
তিন দফা দাবিতে অবস্থান নেওয়া চাকরিচ্যুত বিডিআর সদস্যদের ওপর জলকামান ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে পুলিশ
হ্নচাকরিতে পুনর্বহালসহ তিন দফা দাবিতে যমুনা অভিমুখে পদযাত্রা করেন চাকরিচ্যুত বিডিআর সদস্যরা। সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে থেকে পদযাত্রা শুরু করেন তারা। পদযাত্রা কাকরাইল মসজিদ মোড়ে পৌঁছালে পুলিশের বাধার মুখে পড়ে। এতে আন্দোলনকারীরা সেখানে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন। একপর্যায়ে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হন। পুলিশ আন্দোলনকারীদের বারবার সরে যেতে বললেও তারা সাড়া না দেওয়ায় দুপুর সোয়া ১২টার দিকে পুলিশ জলকামান থেকে পানি ছোড়ে এবং একাধিক সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে।
এতে পুলিশ ও আন্দোলনকারীদের উভয় পক্ষের কয়েকজন আহত হন। আন্দোলনকারীদের মধ্যে বেশ কয়েকজনকে ঘটনাস্থল থেকে আটকও করা হয়। পরে পুলিশ ধীরে ধীরে আন্দোলনকারীদের কাকরাইল থেকে সরিয়ে মৎস্যভবনের দিকে ঠেলে দেয়। এক পর্যায়ে কাকরাইল এলাকা ত্যাগ করে বিভিন্ন পথে বিভক্ত হয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গিয়ে অবস্থান নেন আন্দোলনকারীরা।
শাহবাগ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) খালিদ মনসুর বলেন, সকালে চাকরিচ্যুত বিডিআর সদস্যরা জাদুঘরের সামনে ছিল, পরে কাকরাইল মোড়ে অবস্থান নেয়। সেখান থেকে সরিয়ে দেওয়ার পর তারা শহীদ মিনারে অবস্থান নিয়েছে।
দুই সপ্তাহ ধরে শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন চাকরিচ্যুত বিডিআর সদস্য ও তাদের পরিবারের সদস্যরা। সোমবার সকালেও শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে জড়ো হন তারা। দাবি পূরণের জন্য বেলা ১১টা পর্যন্ত সরকারকে আলটিমেটাম দেন তারা। দাবি মেনে না নেওয়ায় বেলা সাড়ে ১১টায় শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে থেকে যমুনার অভিমুখে পদযাত্রা শুরু হয়। আগ থেকে কাকরাইল মোড়ে ব্যারিকেড দিয়ে রাখে অসংখ্য পুলিশ সদস্য।
মোতায়েন করে রাখা হয় জলকামান। পরে আন্দোলনকারীরা পুলিশি ব্যারিকেড ভেঙে কিছুটা ভেতরে ঢুকে যায়। এ সময় পুলিশ তাদের ঠেলে কাকরাইল মোড়ে নিয়ে আসে। এতে পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ বাধে। আন্দোলনকারীদের সরাতে পুলিশ জলকামান থেকে পানি ছোড়ে। কিন্তু এতেও সরছিলেন না আন্দোলনকারীরা।
চাকরিচ্যুত বিডিআর সদস্যরা দাবি করেছেন, তারা দীর্ঘদিন ধরে অবিচারের শিকার হয়ে আসছেন। ২০০৯ সালের পিলখানা হত্যাকা-ের ঘটনার পর অনেকেই চাকরি হারিয়েছেন এবং পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। তাদের তিনটি প্রধান দাবি হলো-চাকরিচ্যুত সদস্যদের ক্ষতিপূরণসহ পুনর্বহাল করা, পিলখানা হত্যাকা-ের তদন্ত কমিশনের বিতর্কিত ধারাগুলো বাতিল এবং বিডিআর নাম পুনরায় চালু করা ও কারাবন্দি বিডিআর সদস্যদের মুক্তি দেওয়া।
হ্নএ সময় ডিএমপির রমনা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মাসুদ আলম আন্দোলনকারীদের প্রতিনিধিদের যমুনায় পাঠানোর আহ্বান জানান। পাশাপাশি আন্দোলনকারীদের কাকরাইল মসজিদ থেকে সরে যেতে ১০ মিনিটের আলটিমেটাম দেন। কিন্তু আন্দোলনকারীরা তাতে সাড়া না দিয়ে একই জায়গায় আবস্থানের ঘোষণা দিলে পুলিশ বল প্রয়োগ শুরু করে। পুলিশ জলকামান থেকে পানি ছোড়ে এবং একাধিক সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করলে আন্দোলনকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায় এবং বিভক্ত হয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গিয়ে অবস্থান নেন।
আন্দোলন ঘিরে রাজধানীতে আগ থেকে বাড়ানো হয়েছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা। শহীদ মিনার এলাকায়ও অতিরিক্ত আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েন রয়েছে। বিষয়টি শান্তিপূর্ণভাবে সমাধানের লক্ষ্যে ঊর্ধ্বতন মহলে আলোচনাও চলছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র।
এদিকে কাকরাইল মোড় অবরোধের ফলে ওই সড়ক দিয়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। দেখা দেয় আশপাশের সড়কে তীব্র যানজট। বিশেষ করে পল্টন, মগবাজার-মালিবাগ, প্রেসক্লাব, শাহবাগ, বাংলামটর এলাকায় যানজটের সৃষ্টি হয়। ব্যক্তিগত গাড়ি ও অন্যান্য যানবাহন ঘুরে অন্য রুট দিয়ে গন্তব্যে পৌঁছায়। কয়েক ঘণ্টা এভাবে যানজটের পর বেলা ২টার দিকে যান চলাচল কিছুটা স্বাভাবিক হয়।
রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মাসুদ আলম বলেন, যমুনা এলাকায় সব ধরনের সভা-সমাবেশ, মিছিল নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এরপরও চাকরিচ্যুত একদল বিডিআর সদস্য এই এলাকায় জড়ো হওয়ার চেষ্টা করেন। তাদের সরে যেতে বললেও যাচ্ছিল না। তাদের প্রতিনিধি যমুনায় পাঠানোর প্রস্তাবেও তারা রাজি হচ্ছিলেন না। গুরুত্বপূর্ণ সড়কটি অবরোধ করে বিক্ষোভ করছিল, জনদুর্ভোগের সৃষ্টি করছিল। এক পর্যায়ে পুলিশ বিভিন্ন পন্থায় সেখান থেকে আন্দোলনকারীদের সরিয়ে দেয়।
প্যানেল হু