
জন্ম থেকেই হাত-পা বাঁকানো, স্বাভাবিক চলাফেরা অক্ষম। কিন্তু শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে জয় করেছেন মীরসরাই উপজেলার মিঠানালা গ্রামের রামু বিশ্বাস। জীবনের কঠিন বাস্তবতা ও সমাজের অসংখ্য বাঁধাবিপত্তি অতিক্রম করে ভিক্ষাবৃত্তিকে না বেছে, আত্মসম্মানের সাথে ক্ষুদ্র ব্যবসা করে নিজেকে গড়ে তুলেছেন একজন আত্মনির্ভরশীল মানুষ হিসেবে।
জানা গেছে, ১৯৮৭ সালে জন্ম নেওয়া রামু বিশ্বাসের শৈশব কেটেছে অসংখ্য দুঃখ-দুর্দশায়। মাত্র তিন বছর বয়সে পিতৃহারা হন, আর ১৩ বছর বয়সে হারান ছোট ভাইকে। শারীরিক প্রতিবন্ধী রামুকে একমাত্র মা টলন বিশ্বাস মানুষের বাড়িতে কাজ করে বড় করেন। সমাজের অনেকেই ভিক্ষা করতে উৎসাহিত করলেও রামু আত্মসম্মান বিসর্জন না দিয়ে মায়ের সঞ্চিত কিছু অর্থে বুট-বাদাম বিক্রি শুরু করেন। পরে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা অপকা'র সহায়তায় মিঠানালা রামদয়াল উচ্চ বিদ্যালয়ের পাশে একটি ছোট দোকানঘর নিয়ে শুরু করেন ক্ষুদ্র ব্যবসা। ব্যবসা পরিচালনার সুবিধার জন্য মীরসরাই অটিজম সেন্টার থেকে পাওয়া একটি ট্রাই সাইকেল তাকে চলাফেরায় সহায়তা করে।
তবে এ সাফল্যের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল কিছু কুচক্রী মহল। তারা বিভিন্নভাবে ক্ষতিসাধনের চেষ্টা চালালেও অপকা’র নির্বাহী পরিচালক মোঃ আলমগীর এবং এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের হস্তক্ষেপে তারা ব্যর্থ হয়। এরপর থেকে রামুর ব্যবসা ধীরে ধীরে প্রসার লাভ করে।
কয়েক বছর পর বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেন রামু। সমাজের নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিকে চ্যালেঞ্জ করে চরশরতের রিংকি নামের এক সাহসী নারী তাকে ভালোবেসে বিয়ে করেন। বিয়ের অনুষ্ঠানে প্রায় ৩০০ মানুষকে আপ্যায়ন করেন তিনি। বর্তমানে তাদের পরিবারে রয়েছে দুই ফুটফুটে পুত্র সন্তান।
অদম্য যুবক রামু বিশ্বাস বলেন, “প্রতিবন্ধী হওয়ায় সমাজের নানা কটুকথা সহ্য করতে হয়েছে। আমার বিয়ে ও ভবিষ্যৎ সন্তান নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছিল। অনেক কষ্ট পেয়েছি, কেঁদেছি, তবে ভেঙে পড়িনি। আজ আমি স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে একটি সুখী জীবন কাটাচ্ছি।”
এ প্রসঙ্গে অপকা’র নির্বাহী পরিচালক মোঃ আলমগীর বলেন, “রামু বিশ্বাস প্রমাণ করেছে, প্রতিবন্ধকতা সাফল্যের পথে বাধা নয়। সঠিক পৃষ্ঠপোষকতা পেলে তার মতো অনেকেই সমাজে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারে।”
মীরসরাই উপজেলা সহকারী সমাজসেবা কর্মকর্তা মোঃ সাহাব উদ্দিন বলেন, “সমাজসেবা অফিস থেকে রামু বিশ্বাসকে প্রতিবন্ধি ভাতাসহ বিভিন্নভাবে সহায়তা করা হয়। রামু বিশ্বাসের জীবনের গল্প আমাদের শিক্ষা দেয়—ইচ্ছাশক্তি থাকলে প্রতিবন্ধকতা জয় করা সম্ভব। সমাজের উচিত এ ধরনের সাহসী মানুষদের পাশে দাঁড়ানো।”
নোভা