
শহরের কোলাহল কখনো থামে না। রিকশার ঘণ্টা, হর্ণের শব্দ, মানুষের ব্যস্ততা—সবই চলে নিয়ম মেনে। কিন্তু বৃষ্টি শেষে যখন কৃষ্ণচূড়া ফুল ঝরে পড়ে রাস্তায়, তখন মনে হয়—নওগাঁ যেন একটু থেমে যায়। শ্বাস নেয় ধীরে। আর চারপাশ জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে এক নিঃশব্দ সৌন্দর্য।
এই শহরের প্রতিটি কোণ যেন হয়ে ওঠে এক নিঃশব্দ কবিতা, যেখানে শব্দ নয়, রং বলে কথা।
বৃষ্টির জলে ধুয়ে যাওয়া কৃষ্ণচূড়া গাছগুলোর শরীর জুড়ে লেগে থাকে টলটলে জল। পাপড়িগুলো তখন ঠিক যেন চোখে জল আসা হাসির মতো—লাল, নরম, আবেগে ভরা।
নওগাঁ সরকারি কলেজের সামনে, পুরাতন কালেক্টরেটের রাস্তার ধারে, হাসপাতাল সংলগ্ন রাস্তায় অথবা জেলা পরিষদ পার্কের কর্নারে দাঁড়িয়ে থাকা কৃষ্ণচূড়াগুলো যেন মৌন ভাষায় বলে—"দেখো, বৃষ্টির চোখে ধুয়ে আমি কতটা নতুন!"
নওগাঁ সরকারি কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আইরিন পারভীন বলেন, “বৃষ্টির পর কৃষ্ণচূড়ার দিকে তাকিয়ে থাকলে মনে হয়, প্রকৃতি যেন নতুন করে প্রেমে পড়েছে।
কলেজপাড়ার গলিতে হাঁটতে হাঁটতে বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া রাবেয়া সুলতানার মুখে শোনা গেল একদম সোজাসাপ্টা কথা, “এই শহরে আমি প্রেমে পড়িনি কারো, আমি প্রেমে পড়েছি বৃষ্টির পরের কৃষ্ণচূড়ায়।” তার কথায় কেমন এক অস্ফুট স্বর—যা হয়তো আরও অনেকের হৃদয়ের কথাই বলে।
প্রবীণ পথচারী দাঁড়িয়ে দেখেন একটু—তার চোখে হয়তো ফিরে আসে শৈশবের কোনো এক সন্ধ্যা , প্রথম প্রেম, অথবা হারিয়ে যাওয়া চিঠির কথা।ছোট্ট শিশুরা মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে থাকে, কেউ কেউ মাটিতে পড়ে থাকা লাল পাপড়ি কুড়িয়ে নেয় যেন সে কোনো মহামূল্যবান রত্ন। তরুণ-তরুণীরা দাঁড়িয়ে ছবি তোলে, কেউ কেউ ফেসবুক ক্যাপশনে লেখে—“এই শহরের রং আজ কৃষ্ণচূড়া”।
নওগাঁর কৃষ্ণচূড়া আজ কেবল একটি বৃক্ষ নয়, সে যেন শহরের নীরব ভাষ্যকার। বৃষ্টি থেমে গেলে, তার পাপড়ির ফাঁকে ফাঁকে জমে থাকে কিছু না বলা কথা, কিছু হারিয়ে ফেলা মানুষ, কিছু অনুভূতির বর্ণনা।
এই শহর জানে—প্রকৃতি যখন চুপ থাকে, কৃষ্ণচূড়া তখন বলে।
রাজু