
ছবিঃ সংগৃহীত
স্কুলজীবনের মাঝপথেই সংসারের দায়িত্ব এসে পড়ে সালেহা খাতুনের কাঁধে। মাত্র সপ্তম শ্রেণিতে পড়ার সময়েই পরিবারের চাপে তাকে বিয়ের পিঁড়িতে বসতে হয়। পড়াশোনা তখনই থেমে যায়, শুরু হয় গৃহস্থালির ব্যস্ত জীবন। কিন্তু মনের কোণে লুকিয়ে রাখা স্বপ্নটা কখনো হারায়নি।
বছরের পর বছর সন্তান লালন-পালন, স্বামী ও সংসার সামলে চললেও শিক্ষার প্রতি সালেহার টান একটুও কমেনি। সেই টানেই তিনি আবার কলম হাতে নিয়েছেন। রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার ভবানীগঞ্জ কারিগরি অ্যান্ড ব্যবস্থাপনা কলেজ থেকে এবার এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন ৪৮ বছর বয়সী এই নারী।
তক্তপাড়া গ্রামের বাসিন্দা সালেহার স্বামী একজন শিক্ষক। ছেলে-মেয়েদের পড়াতে গিয়ে নিজের পড়ালেখার ইচ্ছাটা আবার মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। বাড়িতে ছেলের পড়ার টেবিলেই এখন সালেহার বই খোলা থাকে, চলছে প্রস্তুতি। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সন্তানদের মতোই মন দিয়ে নিজের পড়ায় বসে আছেন তিনি।
সালেহা জানান, ২০১৯ সালে তিনি নবম শ্রেণিতে ভর্তি হন শ্রীপুর রামনগর টেকনিক্যাল বিজনেস ম্যানেজমেন্ট কলেজে। সেখান থেকে মাধ্যমিক পাস করে বর্তমানে ভবানীগঞ্জ কারিগরি কলেজে পড়ছেন। এখন তার একমাত্র লক্ষ্য—এইচএসসি ভালোভাবে পাস করে স্নাতকে ভর্তি হওয়া। ভবিষ্যতে আইন নিয়ে পড়ারও আগ্রহ রয়েছে তার।
বড় ছেলে শামীম রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিজ্ঞানে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন। ছোট ছেলে সাগর পড়ছে রাজশাহী সরকারি সিটি কলেজে। সন্তানেরা এখন গর্ব করে বলেন—“আমাদের মা শুধু মা নন, আমাদের সহপাঠীও!”
সালেহার স্বামী শাহার আলী বলেন, “ওর এই আগ্রহ আমাদের সবাইকে অনুপ্রাণিত করে। বয়স কোনো বাধা নয়, এটা ও প্রমাণ করেছে।”
ভবানীগঞ্জ কারিগরি অ্যান্ড ব্যবস্থাপনা কলেজের সহকারী অধ্যাপক আশরাফুল ইসলাম বলেন, “সালেহা খাতুন নিয়মিত ও মনোযোগী। বয়সের সীমা অতিক্রম করে তার যে আগ্রহ, তা সত্যিই বিরল।”
সালেহা খাতুন এখন কেবল একজন পরীক্ষার্থী নন—তিনি হয়ে উঠেছেন এলাকার নারীদের জন্য এক উদাহরণ, প্রেরণা ও সাহসের প্রতিচ্ছবি।
ইমরান