ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২২ মে ২০২৫, ৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

কুড়িগ্রামে পিছিয়ে পড়া শিশুদের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে সবুজ পাঠশালা

সৌরভ বাবু,কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার,কুড়িগ্রাম

প্রকাশিত: ২৩:৫৮, ২১ মে ২০২৫

কুড়িগ্রামে পিছিয়ে পড়া শিশুদের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে সবুজ পাঠশালা

ছবি:সংগৃহীত

কুড়িগ্রাম শহরের উপকণ্ঠে পিছিয়ে পড়া শিশুদের জন্য শিক্ষার দ্বার খুলে দিয়েছে একটি ব্যতিক্রমধর্মী উদ্যোগ—সবুজ পাঠশালা। ২০২২ সালে যাত্রা শুরু করা এই পাঠশালাটি পরিচালিত হচ্ছে পরিবেশবাদী যুব সংগঠন ‘গ্রীন ভয়েস’-এর অঙ্গ সংগঠন নীলকন্ঠের মাধ্যমে। প্রতিষ্ঠানটি বর্তমানে কাজ করছে গ্রীন ভয়েসের তত্ত্বাবধানে।

শহরের কাছেই, ট্যানরি পাড়ার জলিল বিড়ির মোড়ে অবস্থিত এই পাঠশালায় প্রতিদিনই উপস্থিত হয় সমাজের প্রান্তিক শ্রেণির শিশুরা। অনেকেই দিনমজুর, ভ্যানচালক, নির্মাণশ্রমিক পরিবারের সন্তান। দারিদ্র্য ও অবহেলায় যাদের শিক্ষাজীবন শুরুই হতো না, তাদের জন্যই এই আলোর আয়োজন।

বর্তমানে পাঠশালাটিতে ৫০ জনেরও বেশি শিক্ষার্থী সম্পূর্ণ বিনামূল্যে প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করছে। পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি তাদের শেখানো হচ্ছে পরিবেশ সচেতনতা, নৈতিকতা এবং সামাজিক মূল্যবোধ। শিক্ষার পরিবেশটিকে আনন্দমুখর রাখার বিশেষ চেষ্টা করছেন শিক্ষকরা।

সবুজ পাঠশালার নিয়মিত শিক্ষিকা বনলতা দাস সুমনা বলেন,“সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে পেরে আমি খুব আনন্দিত। আমি চেষ্টা করি তাদের উৎসবমুখর পরিবেশে লেখাপড়া শেখাতে, যেন তারা ঝরে না পড়ে। তাদের মুখের হাসিই আমাদের প্রেরণা।”

শুধু শিক্ষক নন, স্থানীয় অভিভাবকরাও সন্তুষ্ট এই উদ্যোগে। বিনা খরচে সন্তানদের শিক্ষা পাচ্ছে, এমন সুযোগ পেয়ে অনেকেই আশার আলো দেখছেন।

সবুজ পাঠশালার শিক্ষার্থী রুকছি জানায়,“আমি আগে বাংলা রিডিং পারতাম না। এখন ম্যাম আমাকে বাংলা রিডিং শিখিয়েছেন। আমি ইংরেজি ছড়া বলতেও পারি।”

এই উদ্যোগের পেছনে যে চিন্তা ও দায়বদ্ধতা কাজ করেছে, তা ব্যাখ্যা করেন গ্রীন ভয়েস-এর রংপুর বিভাগীয় সমন্বয়ক রবিউল ইসলাম রুবেল। তিনি বলেন,“এই এলাকায় শিক্ষার প্রচলন খুবই কম। ছোট ছোট শিশুরা অনেকেই দিনমজুরের কাজে জড়িয়ে পড়ে। বিষয়টি আমাকে নাড়া দেয়। মনে হলো, এখানে অন্তত প্রাথমিক শিক্ষার একটি ব্যবস্থা হওয়া দরকার। সেই ভাবনা থেকেই সবুজ পাঠশালার যাত্রা শুরু।”

উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, পাঠশালাটির সকল কার্যক্রম এখনো ব্যক্তিগত ও সংগঠনের উদ্যোগেই পরিচালিত হচ্ছে। সরকারি বা বড় কোনো পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়াই চলছে এই মহতী প্রচেষ্টা। সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, যদি সরকারের সহায়তা ও সমাজের বিভিন্ন মহলের সহযোগিতা পাওয়া যায়, তাহলে সবুজ পাঠশালার পরিধি আরও বাড়ানো সম্ভব। তখন আরও বহু সুবিধাবঞ্চিত শিশুকে শিক্ষার আলোয় ফেরানো যাবে।

সবুজ পাঠশালা হতে পারে একটি অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত—যেখানে মানুষের ইচ্ছাশক্তি ও ভালোবাসা বদলে দিতে পারে একটি সমাজের ভবিষ্যৎ।

আলীম

×