ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৫ জুলাই ২০২৫, ৩১ আষাঢ় ১৪৩২

গোবিন্দগঞ্জে ইপিজেড বাস্তবায়নের দাবিতে মহাসড়ক অবরোধে এবার যোগ দিলেন আদিবাসী-সাঁওতালরাও

নিজস্ব সংবাদদাতা, গোবিন্দগঞ্জ, গাইবান্ধা

প্রকাশিত: ১৯:৩১, ১০ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ১৯:৩২, ১০ জুলাই ২০২৫

গোবিন্দগঞ্জে ইপিজেড বাস্তবায়নের দাবিতে মহাসড়ক অবরোধে এবার যোগ দিলেন আদিবাসী-সাঁওতালরাও

গোবিন্দগঞ্জে রংপুর চিনিকলের জমিতে ইপিজেড দ্রুত বাস্তবায়নের দাবিতে স্থানীয় ছাত্র জনতার আন্দোলনের সাথে এবার যোগ দিলেন আদিবাসীরাও। উপজেলার সমতলে বসবাসরত আদিবাসী পরিষদের উদ্যোগে গতকাল বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) দুপুরে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা শহরের চারমাথা এলাকায় দুই ঘন্টাব্যাপী ঢাকা-রংপুর জাতীয় মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন তারা। এই অবরোধের ফলে মহাসড়কের উভয়পাশে তিন-চার কিলোমিটার এলাকাজুড়ে দুরপাল্লার বিপুলসংখ্যক যানবাহন আটকে থাকে। 
খবর পেয়ে গাইবান্ধার জেলা প্রশাসক চৌধুরী মোয়াজ্জম আহমদ ঘটনাস্থলে গিয়ে ইপিজেড বাস্তবায়নের আশ্বাস এবং বিষয়টি সরকারকে জানানোর প্রতিশ্রুতি দিলে অবরোধ তুলে নেওয়া হয়। এরপর বিকেলে সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কাছে দেয়া স্মারকলিপি উপজেলা নির্বাহী নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) হাতে তুলে দেয়া হয়।এই কর্মসূচি চলাকালে বক্তব্য দেন, গোবিন্দগঞ্জ আদিবাসী পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মিখাইল বেসোরা মাইকেল, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সলেমোন হাজদা, সদস্য রিনা মুর্মু, আদিবাসী নেত্রী এমিলি হেমব্রম। এই আন্দোলনের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে বক্তব্য রাখেন, গোবিন্দগঞ্জ নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক মতিন মোল্লা, অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য সার্জেন্ট আবু রায়হান রাশেদ, সার্জেন্ট আব্দুর রাজ্জাক, সার্জেন্ট আছলাম, কর্পোরাল মুস্তাক, মাকসুদ রহমান, শরিফ শুভ, আবু তাহের, শরিফ, নিসকাত, রাশেদ, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের মধ্যে মুফতি তৌহিদুল ইসলাম তুহীন, ডা. জাহাঙ্গীর আলম ডাবলু, আইয়ুব হোসেন, আলী আজগর আরজ প্রমুখ।

বক্তারা চিনিকলের জমিতে ইপিজেড বাস্তবায়নের দাবি জানিয়ে বলেন, শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার মহিমাগঞ্জস্থ রংপুর চিনিকলের জমিতে ইপিজেড স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। ইপিজেডের নাম দেওয়া হয় 'রংপুর ইপিজেড'। বাংলাদেশ রপ্তানী প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল (বেপজা) কর্তৃপক্ষকে ইপিজেড বাস্তবায়নের দায়িত্ব  দেওয়া হয়। চিনিকলের মালিকানাধীন ১৮৪২ একর জমির মধ্যে ৪৫০ একর জমি বেপজাকে বুঝিয়ে দেয় চিনিকল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু স্থানীয় মুসলিম সম্প্রদায়ের কয়েকজন চিহ্নিত ভূমিদস্যু অন্যান্য জেলা থেকে জমির ভাগ দেয়ার কথা বলে কিছু সাঁওতাল লোকজনকে এনে তীর-ধনুক ও নানা দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে খামারের জমি দখল নেয়। এই জমি বর্তমানে সম্পূর্ললূপে ভোগ করছে ওই ভূমিদস্যুরা। তারা ইপিজেডের বিরোধিতা করার জন্য জেলা পর্যায়ের কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তিকে বিপুল অংকের টাকার বিনিময়ে ব্যবহার করছে। অথচ এখানে ইপিজেড হলে দুই লক্ষাধিক মানুষের কর্মসংস্থান হবে। সেখানে সাঁওতালরা অগ্রাধিকার পাবে। কিন্তু একটি মহল এর বিরোধিতার কারণে ইপিজেড বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া ঝুলে আছে। 

প্রসঙ্গত গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার সাহেবগঞ্জ এলাকায় রংপুর চিনিকলের ইক্ষু খামারের আওতায় ১ হাজার ৮৪২ একর জমি আছে। এই জমিতে উৎপাদিত আখ রংপুর চিনিকলে মাড়াই হতো। চিনিকলে আখ মাড়াই বন্ধ হলে সাঁওতালরা দফায় দফায় এই জমি দখল করেন। ২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর চিনিকল কর্তৃপক্ষ ও পুলিশ এসব জমিতে উচ্ছেদের উদ্দেশ্যে গেলে সাঁওতালদের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। এ পরিস্থিতিতে সরকার শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন রংপুর চিনিকলের জমিতে ইপিজেড স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়।

 

রাজু

×