
ছবি: জনকণ্ঠ
কুয়াকাটায় আসা পর্যটকরা একটি মধ্যস্বত্বভোগী চক্রের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছেন। বিশেষ করে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পরিবহনযোগে আসা পর্যটকরা এই সিন্ডিকেটের টার্গেটে পরিণত হচ্ছেন। এ চক্রের অধিকাংশই অটোচালক, আবার কিছু নির্দিষ্ট হোটেলের নিযুক্ত দালালও রয়েছে। তারা সবসময় বাসস্ট্যান্ডে অবস্থান করে, হাতে থাকে নিযুক্ত হোটেলের ভিজিটিং কার্ড। কেউ কেউ আলীপুর টোলপ্লাজায় গিয়ে অবস্থান করে। সেখান থেকে বাসে উঠে টার্গেট করে পর্যটকদের।
বাস কুয়াকাটা বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছালে ওই চক্র পর্যটকের ব্যাগসহ মালামাল নিয়ে টানাহেঁচড়া শুরু করে। এমনকি পর্যটকদের চারদিক থেকে ঘিরে ধরা হয়। তারা কোনোভাবেই নিজেদের পছন্দসই হোটেল বেছে নিতে পারেন না; নিয়ে যাওয়া হয় দালালদের নির্দিষ্ট হোটেলে। টার্গেট করা হোটেলে পর্যটক পৌঁছাতে পারলেই নির্ধারিত ভাড়ার একটি অংশ কমিশন হিসেবে পায় এ মধ্যস্বত্বভোগী চক্রটি। বঞ্চিত হন কুয়াকাটায় ভ্রমণের আসল উদ্দেশ্য থেকে। তিক্ত অভিজ্ঞতা নিয়ে ত্যাগ করেন কুয়াকাটা।
এই দালাল-মধ্যস্বত্বভোগী চক্রটি বাসস্ট্যান্ড থেকে শুরু করে কুয়াকাটা চৌরাস্তা, ঘাটলা জামে মসজিদসহ আশপাশ এলাকায় অবস্থান করে। নির্দিষ্ট হোটেলের কথা পর্যটকরা বললেও অটোবাইক কিংবা ভ্যানে তুলে দালালদের হোটেলে নিয়ে গিয়ে ঝামেলায় ফেলে দেয়। পর্যটকরা এজন্য নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়েন। অনেকেই প্রতারণার শিকার হয়েছেন বলে মনে করেন এবং স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন না।
পর্যটক রিফাত হাসান জানান, তিনি বাসস্ট্যান্ডে নামতেই পাঁচ-ছয়টি হোটেলের কার্ড হাতে নিয়ে তাকে ঘিরে ধরা হয়। অটোচালকরা অনুমতি ছাড়াই ব্যাগ নিয়ে তাদের বাহনে তোলার চেষ্টা করে। এতে তিনি প্রথমে ভয় পেয়ে যান। এ চক্রের কাছে নিজেকে নিরাপদ মনে করতে পারেননি। পরে পছন্দের হোটেল বেছে নিতে চাইলে তাকে রাস্তার মাঝখানে দাঁড় করিয়ে নানা ধরনের প্রলোভন দেখানো হয়। এটি অত্যন্ত বিব্রতকর। তিনি এই দালাল চক্র দমনে স্থানীয় প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
আবাসিক হোটেল ম্যানেজারদের একটি অংশ এই অবস্থার প্রতিবাদ করে আসছেন। কিন্তু কিছু নির্দিষ্ট হোটেল মালিক তাদের অতিথি পেলে দালালদের নির্দিষ্ট অংকের টাকা দেন। এমনকি কাউকে বছরে নির্দিষ্ট সময় বোনাস দেওয়ার অভিযোগও পাওয়া গেছে। এই সিন্ডিকেটের কারণে হোটেলের নির্ধারিত ডিসকাউন্ট থেকেও বঞ্চিত হন অনেক পর্যটক।
কুয়াকাটা হোটেল-মোটেল এমপ্লয়িজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ইব্রাহিম ওয়াহিদ জানান, হোটেল ব্যবসায়ীরাও কিছু দালালের কাছে জিম্মি হয়ে গেছেন। এদের কারণে পর্যটকরা নিজেদের পছন্দমতো হোটেল বেছে নিতে পারেন না, ভাড়া যাচাই করতে পারেন না। পছন্দের হোটেল খুঁজতে গেলেই দালালচক্র ঘিরে ধরে। ফলে হোটেল মালিকদের দেয়া ডিসকাউন্ট পর্যন্ত পান না।
কুয়াকাটা অটোচালক সমিতির নেতা আব্দুর রহমান গণমাধ্যমকে জানান, অভিযোগটি তিনি বিভিন্ন সময় শুনেছেন। হোটেলে অতিথি পৌঁছে দিলে কমিশন দেওয়ার রেওয়াজ হোটেল মালিকরাই চালু করেছেন। তবে পর্যটকদের যদি কেউ নির্দিষ্ট হোটেলে যেতে বাধ্য করে, এমন অভিযোগ পেলে তিনি অবশ্যই ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান।
কুয়াকাটা বীচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সদস্যসচিব ও কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম বলেন, হোটেল মার্কেটিংয়ের নামে পর্যটকদের কোনোভাবেই হয়রানি করা যাবে না। ডিসকাউন্ট অফার থাকতে পারে, তবে সেটি স্পষ্টভাবে প্রচার করতে হবে। হয়রানি-প্রতারণা বন্ধে পর্যটকদের সেবা নিশ্চিত করতে অটোবাইকসহ অন্যান্য যানবাহনের চালকদের নিয়ে সভা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানান তিনি।
শহীদ