ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ১৪ জুলাই ২০২৫, ২৯ আষাঢ় ১৪৩২

৪ ছিনতাইকারীর জবানবন্দি

টঙ্গীতে মোবাইল ছিনতাইয়ে বাঁধা দেয়ায় কলেজ ছাত্র খুন

নূরুল ইসলাম তালুকদার, টঙ্গী

প্রকাশিত: ১৬:৩২, ১৩ জুলাই ২০২৫

টঙ্গীতে মোবাইল ছিনতাইয়ে বাঁধা দেয়ায় কলেজ ছাত্র খুন

ছবি: জনকণ্ঠ

টঙ্গী গাজীপুর ময়মনসিংহ টাঙ্গাইল মহাসড়কের টঙ্গী বাজার বিআরটি ফ্লাইওভারে মোবাইল ফোন ছিনতাইয়ের সময় বাঁধা দেয়ায় ছিনতাইকারীরা কলেজ ছাত্র মাহফুজুর রহমানকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করেছে র‍্যাবের কাছে এমন স্বীকারোক্তি দিয়েছে আটক হওয়া ৪ ছিনতাইকারী। টঙ্গী বিআরটি ফ্লাইওভার ছিনতাইকারীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। গত এক বছরে ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে বহু হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। 


৯ জুলাই দিবাগত রাত ১টার দিকে টঙ্গী আবদুল্লাহপুর ফ্লাইওভার দিয়ে টঙ্গী আসার পথে কলেজ ছাত্র মাহফুজ ছিনতাইকারীর এলোপাথাড়ি ছুরিকাঘাতে নিহত হন। আজ রবিবার (১৩ জুলাই) এক সাংবাদিক সম্মেলনে র‍্যাব-১ এই তথ্য জানায়। গ্রেপ্তারকৃতরা হলো,  রাফসান জানি রাহাত (২৮), রাশেদুল ইসলাম (২০), কাওছার আহম্মেদ পলাশ (২৩) ও রাকিব ইসলাম (২৬)। এদের  টঙ্গীর বিভিন্ন স্থান থেকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব।


র‍্যাব-১ এর  সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার ও 

সিনিয়র সহকারী পরিচালক (অপস্ & মিডিয়া অফিসার) সালমান নূর আলমের দেয়া লিখিত তথ্যে এবং সম্মেলনে র‍্যাব জানায়, আব্দুল্লাহপুর বাসস্ট্যান্ড এ গত বৃহস্পতিবার জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে পরিচালিত বরিশালের হাতেম আলী কলেজের ছাত্র মোঃ মাহফুজুর রহমান নির্মম হত্যাকান্ডের শিকার হন। ছিনতাইকারীদের ছুরিকাঘাতে তার পায়ে রক্তাক্ত জখম হয় এবং তিনি অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে মৃত্যুবরণ করেন।


মৃত্যুর কিছু সময় পর তার নিথর মরদেহ আব্দুল্লাহপুর বাস স্ট্যান্ড সংলগ্ন বিআরটির একটি নির্মাণাধীন স্থানে পাওয়া যায়।  এই ঘটনায় মামলা হলে র‌্যাবের ছায়া তদন্ত শুরু হয়। ছায়া তদন্তের এক পর্যায়ে ভিকটিম এর অ্যান্ড্রয়েড সেটটি হত্যাকাণ্ডের প্রায় ২ ঘণ্টা পর শনাক্ত করা যায়। বর্ণিত ঘটনার সূত্র ধরে র‌্যাব-১ এর একটি অভিযানিক দল মোবাইলের গ্রাহককে দ্রুত সময়ে শনাক্ত করে নজরবন্দীতে আনে। মোবাইল এর গ্রাহককে জিজ্ঞাসাবাদ করার পর তিনি জানান যে ভিকটিমের সেটটি টঙ্গীর মাজার বস্তির এক চোরাই মোবাইল ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ৩৫০০/- টাকা মূল্যে ক্রয় করেন।


অতঃপর মোবাইলের গ্রাহককে বিভিন্ন সন্দেহভাজন চোরাই মোবাইল চক্রের ছবি দেখান হয়। গ্রাহক তৎক্ষণাৎ মোবাইল বিক্রেতা রাকিবকে শনাক্ত করে। পরবর্তীতে র‌্যাব তাকে গোয়েন্দা নজরদারির মাধ্যমে গ্রেপ্তার করে। মোবাইল বিক্রেতা রাকিব একজন প্রাক্তন মাদক ব্যবসায়ী। সে বর্তমানে ছিনতাইকারীদের ব্যবহার করে কম মূল্যে মোবাইল সংগ্রহ করে এবং লাভজনক মূল্যে বিভিন্ন গ্রাহকের কাছে বিক্রয় করে।


একই সাথে ছিনতাইকারীরা তার নিকট থেকে সুইচ গিয়ার এবং অন্যান্য ধারালো সরঞ্জাম সংগ্রহ করে। চোরাই মোবাইল বিক্রেতা রাকিব এর কাছে ১টি ছিনতাই চক্র সর্বমোট ৩টি মোবাইল সেট বিক্রয় করেছে। অভিযানে প্রথমে কাওছার আহম্মেদ পলাশকে গ্রেপ্তার করা হয়। পলাশের তথ্য অনুযায়ী ছুরি ব্যবহারকারী ছিনতাইকারী রাশেদকে গ্রেপ্তার 

করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা ছাত্র মাহফুজকে গুরুতর জখমের জন্য একে অপরকে দোষারোপ করে এবং তাদের সাথে জড়িত অন্যান্য ছিনতাইকারীর সন্ধান দেয়।


একই সাথে ছিনতাই এর সময় ব্যবহৃত মোটরসাইকেল চালক রাহাতের সন্ধান দেন। চালক রাহাতকেও একইদিনে   গ্রেপ্তার  করা হয়। এর মাধ্যমেই ১টি ছিনতাই চক্র সম্পূর্ণ গ্রেপ্তার হল। আসামিদ্বয়কে জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানান তারা পেশাদার ছিনতাইকারী এবং একই দিনে তারা রাজধানীর হাউজ বিল্ডিং এবং কুর্মিটোলা এলাকায় আরো দুটি মোবাইল ছিনতাই করে।


ক্লুলেস মার্ডারটির ব্যাপারে ছিনতাইকারীরা জানায়, ছিনতাই করার সময় তারা সংঘবদ্ধভাবে কাজ করে। একটি চক্রের মধ্যে পলাশ মূলত বিভিন্ন ভিকটিমের ব্যক্তিগত মোবাইল মানিব্যাগ ও অন্যান্য মূল্যবান সামগ্রী সংগ্রহ করে। অন্যদিকে সাগর ধারালো অস্ত্র দ্বারা ভিকটিমকে ভয় দেখায় এবং ভিকটিম তাদের কথা না শুনলে শরীরের আঘাত করার মাধ্যমে তার নিকট থেকে অর্থ আদায়ের চেষ্টা করে। ছিনতাই করার পূর্বে তারা সাধারণত মাদকসেবন করে আসে এবং চোরাই মোবাইল বিক্রেতা রাকিবের নিকট থেকে বিভিন্ন ধরনের ধারালো অস্ত্র সংগ্রহ করে থাক।


ছিনতাইকারীরা স্বীকার করে যে, দুটি স্থানে তাদের সাথে ভিকটিমের হাতাহাতি হয়, যার কারণে সে দ্রুত তার ধারালো অস্ত্রটি ব্যবহার করে। ছিনতাই করার পরে তারা ৩টি মোবাইল ঘটনার প্রায় ২ ঘণ্টা পর রাকিবের নিকট হস্তান্তর করে। চোরাই মোবাইল বিক্রেতা রাকিব জানায়, মোবাইলটি হস্তান্তর করার পরে তিনি পলাশের হাতে রক্ত দেখতে পায়, যা সে ছিনতাই করার পর ধুয়ে ফেলে।


একই সাথে সে জানায়, পুরো চক্রটি এক ড্রাম পানি ব্যবহার করে গোপনে নিজেদের পরিষ্কার করে নেয়। রাকিবের দেওয়া তথ্য ছিনতাইকারী পলাশ স্বীকার করলেও সে জানান, হত্যার উদ্দেশ্যে তারা কাউকে সাধারণত আঘাত করে না। অন্যদিকে ছুরি ব্যবহারকারী রাশেদ অত্যন্ত চালাকির সাথে ঘটনাটি এড়িয়ে যায় এবং উক্ত সময়ে ঘটনাস্থলে তার অনুপস্থিতির কথা বলে।


তাদের প্রদত্ত জবানবন্দির প্রেক্ষিতে তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে ক্রাইম টাইম এবং তাদের উপস্থিতি যাচাই করা হয়। যাচাইয়ের পরে দেখা যায়, হত্যাকাণ্ড ঘটানোর আগে তারা মোটরসাইকেল ড্রাইভারসহ রাত ১১ টা ৩৭ মিনিট থেকে উক্ত স্থানে উপস্থিত ছিল এবং এরপর মাত্র ৩০ সেকেন্ড থেকে এক মিনিটের মধ্যেই তারা ঘটনাটি শেষ করে দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। উল্লেখ করা যেতে পারে, বিআরটির উড়ালসড়ক চালু হওয়ার পর থেকে প্রতি দিনরাত ২৪ ঘণ্টাই ছিনতাইয়ের ঘটনায় বহু হতাহতের ঘটনা ঘটেছে।

সাব্বির

×