ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ১৪ জুলাই ২০২৫, ২৯ আষাঢ় ১৪৩২

শহীদ সাজ্জাদ হোসেনের স্বপ্ন বাস্তবায়ন চান বাবা-মা

নিজস্ব সংবাদদাতা, সৈয়দপুর

প্রকাশিত: ১৬:২৬, ১৩ জুলাই ২০২৫

শহীদ সাজ্জাদ হোসেনের স্বপ্ন বাস্তবায়ন চান বাবা-মা

ছবি: জনকণ্ঠ

সৈয়দপুরের কৃতিসন্তান শহীদ সাজ্জাদ হোসেন। প্রায় এক বছর আগে হাসিনা পতন আন্দোলনের সম্মুখ সাড়িতে পুলিশের গুলিতে শহীদ হন। এতে সাজ্জাদের স্বপ্ন থমকে গেলেও সন্তানহারা অসহায় বাবা মায়ের আর্ত্বনাদ থামছেনা।  
পরিবারের সদস্যরা জানান, ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে বাধ্য হয়ে ফ্যাসিস্ট হাসিনা ভারতে পালিয়ে যায়। তারপরেও প্রধান সমন্বয়েক ডাকে মার্চ টু গণভবন কর্মসূচিতে যাবেন পরিশ্রমী তরুণ সাজ্জাদ হোসেন। প্রায় ৫০ হাজার মানুষের মিছিলের সামনের সাড়িতে যোগ দেয়। হাতে “স্বৈরাচারী নিপাত যাক, গণতন্ত্র মুক্তি পাক” ব্যানার নিয়ে স্লোগানে এগোতে থাকে মিছিল। তবে সেই দিন দেশী পুলিশের পোশাকে ভিনদেশি পুলিশেরা কোন কথা না শুনেই গুলি চালায় বিশাল মিছিলের ওপর। বর্ষার তপ্ত রোদে সাভার বাসস্ট্যান্ড মরিচিকাময় পিচঢালা কালো সড়কটি লাল রক্তের স্রোত বয়ে যায়।

তার সাথে ব্যানার ধরা দুই বন্ধুসহ দুই শতাধিক আন্দোলনকারী মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। ছত্রভঙ্গ হয় মিছিলটি। মুহূর্তেই ওই সড়কটিতে পরিবারের স্বজনদের আর্ত্বনাদে ভারী হয় সাভার মডেল থানা সংলগ্ন সড়কটির আকাশ বাতাস। কেউ আহত, কেউ বা মৃতদেহ খুঁজে নিয়ে ছুটে যায় এনাম হাসপাতালে। তবে শেষ রক্ষা হয়নি। পরদিন (৬ আগস্ট, বেলা ১২টায়} চিকিৎসাধীন অবস্থায় শহীদ হন সাজ্জাদ হোসেন। 


আজ সাজ্জাদ নেই প্রায় এক বছর। তার কথা স্মরণ হলেই যে কোন মিটিং মিছিল কিংবা আলোচনায় ডুকরে কাঁদেন বাবা আলমগীর হোসেন। তার অপূরণ স্বপ্ন নিয়ে বিড়বিড় করে কথা বলেন, সে বেচে থাকলে আজ অন্তত অন্যের বাড়িতে ভাড়ায় থাকতে হত না। এক টুকরো হলেও জমি কিনত। কারণ সে ছিল পরিশ্রমী। বাবা মায়ের বড় সন্তান হিসাবে সব সময় দায়িত্ব পালন করত। গ্রামের বাড়ি শহরের পৌর ১০ নং ওয়ার্ডের পশ্চিম পাটোয়ারী পাড়ায়। ওই এলাকার কুচক্রী মহলেরা একত্রিত হয়ে তাদের বাড়িটি মসজিদের জায়গায় বলে লুটপাট, মারডাংয়ে উচ্ছেদ করে। অবশেষে মনকষ্টো নিয়ে আলমগীর হোসেন পুরো পরিবার নিয়ে চলে যান সাভারে। সেখানে সাজ্জাদ গার্মেন্টেসে কাজের পাশাপাশি পড়ালেখা চালিয়ে যায়া। তার উপার্জিত অর্থে তিন বোনের মধ্যে দুই বোনের পড়ালেখার পর বিয়ে দেন। সাথে নিজেও সোনারগাঁও বিশ্ববিদ্যালয়ে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সপ্তম সেমিস্টারে পড়ালেখা করতেন। তার কর্মদক্ষতায় মাসে প্রায় ৪০ হাজার টাকা আয় করতেন। স্বপ্ন পূরণের পথেই হাঁটছিল সাজ্জাদ। ভূমিহীন বাবা মাকে বাড়ি উপহার দিতে  এ জনপদে জমি কেনার বায়নাও করেন। ধর্মভীরু জীবনে মসজিদ, মাদ্রাসা করার স্বপ্ন দেখতেন। তবে সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন হয়নি।


শহীদ সাজ্জাদের বাবা মো: আলমগীর হোসেন বলেন, আমার কোনো নিজস্ব জমি নেই, সৈয়দপুর চৌমহনী এয়ারপোর্ট এলাকায় ২ হাজার টাকা ভাড়া বাসায় থাকি। দুই মেয়ের বিয়ে দিয়েছি, এখনো কিছু দিতে পারিনি। ছোট মেয়ে একটি স্কুলে দশম শ্রেণিতে পড়ছে। আজ ছেলে বেচে থাকলে জীবনের প্রত্যাশা পূরণ হত।
শহীদ সাজ্জাদের মা সাহিদা বেগম বলেন, সে ছিলো একমাত্র অবলম্বন। সে স্বপ্ন দেখতো আমাদেরও নিজের একটি ঘর হবে, থাকবে একটি মাদ্রাসা ও মসজিদ। এখন আমরা একেবারে অসহায়।
তবে জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশন থেকে পেয়েছেন ৫ লাখ টাকা, সেখান থেকে ৩ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে তার স্ত্রীকে। মোহরানা পরিশোধ হিসাবে। পরে আরও ১০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্রের মধ্যে সাড়ে ৭ লাখ তার পরিবার ও আড়াই লাখ তার স্ত্রীর নামে দেওয়া হয়। 
এছাড়া জামায়াতে ইসলামির পক্ষ থেকে ১ লাখ, বিএনপির কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় পর্যায় থেকে ১০ হাজার টাকা, বাংলাদেশ আর্মি ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি থেকে ৫০ হাজার টাকা সহায়তা দেওয়া হয় বলে জানায় তার পরিবার। 
বর্তমানে কাজের জন্য শহীদ সাজ্জাদের বাবাকে সৈয়দপুর পৌর প্রশাসক ও ইউএনও নূর-ই-আলম সিদ্দিকী ওয়াক্তিয়া মসজিদের ইমাম হিসেবে চাকরি দেন। শহীদ সাজ্জাদ হোসেনকে কবরস্থ করা শহরের হাতীখানায়। আদালতের নির্দেশে শহীদ সাজ্জাদেও মরদেহ উত্তোলনের উদ্যোগ নেওয়া হলেও, পরিবার সেই উদ্যোগে বাধা দেয়। 
আর জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উদ্যোগে ৩ জুলাই ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রার তৃতীয় দিন শুরু হয় সাজ্জাদ হোসেনের কবর জিয়ারতের মাধ্যমে। সে সময় হাতীখানা কবরস্থানে অনুষ্ঠিত এই কর্মসূচিতে দোয়া পাঠ করান সাজ্জাদের বাবা আলমগীর হোসেন।
এ সময় এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ ও যুগ্ম মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) আবু সায়েদ লিওনসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। কবর জিয়ারত শেষে নেতারা শহীদ সাজ্জাদের পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ও তাদের খোঁজ-খবর নেন।

সাব্বির

×