ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৮ মে ২০২৫, ১৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

প্রভাবশালী মহল জড়িত

বরগুনায় বন কেটে মৎস্য ঘের তৈরির মহোৎসব

নিজস্ব সংবাদদাতা, তালতলী, বরগুনা

প্রকাশিত: ২২:২৫, ২৭ মে ২০২৫

বরগুনায় বন কেটে মৎস্য ঘের তৈরির মহোৎসব

ভেকু দিয়ে বনের মাটি কেটে উজাড় করছে প্রভাবশালী মহল

দেশের দুর্যোগপ্রবণ জেলাগুলোর অন্যতম বরগুনা জেলার তালতলী উপজেলা। প্রতি বছরই ঝড়-জলোচ্ছ্বাসে যুদ্ধ করেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে উপকূলীয় এ উপজেলার বাসিন্দারা। ঘূর্ণিঝড়সহ নানান প্রাকৃতিক দুর্যোগে উপকূলের রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করে এ দ্বিতীয় বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন।  এ উপজেলার আন্ধারমানিক নদীর কূল ঘেঁষে ২০ কিলোমিটার জুড়ে ছইলা ও কেওড়াসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ রোপণ করেছে বনবিভাগ। যেটাকে বলা হয় সবুজ দেওয়াল। তবে এটি শুধু নামেই বনাঞ্চল।

দেখলে মনে হবে যেন ব্যক্তি মালিকানাধীন বনভূমি। বনের গাছ কেটে উজাড় করে বনের জমি দখল করে প্রায় অর্ধশত মৎস্য ঘের নির্মাণ করেছে স্থানীয় প্রভাবশালীরা। এভাবে বনের জমি দখল হয় ও বনভূমি কমছে, অন্যদিকে দিন দিন উজাড় হচ্ছে সংরক্ষিত বনাঞ্চল। ধ্বংস হচ্ছে প্রকৃতি ও পরিবেশ। হারিয়ে যাচ্ছে বন্যপ্রাণী ও পাখির আবাসস্থল। এতে হুমকিতে পড়ছে জীববৈচিত্র্য এবং ঝুঁকি বাড়ছে প্রাকৃতিক দূর্যোগের।
বনবিভাগ বলছে, দখলদাররা প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে গিয়ে ভয়ভীতি প্রদর্শন ও মামলা-হামলার হুমকি দিচ্ছেন। তবে পর্যায়ক্রমে দখলদারদের বিরুদ্ধে বনবিভাগের পক্ষ থেকে নোটিস করা হচ্ছে। তারা নোটিসের সদুত্তর দিতে না পারলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, প্রভাবশালী ও বন কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করেই বনের গাছ কাটা হচ্ছে। এতে লেনদেন হচ্ছে মোটা অংকের টাকা। গাছ কেটে জমি দখল এবং পরে মৎস্য ঘের নির্মাণ করা হচ্ছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার শারিকখালী ইউনিয়নের আঙ্গারপাড়া গ্রামে আন্ধারমানিক নদীর তীর থেকে শুরু করে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ পর্যন্ত ১৫০ মিটার বনাঞ্চল উজাড় করে খনন যন্ত্র (এস্কেভেটর) দিয়ে মৎস্য ঘের নির্মাণ করছেন স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল খালেক মিয়া। সেখান থেকে একটু সামনে এগিয়ে চাউলাপাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায় নদী তীরবর্তী বনের ছইলা, কেওড়া ও নানা প্রজাতির কয়েক হাজার চারা গাছ কেটে খনন যন্ত্র (এস্কেভেটর) দিয়ে প্রায় দুই একর জমি খনন করে মৎস্য ঘের নির্মাণ করেছেন স্থানীয় প্রভাবশালী বাসিন্দা বাবুল মৃধা ও জাকির মৃধা। এছাড়াও ঘেরের মাঝে মাচান দিয়ে নির্মাণ করছে ছোট্ট পাহারা দেওয়ার ঘর ও পানি ওঠা-নামার জন্য ইট দিয়ে স্থায়ী কালভার্ট।

একইভাবে বড়বগী ইউনিয়নের নিশানবাড়িয়া খেয়াঘাট থেকে শারিকখালী ইউনিয়নের চাউলাপাড়া গ্রাম পর্যন্ত আন্ধারমানিক নদীর তীরে জমি দখল ও বনাঞ্চল উজাড় করে স্থানীয় প্রভাবশালীদের মৎস্য ঘের নির্মাণের মহোৎসব চলছে। এখানে একে একে প্রায় অর্ধশত মৎস্য ঘের নির্মাণ করা হয়েছে। এ বিষয়ে দখলদার বাবুল মৃধা, জাকির মৃধা, আমাদের বাড়ির সম্মুখভাগ (মুখসা) এ জমি আমরা বন্ধবস্ত নিয়েছি। এখানে চিংড়ি মাছ চাষ করার জন্য ঘের নির্মাণ করেছি। বনের গাছ কেটে ঘের নির্মাণ করার বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, এখানে বনবিভাগের লোকজন আসছিল তারা দেখে গেছেন।

দখলদার আব্দুল খালেক মিয়া বলেন, আমার রেকর্ডি জমিতে মৎস্য ঘের নির্মাণ করছি। বনের গাছ কেটে ঘের নির্মাণ করার বিষয় জানতে চাইলে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেনি।দখলদার আকাব্বার বলেন, ঘেরের ভিতরে আমাদের কিছু রেকর্ডি জমি ও সরকারি জমি মিলিয়ে মৎস্য ঘের নির্মাণ করেছি।
বন কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করেই বনের গাছ কাটা হচ্ছে, এমন অভিযোগ অস্বীকার করেন তালতলী রেঞ্জের কর্মকর্তা মতিয়ার রহমান। তিনি বলেন, বনবিভাগের পক্ষ থেকে দখলদারদের বিরূদ্ধে ৬টি মামলা করা হয়েছে। এছাড়াও ২৫ জন দখলদারকে নোটিস করা হয়েছে।
তালতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উম্মে সালমা বলেন, চাউলাপাড়া গ্রামে বনবিভাগের গাছ কেটে ঘের নির্মাণের ঘটনায় বনবিভাগের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে মামলা দায়ের করা হয়েছে। 
এছাড়াও সরেজমিন পরিদর্শন করেছেন। যারা আইন অমান্য করে সরকারি জমি দখল ও বনের গাছ কেটে ঘের নির্মাণ করেছেন তাদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা দায়ের করার প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

×