃষ্টিতে জেলার সবকটি উপজেলার খেতের ফসল, আমন বীজতলা, পুকুর ও খামারের মাছ, পোলট্রি খামার, হাঁস-মুরগি, রাস্তা ও বেড়িবাঁধের ক্ষতি হয়েছে। এসব উপজেলার ৫ হাজার ৫০৭ হেক্টর জমির ফসল সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আর আংশিক ক্ষতি হয়েছে ২ হাজার ৬৬০ হেক্টর জমির। অন্যদিকে আমন ধানের বীজতলার ক্ষতি হয়েছে ৮৯১ হেক্টর জমির। সব মিলিয়ে এই খাতে ক্ষতির পরিমাণ ৫১ কোটি ১৮ লাখ ৪০ হাজার টাকা।
জেলার ফসলের জমি নষ্ট হওয়ায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন কৃষকেরা। সুবর্ণচর উপজেলার চর জুবলী ইউনিয়নের কৃষক এনায়েত উল্লাহ জানান, তাঁর প্রায় ৪০ কেজি ধানের বীজতলা নষ্ট হয়েছে। ওই বীজতলা দিয়ে চার একর জমি চাষ করতে পারতেন। এখন চরম হতাশায় দিন কাটাচ্ছেন।
ক্ষতিগ্রস্থ এলাকাসমূহে পুকুর ও খামার ভেসে যাওয়ায় বড় মাছের ক্ষতি হয়েছে ১১২ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। আর পোনা মাছের ক্ষতি হয়েছে ২২ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। কবিরহাট, সেনবাগ ও সুবর্ণচর উপজেলায় ক্ষতি হয়েছে ৫৮টি বসতঘরের। এসব বসতঘরের আর্থিক ম‚ল্য ২৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা।
প্রাণিসম্পদ খাতে হাঁস ও মুরগি মারা গিয়ে ক্ষতির পরিমাণ ৫৬ লাখ ৩৪ হাজার টাকা। জলাবদ্ধতায় জেলার ৬০০ কিলোমিটার সড়কের ক্ষতি হয়েছে। এই খাতে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৩০ কোটি টাকা। এ ছাড়া কোম্পানীগঞ্জ, কবিরহাট ও হাতিয়া উপজেলায় বাঁধ ও নদীর তীরেরও ক্ষতি হয়েছে। এই খাতে ক্ষতির পরিমাণ ২৩ কোটি টাকা। জলাবদ্ধতায় ক্ষতির পরিমাণ ২৪০ কোটি ১২ লাখ ৪০ হাজার ১০০ টাকা।
এখনো জেলার কবিরহাট, সদর, কোম্পানীগঞ্জ ও সেনবাগ, সুবর্ণচর ও হাতিয়া উপজেলার নিচু এলাকা সমূহের রাস্তাঘাট ও বাড়িঘরে জলাবদ্ধতা রয়েছে। তন্মধ্যে কবিরহাট, সদর, কোম্পানীগঞ্জ ও সেনবাগ এলাকায় জলাবদ্ধতা বেশি। এসব এলাকার ভুক্তভোগি বাসিন্দারা জানিয়েছেন টানা জলাবদ্ধতায় তাঁরা ভোগান্তির মধ্যে রয়েছেন। সদর উপজেলার ১নং চরমটুয়া ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধিরা জানান, তাদের ইউনিয়নের প্রায় ৫৫ শতাংশ বাড়িতে এখনো পানি। পার্শ্ববর্তী ওদারখাল দিয়ে পানি নামার গতি অত্যন্ত ধীর হওয়ার কারণে দুর্ভোগ দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
জেলা আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এম. রফিকুল ইসলাম বলেন, জেলায় চলতি জুলাই মাসে স্বাভাবিকভাবে ৬৯০ মিলিমিটার বৃষ্টি হওয়ার কথা। কিন্তু মাসের শুরুর ১০ দিনেই ৬২৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। ফলে জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে জলাবদ্ধতাও দেখা দিয়েছে।
ফারুক