
বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার চরাদী ইউনিয়নের ঐতিহ্যবাহী ফজলুল হক মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে টিকা প্রদানের নামে অর্থ আদায়, নিয়োগ বাণিজ্য ও দুর্নীতির অভিযোগ ঘিরে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে স্থানীয় অভিভাবক ও সচেতন মহল। প্রধান শিক্ষক মো. আনিসুর রহমানের বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগ উঠলেও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি এইচ এম সোহাগ হাওলাদারের নিরব ভূমিকা নিয়ে অভিভাবকদের মধ্যে চরম অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ২০ মে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের হেপাটাইটিস বি টিকা প্রদান করা হয়। অথচ সরকারিভাবে এ টিকা বিনামূল্যে দেওয়ার নিয়ম থাকলেও শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে জনপ্রতি ৪০০-৫০০ টাকা করে আদায় করা হয়। টাকা আদায়ের কাজে জড়িত ছিলেন প্রধান শিক্ষকের আত্মীয় পরিচয়ধারী ‘নান্টু’ নামের একজন ব্যক্তি। অভিযোগ রয়েছে, ২০২২ সাল থেকে এ ধরনের কর্মকাণ্ড নিয়মিত চলছে।
অভিভাবকরা জানান, টিকা না দিলে পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে না—এমন ভয় দেখিয়ে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা আদায় করা হয়। এমনকি এ প্রক্রিয়ার ভিডিও ফুটেজও রয়েছে বলে দাবি করেছেন স্থানীয় সাংবাদিকরা।
দুর্নীতির বিষয়টি বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হলে তা থামাতে কয়েকজন সাংবাদিকের কাছে ফোন করে চাপ প্রয়োগের অভিযোগ ওঠে। সংবাদকর্মীরা দাবি করেন, বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতির পক্ষ থেকেই এমন হুমকি ও চাপ এসেছে।
এদিকে অভিভাবক ও স্থানীয় সচেতন মহলের দাবি, সভাপতি এইচ এম সোহাগ একজন শিক্ষিত ও সমাজে সুপরিচিত মানুষ হওয়া সত্ত্বেও তিনি প্রধান শিক্ষকের অপকর্মে নীরব ভূমিকা পালন করছেন। এতে দুর্নীতিবাজদের মনোবল আরও বেড়ে যাচ্ছে।
অভিযোগ রয়েছে, প্রধান শিক্ষক আনিসুর রহমান নিজে নিয়োগ পরীক্ষায় একাধিকবার অকৃতকার্য হওয়ার পরও প্রভাব খাটিয়ে নিজেকে প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ দেন এবং সিনিয়র শিক্ষকদের পরীক্ষায় অংশ নিতে দেননি। এছাড়া, একাধিক শিক্ষক নিয়োগে অনিয়ম ও নতুন শিক্ষককে অপমান করার ঘটনাও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
স্থানীয়দের মতে, বিদ্যালয়ের একটি সরকারি পুকুরের মাটি বিক্রির ঘটনাও ঘটেছে প্রধান শিক্ষকের নেতৃত্বে। এসব অনিয়মের পরিপ্রেক্ষিতে অভিভাবকরা দ্রুত তদন্ত ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অভিভাবক বলেন, "টাকা না দিলে পরীক্ষায় বসতে দেবে না—এমন হুমকি শুনেছি নিজের কানে। অনেক অনুরোধ করেও মেয়েকে পরীক্ষায় বসাতে পারিনি। ১০০ টাকাও কম নেয় না।"
অভিভাবকদের বক্তব্য, বিদ্যালয়ের মর্যাদা রক্ষায় সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে যথাযথ তদন্ত এবং কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া এখন সময়ের দাবি।
রাজু