
ত্রুটিপূর্ণ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও অনিয়মের অভিযোগে সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (সুবিপ্রবি) ২৭টি পদে নিয়োগ কার্যক্রম বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে। গেল বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সিন্ডিকেট সভায় এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
১৩ এপ্রিল প্রকাশিত ওই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে একজন সহযোগী অধ্যাপক, রেজিস্ট্রার, পরিচালক (অর্থ ও পরিকল্পনা), ডেপুটি রেজিস্ট্রারসহ বিভিন্ন প্রশাসনিক ও শিক্ষাগত পদে নিয়োগের জন্য আবেদন আহ্বান করা হয়, যার সময়সীমা ছিল ১২ মে পর্যন্ত। তবে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট গঠিত না থাকায় এবং রাষ্ট্রপতির অনুমোদন ছাড়াই নিয়োগ আহ্বান করা হয় বলে সভায় জানানো হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য আনছার উদ্দিন বলেন, “সিন্ডিকেট গঠনের আগেই এই নিয়োগ আহ্বান করা হয়েছিল, এবং রাষ্ট্রপতির অনুমোদনও ছিল না। তাই সর্বসম্মত সিদ্ধান্তে এই নিয়োগ কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে।”
আরেক সিন্ডিকেট সদস্য, সিলেট নগরীর উপশহরের বাসিন্দা সাব্বির আহমদ চৌধুরী বলেন, “আগের সিন্ধান্তের সঙ্গে নিয়োগ প্রক্রিয়ার সঙ্গতি না থাকায় এবং বিজ্ঞপ্তিতে একাধিক ত্রুটি থাকার কারণে আমরা নিয়োগ বাতিল করে নতুনভাবে বিজ্ঞপ্তি আহ্বান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. নিজাম উদ্দিন বলেন, “পূর্বে যারা আবেদন করেছেন, তারা নতুন বিজ্ঞপ্তির প্রেক্ষিতে পুনরায় আবেদন করতে বাধ্য থাকবেন না।”
উল্লেখ্য, সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগ কার্যক্রম শুরু থেকেই সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল। ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে অফিস সহায়ক ও কম্পিউটার অপারেটর পদের পরীক্ষার স্থান নির্ধারণ নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়।
প্রাথমিকভাবে গাজীপুরে অবস্থিত ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (ডুয়েট) পরীক্ষার আয়োজন করা হলেও, প্রবল আপত্তির মুখে পরবর্তী সময়ে তা শান্তিগঞ্জের একটি কলেজে স্থানান্তর করা হয়। তবে ব্যবহারিক ও মৌখিক পরীক্ষার জন্য আবারও গাজীপুরে ডাকা হয়, যা নিয়েও তীব্র সমালোচনা হয়েছিল।
সুনামগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাস বাস্তবায়ন আন্দোলনের যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট রবিউল লেইস রোকেস বলেন, “শুরু থেকেই সুবিপ্রবির প্রশাসনিক কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও দায়িত্বশীলতার ঘাটতি লক্ষ্য করা গেছে। এমন একটি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এমন অনিয়ম কখনোই কাম্য নয়।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সিন্ডিকেট সভাটি শান্তিগঞ্জ উপজেলার আব্দুল মজিদ কলেজের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হয়। সভায় ১১ সিন্ডিকেট সদস্যের মধ্যে ১০ জন স্বশরীরে বা ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন। উপস্থিত সদস্যদের সর্বসম্মতিতে নিয়োগ কার্যক্রম স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী অবকাঠামো ও একাডেমিক কার্যক্রম সঠিকভাবে চালুর আগেই এমন অনিয়ম ও গোপনীয়তা প্রশ্ন তুলেছে সংশ্লিষ্ট মহলে। শিক্ষার পরিবেশে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ নিশ্চিতের দাবি জানাচ্ছেন সুধীসমাজ।
রাজু