ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৬ জুলাই ২০২৫, ১ শ্রাবণ ১৪৩২

পাবনায় নদী ভাঙনে বিলীনের ‍পথে ফেরিঘাট, আতঙ্কে তীরের বাসিন্দারাও

রাকিবুল হাসান, পাবনা

প্রকাশিত: ১০:২৯, ১০ জুলাই ২০২৫

পাবনায় নদী ভাঙনে বিলীনের ‍পথে ফেরিঘাট, আতঙ্কে তীরের বাসিন্দারাও

ছবি: দৈনিক জনকণ্ঠ

উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে হু হু করে বাড়ছে পাবনার পদ্মা নদীর পানি প্রবাহ। অনেক জায়গায় পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পাড় ভেঙে বিলীন হচ্ছে নদীগর্ভে। এরই মধ্যে  অবহেলা আর অযত্নে থাকা পাবনার নাজিরগঞ্জ ফেরিঘাট তীব্র ভাঙনের কবলে পড়েছে। এতে ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে ফেরিঘাটটি। যেকোনো মুহুর্তে ঘাটই নদী গর্ভে বিলীন হতে পারে। এছাড়াও তীব্র ভাঙনের ফলে নদীপাড়ের বাসিন্দাদের মধ্যেও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে, হমকিতে পড়েছে এই এলাকার মানুষের বসতভিটা। নির্ঘুম রাত কাটাতে হচ্ছে তাদের।

সরেজমিন দেখা, ফেরিঘাটের পুর্ব পাশের নিচ থেকে বড় বড় মাটির স্তুপ ভেঙে ভেঙে নদীতে পড়ছে। ঘাট থেকে কয়েক কিলোমিটার জুড়ে ভাঙন চলছে। ফেরিঘাটে মূল পল্টুন থেকে কয়েক হাত দূর থেকে এই ভাঙন শুরু হয়েছে। নদীর তীরের কয়েক গজ দূরে নদী পারের বাসিন্দাদের মাথা গোঁজার ঠাঁই।  যেভাবে ভাঙতে তাতে অল্পদিনের মধ্যে এসব বাড়িঘর হারাতে হতে পারে বাসিন্দাদের। আতঙ্কে দিনরাত পার করতে হচ্ছে আশপাশের কয়েক কিলোমিটারের নদী তীরের বাসিন্দাদের। অনেকে আতঙ্কে বাড়িঘর ছেড়ে অন্যত্র যাওয়ার চিন্তাভাবনা করছেন। তবে রাতে কয়েকটি বাসিন্দা রাতে ঘুমান না বলে জানা গেছে। 

নদীপারের বাসিন্দারা অভিযোগ করে বলেন, ‘নদীর পশ্চিম পাশে বড় বড় ব্লক সিস্টেম দিয়ে কোটি কোটি টাকা খরচ করে নদীর তীর রক্ষা করা হয়েছে। অথচ পুর্বপাশে কোনো ধরনের ব্লকের কারবার নেই। অবহেলার মধ্যে রাখা হয়েছে। কয়েক বছর ধরেই ভাঙছে, কিন্তু এবারের ভাঙনটা তীব্র হচ্ছে। আর কয়েকদিন গেলে তো আমাদের ঘর-বাড়ি নদীতে চলে যাবে। তারপরও কেউ দেখার নেই। আমরা মাথা গোঁজার ঠাঁই টুকুও হারাতে যাচ্ছি। আমরা কিছুই চাই না শুধু নদীর তীর রক্ষা চাই। চরম আতঙ্কে আছি কখন যেন ঘর-বাড়ি নদীতে চলে যায়।’প্রভাবশালীরা যত্রতত্র বালু উত্তোলনের জন্যই এবার বেশি ভাঙন।  বালু উত্তোলন করে বড় বড় পাহার বানিয়ে রাখলেও প্রশাসনিক কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয় না।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শুষ্ক মৌসুমে নদী শাসন না করা এবং নদী রক্ষায় অন্যান্য ব্যবস্থা না নেয়ার ফলেই এই ভাঙন দেখা দিয়েছে। এছাড়াও ঘাটের দুই পাশের কয়েক কিলোমিটারের মধ্যে একাধিক অবৈধ ও যত্রতত্র বালু উত্তোলন করা হয়। অপরিকল্পিত এই বালু উত্তোলনের কারণেও এই ভাঙন হচ্ছে। এদের অবৈধ বালু উত্তোলন কেউই ঠেকাতে পারে না বলে জানান।

আশিকুর রহমান নামের একজন বলেন, আমরা ছোটবেলা থেকে দেখতেছি এখানকার মানুষ চরম অবহেলার শিকার। বছরের পর বছর নদী ভাঙন হলেও টেকসই নদী তীর রক্ষার কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। আর অবৈধ বালু উত্তোলনের জন্য এসব ভাঙন বেশি হচ্ছে। এই অঞ্চল থেকে এসব যত্রতত্র বালু উত্তোলন বন্ধ না হলে ব্লক দিয়েও কোন লাভ হবে না।

খুরশিদ আলম নামের আরেকজন বলেন, দিনে তো কোনমতো থাকা যায়। কিন্তু সন্ধা হলেই আতঙ্কে থাকতে হয়। কখন যেন আমাদের বাড়িঘর তলিয়ে যায়। এই চিন্তায় রাতে ঘুমাতে পারি না। একজনকে ঘুমাতে হয়। আরেকজনকে জেগে থাকতে হয়। দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রশাসনকে অনুরোধ করেন তিনি।

ঘাটের এই অবস্থার জন্য ইউএনও ও ডিসিকে দায়ী করলেন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) নাজিরগঞ্জ ঘাটের পোর্ট অফিসার তোফাজ্জল হোসেন। তিনি জানান, চুক্তি অনুযায়ী ২০২৩ সালে আমাদেরকে ঘাটের জমি বুঝিয়ে দেয়ার কথা থাকলেও এখনো ইউএনও ও ডিসি সাহেব আমাদের সেটা দেননি। এজন্য আমরা ঘাটের কোনো উন্নয়ন করতে পারছি না। এভাবে আর কিছুদিন গেলে (ভাঙন হলে) তো আমার ঘাটই ভেঙে যাবে। বাধ্য হয়ে আমি আমার কোটি টাকার পল্টন সরিয়ে নিতে বাধ্য হবো।’

সুজানগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মীর রাশেদুজ্জামান জানান, ‘স্থানীয়দের কিছু আপত্তির কারণে তাদেরকে (বিআইডব্লিউটিএ) জমি বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি। আর নদী ভাঙনের বিষয়ে আমরা সরেজিমন পরিদর্শন করেছি। এটা নিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড কাজ করছে। আমরা ইতোধ্যেই জরুরি ভিত্তিতে কাজ করতে উদ্যোগ নিয়েছি।’

পাবনার বেড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উপরিভাগীয় প্রকৌশলী হায়দার আলী বলেন, ভাওয়াল কবলিত এলাকা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা পরিদর্শন করেছেন। ভাঙন রোধে দ্রুতই ব্যবস্থা নেয়া হবে।
 

নোভা

×