ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১০ জুলাই ২০২৫, ২৬ আষাঢ় ১৪৩২

সৈয়দপুরে মেলায় হাউজি ও জুয়া

নিজস্ব সংবাদদাতা, সৈয়দপুর, নীলফামারী

প্রকাশিত: ১৯:০৮, ৭ জুলাই ২০২৫

সৈয়দপুরে মেলায় হাউজি ও জুয়া

ছবি: সংগৃহীত

ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মাসে সৈয়দপুরে ক্ষুদ্র কুটির শিল্প মেলায় হাউজি ও র‌্যাফেল ড্র’র নামে জমজমাট জুয়া চলছে। এই জুয়া বন্ধের প্রতিবাদে সরব হয়ে উঠছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এম. কে. আজম আশরাফি নামে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত নামের সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ্যে প্রতিবাদ জানিয়েছেন।

জানা যায়, শহরের বিমানবন্দর উঁচু কলোনি এলাকায় গত ১ জুলাই থেকে ক্ষুদ্র কুটির শিল্প মেলা শুরু হয়। মেলায় আকর্ষণ বাড়াতে চলচ্চিত্র জগতের অভিনেত্রী দিঘীর মাধ্যমে মেলার উদ্বোধন করা হয়। এ মেলায় বিভিন্ন পণ্যের পসরা থাকলেও প্রতিদিন র‌্যাফেল ড্র’র নামে ভাগ্যনির্ধারিত জুয়া পরিচালিত হচ্ছে।

মেলায় কেনাকাটার আহ্বান জানিয়ে র‌্যাফেল ড্র প্রচার করা হচ্ছে। ৮টি উপজেলায় মাইকিং করে প্রচার চালানো হচ্ছে। মোটরসাইকেলসহ লোভনীয় সব পুরস্কার অফার দিয়ে লটারিতে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়। পুরস্কারের লোভে পড়ে প্রবেশমূল্যের টিকিট কিনতে হুমড়ি খেয়ে পড়ছে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে নিম্ন আয়ের মানুষজন। প্রত্যেকে ৫ থেকে ১০টি, এমনকি ২০-৩০টি পর্যন্ত টিকিট কিনছে।

এছাড়া রাতে চালানো হচ্ছে হাউজি। বিশেষ অফারে রাখা হচ্ছে ১ লাখ টাকা পুরস্কার। প্রতিদিন প্রায় ৩-৪ শতাধিক মানুষ হাউজি খেলায় অংশ নিচ্ছে। এতে হাউজি থেকে প্রতিদিন প্রায় অর্ধকোটি টাকা লুটে নিচ্ছে মেলা কর্তৃপক্ষ।

এই মেলায় জুয়ার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কেউ প্রতিবাদ না করলেও অধিকাংশ মানুষ সরব হচ্ছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এম. কে. আজম আশরাফি নামের একটি আইডি থেকে লেখা হয়েছে, “অবিলম্বে মেলায় হাউজি বন্ধ না করলে মাঠে নামতে বাধ্য হবে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত।”

‘সৈয়দপুর নিউজ টুয়েন্টিফোর ডটনেট’ নামে একটি ফেসবুক পেজে লেখা হয়, “১.৫ কোটি টাকার বিনিময়ে ১ মাসের জন্য মেলা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে চুক্তি করেছে হাউজি (জুয়া) কমিটি।” ওই পেজে আরও পোস্টে সতর্ক করে বলা হয়, “সৈয়দপুরবাসী সাবধান। সৈয়দপুরে যে কুটির শিল্প বাণিজ্য মেলা বসেছে, গত ৬৬ দিন যাবৎ কুমিল্লায় এই মেলা ছিল। পুরো কুমিল্লার মানুষকে ধ্বংস করে দিয়েছে।”

সৈয়দপুর সাংগঠনিক জেলা ছাত্রদলের সাবেক নেতা মোরশেদুল আলম রঞ্জু বলেন, “এভাবে একটি শ্রমিক শহরে মেলার নামে প্রকাশ্যে জুয়া চলতে দেওয়া যায় না। এর প্রভাবে অনেক পরিবার নিঃস্ব হচ্ছে।” একই কথা বলেন সৈয়দপুর উপজেলা সংলগ্ন একটি আইটি দোকানের মালিক মো. কামরুজ্জামান। তিনি বলেন, “এই মেলায় আমরা ৪ বন্ধু নিয়মিত শুধু খেলার আকর্ষণে যাই। সেখানে প্রতিদিন ১০ হাজার টাকা হারার পর চলে আসি।”

জানা যায়, এ মেলায় প্রভাবশালীদের ম্যানেজ করে লটারি বা র‌্যাফেল ড্র ও হাউজি চালাচ্ছে মেলা কর্তৃপক্ষ। আর এই খেলায় সর্বস্বান্ত হচ্ছে উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন উপজেলার সাধারণ মানুষজন। এতে কয়েক দিনের ব্যবধানে প্রায় ৩ কোটি টাকা লোপাট করা হয়েছে। মেলায় বেপরোয়া জুয়ার বিষয়টি আলোচিত হওয়ায় স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। সৈয়দপুরের ব্যবসায়ী মহলসহ রাজনৈতিক অঙ্গনেও মেলায় জুয়া খেলা বন্ধের দাবি উঠেছে।

এ বিষয়ে সৈয়দপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নুর-ই-আলম সিদ্দিকী বলেন, “এই মেলায় আমাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।”

আসিফ

×