
চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার সাতানী গ্রামের যুবক মো. ফরহাদ জুয়েল (২৭) নিখোঁজের ৪৮ ঘণ্টা পর মেঘনা নদী থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। ঘটনাটি ঘিরে এলাকাজুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। মোবাইল ফোনে মুক্তিপণ চাওয়া, পরস্পরবিরোধী বক্তব্য ও একাধিক ব্যক্তির সংশ্লিষ্টতা ঘটনাটিকে ঘনীভূত করেছে রহস্যময় এক হত্যাকাণ্ডে।
নিহত জুয়েল কলাকান্দা ইউনিয়নের সাতানী গ্রামের মো. আবুল হাশেমের ছেলে। তার স্ত্রী ও চার বছরের একমাত্র সন্তান আবু সুফিয়ান রয়েছে।
পরিবার সূত্রে জানা যায়, গত ৪ জুলাই শুক্রবার সকালবেলা জুয়েল বাড়ি থেকে বের হয়ে এখলাসপুর বকুলতলা এলাকায় যান। তার মা সুফিয়া বেগম জানান, “আমার ছেলে শাহ আলম মেম্বারের কাছে গিয়েছিল। এরপর থেকে আর কোনো খোঁজ নেই।”
তবে এখলাসপুর ইউনিয়নের ইউপি সদস্য শাহ আলম দাবি করেন, “আমার সঙ্গে জুয়েলের কোনো সাক্ষাৎ হয়নি।”
সেদিন রাত ৮টার দিকে হাসিমপুর গ্রামের রুহুল আমিনের সঙ্গে নয়ানগর বটতলায় দেখা হয় জুয়েলের। রুহুল জানান, “জুয়েল কথা বলবে বললে আমি বলি—চলো বাজারে গিয়ে চা খেতে খেতে কথা বলি। কিন্তু পথে এখলাসপুরের নুরু মিয়া রাজার সঙ্গে দেখা হলে জুয়েল থেমে যায়, আমি একাই বাজারে চলে যাই। জুয়েল আর আসেনি।”
নুরু মিয়া রাজা বলেন, “জুয়েল বলেছে সে মনির হোসেন গাজীর ছেলে সজিবের কাছে বালুর টাকা নিতে যাচ্ছে।”
তবে সজিব দাবি করেন, “আমার সঙ্গে জুয়েলের কোনো আর্থিক লেনদেন ছিল না, আর ওই দিন তার সঙ্গে দেখা হয়নি।”
পরদিন ভোরে পাঁচানী স্কুলের পাশে রাস্তার ধারে পড়ে থাকতে দেখা যায় জুয়েলের ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটি। একইদিন সকালে জুয়েলের বড় ভাই সোহেলের মোবাইলে একটি অজ্ঞাত নম্বর থেকে ফোন দিয়ে ৩০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়।
সবকিছুর অবসান ঘটে ৬ জুলাই দুপুরে। চাঁদপুর সদরের নীলকমল এলাকায় মেঘনা নদীতে একটি মরদেহ দেখতে পান স্থানীয়রা। খবর পেয়ে নীলকমল নৌ-পুলিশ ফাঁড়ি মরদেহটি উদ্ধার করে, যা পরে নিখোঁজ ফরহাদ জুয়েলের বলে শনাক্ত করা হয়।
ঘটনার পর সাতানী গ্রামের মৃত আবুল কাশেমের ছেলে নজরুল, জাহিদুল ও হযরত আলী প্রধানের ছেলে মনির হোসেনকে মতলব উত্তর থানা পুলিশ প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে আসে।
মতলব উত্তর থানার ওসি মো. রবিউল হক বলেন, “মরদেহটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য চাঁদপুর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে কিছু অসঙ্গতি পাওয়া গেছে। কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। হত্যাকাণ্ডের দিকটিই আমরা গুরুত্ব দিয়ে দেখছি।”
নিহতের পরিবার এই ঘটনাকে ‘পরিকল্পিত ঠাণ্ডা মাথার হত্যা’ হিসেবে অভিহিত করে দ্রুত দোষীদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে।
এদিকে হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে মতলব উত্তরের সর্বত্র উত্তেজনা বিরাজ করছে। স্থানীয়রা বলছেন, “একজন নিরীহ যুবককে ঠাণ্ডা মাথায় খুন করে নদীতে ফেলে দেওয়া হয়েছে। আমরা এমন নির্মমতা মেনে নিতে পারি না। প্রশাসনের কাছে কঠোর বিচার দাবি করছি।”
নুসরাত