ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১৫ জুন ২০২৫, ১ আষাঢ় ১৪৩২

তীব্র তাপদাহে চাঁদপুর বড় স্টেশন তিন নদীর মোহনায় দর্শনার্থীদের ভিড়

শ্যামল সরকার, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, চাঁদপুর

প্রকাশিত: ২০:৫৩, ১৪ জুন ২০২৫

তীব্র তাপদাহে চাঁদপুর বড় স্টেশন তিন নদীর মোহনায় দর্শনার্থীদের ভিড়

ঈদুল আজহার ছুটিতে মতলব উত্তর থেকে প্রথমবারের মতো পরিবারের সঙ্গে চাঁদপুর তিন নদীর মোহনায় ঘুরতে এসেছে নয় বছর বয়সী আরাফাত। ঘুরে ঘুরে তিন নদীর মিলনস্থল ও নদীর ঢেউ দেখে খুব খুশি সে।

নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে আরাফাত জানায় তার অভিজ্ঞতার কথা। সে বলে, “বাঘ দেখেছি, সিংহ দেখেছি, বানর দেখেছি। বাঘ-সিংহ খাঁচায় ঘুমাচ্ছিল, জিরাফ দাঁড়িয়ে খাবার খাচ্ছিল। তবে এবার ভিন্ন কিছু দেখলাম—চাঁদপুরে তিনটি নদীর মিলনস্থল, এটি একটি দর্শনীয় স্থান হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই আজ এখানে এসে খুব ভালো লাগছে।”

ঈদের অষ্টম দিন শনিবার (১৪ জুন) চাঁদপুর বড় স্টেশন এলাকায় তিন নদীর মোহনা মোলহেডে ছিল দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড়। ঈদের দীর্ঘ ছুটিকে উপভোগ্য করে তুলতে অনেকেই এসেছেন পরিবার-পরিজন কিংবা বন্ধুদের সঙ্গে। তীব্র রোদ আর পুরো মাঠজুড়ে হকারদের জটলা পেরিয়ে কেউ বিশ্রাম নিচ্ছেন গাছের ছায়ায়, কেউবা ঘুরে দেখছেন ভ্রাম্যমাণ মেলার নানা স্টল।

মোহনার আগেই শহরের মাঝখান দিয়ে মেঘনায় এসে মিশেছে ডাকাতিয়া নদী। এরপর মেঘনা ও পদ্মা মিলিত হয়েছে এক মোহনায়। এই তিন নদীর মিলনস্থল দূর-দূরান্ত থেকে আগত পর্যটকদের আকৃষ্ট করছে।

এবারের ঈদে ডাকাতিয়া নদীতে দেখা গেছে অনেকেই ট্রলার করে ঘুরছেন। ডাকাতিয়া নদীর মোলহেড এলাকায় রয়েছে ৮-১০টি স্পিডবোট। এগুলোর মাধ্যমে দর্শনার্থীরা মোহনায় ঘোরার অভিজ্ঞতা নিচ্ছেন। জনপ্রতি ৫০ টাকা করে ট্রলারভ্রমণও বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। দর্শনার্থীদের নিরাপত্তায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েন রয়েছে।

বাংলাদেশ রেলওয়ের জমিতে গড়ে উঠা মোলহেড এলাকাটি দর্শনার্থীদের সুবিধার্থে বেশ কয়েকবার সংস্কার করা হয়েছে। কিছুদিন আগেও রেলওয়ের পক্ষ থেকে অভিযান চালিয়ে অবৈধ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান উচ্ছেদ করা হয়, ফলে কিছুটা হলেও স্বস্তি ফিরে পেয়েছে দর্শনার্থীরা। তবে অস্থায়ীভাবে এখনও অনেক হকার ওই এলাকায় বিভিন্ন খাদ্যপণ্য বিক্রি করতে দেখা গেছে।

দুপুরের পর থেকেই মোলহেডে দর্শনার্থীদের ভিড় বাড়তে থাকে। গাছ আর নদীর ছায়ায় বসে বিশ্রাম নিতে দেখা যায় অনেককেই। নাগরদোলা ও ভ্রাম্যমাণ মেলার দোকানগুলোতেও জমজমাট ভিড় লক্ষ্য করা যায়। শিশুরা সরাসরি নদী দেখে উচ্ছ্বসিত হয়ে পড়ছে।

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মজিবুর রহমান তিন সদস্যের পরিবার নিয়ে এসেছেন লক্ষ্মীপুর থেকে। তিনি বলেন, “এবার ঈদের ছুটি দীর্ঘ হয়েছে। আগেই ছেলে-মেয়ের স্কুল ছুটি হয়ে গেছে, তাই পুরো পরিবার নিয়ে চাঁদপুরে বড় স্টেশনে ঘুরতে এসেছি।”

দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা ও সুযোগ-সুবিধা নিয়ে চাঁদপুর নৌ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এ এস এম ইকবাল বলেন, “ঈদ তথা যেকোনো উৎসবে তিন নদীর মোহনায় দর্শনার্থীদের ভিড় থাকে। দর্শনার্থীদের নিরাপত্তায় এবং অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে নৌ পুলিশ সকাল থেকে রাত পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করে। এছাড়া জেলা পুলিশও নিয়োজিত রয়েছে।”

মিমিয়া

×