ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৬ জুলাই ২০২৫, ৩১ আষাঢ় ১৪৩২

বাউফল মডেল সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়: প্রধান শিক্ষকের নিয়োগ বিধি মোতাবেক হয়নি – তদন্ত প্রতিবেদন

নিজস্ব সংবাদদাতা, বাউফল, পটুয়াখালী

প্রকাশিত: ১৮:৪০, ১৫ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ১৮:৪১, ১৫ জুলাই ২০২৫

বাউফল মডেল সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়: প্রধান শিক্ষকের নিয়োগ বিধি মোতাবেক হয়নি – তদন্ত প্রতিবেদন

ছবিঃ সংগৃহীত

বাউফল সরকারি মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নার্গিস আখতার জাহানের নিয়োগ বিধিমালা অনুযায়ী হয়নি। এছাড়াও তাঁর বিরুদ্ধে সরকারি কোয়ার্টারে থেকেও বাসাভাড়া উত্তোলন এবং চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী পদে চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রধান শিক্ষক নার্গিস আখতারের বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) বরাবরে বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সাবেক সভাপতি জিএম ফারুক একটি লিখিত অভিযোগ করেন।

এই অভিযোগের ভিত্তিতে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটির প্রধান ছিলেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) প্রতীক কুমার কুন্ডু। অন্য দুই সদস্য ছিলেন উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা পার্থ সারথী দত্ত এবং উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান।

সম্প্রতি এই তদন্ত প্রতিবেদন জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে।

বিদ্যালয় ও তদন্ত প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৯ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর দৈনিক ইনকিলাব পত্রিকায় প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে দুজন স্নাতক ইংরেজি শিক্ষক নিয়োগের কথা উল্লেখ ছিল। কিন্তু নার্গিস আখতার জাহানের ১৯৯৩ সালের স্নাতক পাসের নম্বরপত্র অনুযায়ী তাঁর পাঠ্যক্রমে ইংরেজি বিষয় ছিল না এবং তিনি তৃতীয় বিভাগে উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। তাঁর দাখিলকৃত যোগদানপত্র অনুযায়ী তিনি ১৯৯৯ সালের ১ আগস্ট ইংরেজি বিষয়ের সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন।

পরে তিনি ২০১১ সালের ২১ ডিসেম্বর একই বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক পদে যোগদান করেন। বিদ্যালয়টি ২০১৮ সালের অক্টোবর মাসে সরকারিকরণ করা হয়।

১৯৯৫ সালের নিয়োগ বিধি অনুযায়ী যেই বিষয়ে নিয়োগ হবে, স্নাতক পর্যায়ে সেই বিষয় থাকতে হবে এবং সব স্তরে দ্বিতীয় বিভাগ থাকতে হবে। সেই অনুযায়ী তাঁর সহকারী শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ প্রক্রিয়াটি সঠিক হয়নি বলে তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।

তদন্ত প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, তিনি বিদ্যালয়ের কোয়ার্টারে থেকেছেন এবং সরকারিভাবে বাসাভাড়া ভাতা পেয়েছেন, কিন্তু বাসাভাড়ার অর্থ কর্তন না করেই পূর্ণ ভাতাদি উত্তোলন করেছেন। এ বিষয়ে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছে তদন্ত কমিটি।

তাছাড়া, বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী আ. রহিম গাজীর ছেলে মো. রাসেল গাজীকে চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে নার্গিস আখতার ৭৫ হাজার টাকা ঘুষ নিয়েছেন বলে তদন্তে প্রমাণ মিলেছে। এ বিষয়েও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।

অভিযোগকারী জিএম ফারুক বলেন, নার্গিস আখতার যখন নিয়োগ পান, তখন আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় ছিল। তাঁর বাবা ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। এ কারণেই কোনো নিয়ম-নীতি না মেনেই তিনি নিয়োগ পান।

তিনি আরও অভিযোগ করেন, ২০১৩ সালে প্রধান শিক্ষকের বাসভবনের জন্য একটি পাকা ভবন নির্মাণ করা হয়। কিন্তু ২০২৪ সালের মাঝামাঝি সময়ে তিনি তাঁর নিজস্ব বাসায় চলে যান। বাসাভাড়ার অর্থ আদায় না করার জন্য তিনি সরকারি বাসভবনটিকে পরিত্যক্ত প্রমাণ করার চেষ্টা করছেন।

প্রধান শিক্ষক নার্গিস আখতার এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘‘স্নাতকে আমার ইংরেজি বিষয় ছিল না ঠিকই, কিন্তু নিয়োগ কমিটি যাচাই-বাছাই করেই আমাকে নিয়োগ দিয়েছে। পরবর্তীতে আমি প্রধান শিক্ষক হিসেবে পদোন্নতি পেয়েছি।’’

তদন্ত প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘আমার নিয়োগ কর্তৃপক্ষ ইউএনও নন, বরং জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর। তাঁরাই বুঝবেন আমার নিয়োগ বিধিসম্মত ছিল কিনা।’’

উপজেলা নির্বাহী অফিসার আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘‘তদন্ত প্রতিবেদন জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।’’

 
 

মারিয়া

×