
ঈদের সরকারি ছুটি শেষ হচ্ছে আগামীকাল শনিবার। তাই একদিন আগেই দ্বীপ জেলা ভোলা থেকে কর্মস্থলে পরিবার-পরিজন নিয়ে ফিরতে শুরু করেছেন হাজার হাজার মানুষ। ভোলার লঞ্চ ও ফেরিঘাটে দেখা গেছে যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড়।
যাত্রীদের অভিযোগ, নৌযান সংকটের কারণে অনেকেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অবৈধ ট্রলার ও স্পিডবোটে পারাপার করছেন। এ সময় তাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। তবে এসব পরিস্থিতিতে নৌপুলিশ বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তেমন কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ দেখা যায়নি। রোদ ও বৃষ্টিতে ভিজে যাত্রীদের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে।
আজ শুক্রবার সকালে ভোলার ইলিশা লঞ্চঘাটে এমন চিত্র দেখা গেছে।
ভোলা সদর উপজেলার ইলিশা লঞ্চঘাটে ভোর থেকেই জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে যাত্রীরা আসতে থাকেন। ঘাটের প্লাটফর্মে শিশু থেকে শুরু করে বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষ নৌযানে ওঠার জন্য তীব্র গরমে অপেক্ষা করছেন। লঞ্চ আসামাত্র যাত্রীরা হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন।
ইলিশা-লক্ষ্মীপুর রুটের লঞ্চ ও সি-ট্রাকগুলো দুই থেকে তিন গুণ অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে চলাচল করছে। নৌযানের তুলনায় যাত্রী বেশি হওয়ায় অনেকে ঘাটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করছেন, আবার কেউ কেউ অবৈধ ট্রলার বা স্পিডবোটে মেঘনা নদী পার হচ্ছেন।
যাত্রীরা অভিযোগ করেন, সাধারণত যে স্পিডবোটে ৩০০ টাকা ভাড়া নেওয়া হয়, এখন তা ১ হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করা হচ্ছে।
বর্তমানে এ রুটে ২টি লঞ্চ ও ৪টি সি-ট্রাক চলাচল করছে, যা যাত্রীর তুলনায় খুবই কম। ফলে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মানুষ কাজের তাগিদে পরিবার-পরিজনসহ গাদাগাদি করে উত্তাল মেঘনা পাড়ি দিচ্ছেন।
এমন পরিস্থিতিতে যেকোনো সময় বড় দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। লঞ্চঘাট সংশ্লিষ্টরা জানান, আগামী শনিবার পর্যন্ত এ ভিড় আরও বাড়বে।
এদিকে করোনা সংক্রমণ রোধে যাত্রীদের মাস্ক পরতে সতর্ক করা হলেও অধিকাংশ যাত্রীই তা মানছেন না।
যাত্রীরা জানান, ইলিশা লঞ্চঘাটে যত সংখ্যক যাত্রী রয়েছে, লক্ষ্মীপুর যাওয়ার জন্য তত লঞ্চ বা সি-ট্রাক নেই। যেগুলো আছে, সেগুলোর ধারণক্ষমতা কম এবং সাইজেও ছোট। তাই ধারণক্ষমতার কয়েকগুণ বেশি যাত্রী নিয়ে পারাপার করা হচ্ছে, যা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।
যাত্রীদের ভোগান্তি লাঘবে আরও লঞ্চ ও সি-ট্রাক প্রয়োজন বলে তারা মত দেন।
অনেকে পরিবার-পরিজন নিয়ে তীব্র গরম ও বৃষ্টিতে ঘাটে অপেক্ষা করছেন। শত শত যাত্রীর জন্য পর্যাপ্ত ছাউনি না থাকায় খোলা আকাশের নিচেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। যাত্রীরা বলেন, সরকারের উচিত ছিল ঈদ উপলক্ষে এ রুটে বড় লঞ্চ বা আরও বেশি লঞ্চ-স্টিমার চালু করা।
বিআইডব্লিউটিএ'র নৌ-নিরাপত্তা বিভাগের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (টিআই) মো. জসিম উদ্দিন সাংবাদিকদের জানান, ইলিশা-লক্ষ্মীপুর নৌপথে ২টি লঞ্চ ও ৪টি সি-ট্রাক চলাচল করছে, যাদের সম্মিলিত ধারণক্ষমতা প্রায় ৮০০ যাত্রী।
এ রুটে ১০ মিনিট অন্তর লঞ্চ চলাচল জরুরি হলেও প্রতিটি নৌযান দিনে একবার (এক সার্কেল) চলাচলের অনুমতি পেয়েছে।
আরও একটি সি-ট্রাক এমভি আব্দুস সালাম চলাচলের অনুমোদন পেলেও সেটি যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে ডকইয়ার্ডে পড়ে আছে।
যাত্রীর তুলনায় বৈধ নৌযান কম হওয়ায় যাত্রীরা বাধ্য হয়ে অবৈধ নৌযানে উঠছেন।
তিনি জানান, অবৈধ যাত্রী পরিবহন বন্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে ৪টি স্পিডবোট ও ১টি ট্রলারকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
এছাড়া করোনা সংক্রমণ রোধে মাস্ক ব্যবহারে যাত্রীদের সচেতন করা হচ্ছে বলেও তিনি জানান।
সজিব