ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১৭ মে ২০২৫, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

ফ্যাসিস্ট সরকার অপচয় করে দেশ ধ্বংস করেছে: সাবেক এমপি তুহিন

তাহমিন হক ববী, স্টাফ রিপোর্টার, নীলফামারী

প্রকাশিত: ১৮:৩৮, ১৭ মে ২০২৫

ফ্যাসিস্ট সরকার অপচয় করে দেশ ধ্বংস করেছে: সাবেক এমপি তুহিন

ছ‌বি: জনকণ্ঠ

সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার ভাগ্নে, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাহী সদস্য এবং নীলফামারী-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার শাহরিন ইসলাম চৌধুরী তুহিন বলেছেন, “আমি ১৮ বছর ২ মাস ১০ দিন পর নিজ জেলা নীলফামারীতে ফিরলাম। অনেক ভালো লাগছে। তবে যারা আমাকে মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলায় ফাঁসিয়ে পালিয়ে থাকতে বাধ্য করেছে, সেই ফ্যাসিস্ট হাসিনার বিদায় হয়েছে। তিনি তো দুপুরে রান্না করা ভাতও খেতে পারেননি। জুলাইয়ের আন্দোলনে প্রাণ বাঁচাতে অসম্মানিত হয়ে ভারতে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন।”

আজ শনিবার (১৭ মে) দুপুরে নীলফামারী শহরের শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে জেলা বিএনপির আয়োজনে গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।

জেলা বিএনপির সভাপতি আলমগীর সরকারের সভাপতিত্বে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জহুরুল আলম। এতে বক্তব্য রাখেন বিএনপির রংপুর বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল খালেক ও আমিনুল ইসলাম, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট মিজানুর রহমান চৌধুরী শামীমসহ স্থানীয় নেতারা।

এর আগে বিএনপি ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠন ছাড়াও বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে তুহিনকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয়।

তুহিন বলেন, “আমাকে বরণ করে নিতে শতশত ফুল দিয়ে ভরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এত ফুল আমি কোথায় রাখব?” প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, “আমরা অপচয় করতে চাই না। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যেসব মা-বোন ও মুরব্বীরা উপস্থিত হয়েছেন, আমি তাদের কাছে এই ফুলগুলো দিয়ে গেলাম।”

অপচয় প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, “ফ্যাসিস্ট সরকার গত ১৭ বছরে অপচয়ের মাধ্যমে দেশ ধ্বংস করেছে। আমার মূল্যবান জীবনের সময়কেও অপচয় করানো হয়েছে। দেশের উন্নয়নের নামে কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ নিয়ে বিদেশে পাচার করেছে। এই সরকারের দোসররা অপচয়ের মাধ্যমে দেশটাকে ধ্বংস করেছে। কিন্তু আমরা অপচয় করতে চাই না।”

তিনি বলেন, “বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান ৩১ দফা বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশের সংস্কারের রূপরেখা দিয়েছেন। আমি মনে করি, তার নেতৃত্বে বিএনপি অপচয় রোধ করে দেশের ভাগ্য উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে এবং যাবে। এর জন্য দেশে প্রথম প্রয়োজন গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও অবাধ, নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু নির্বাচন।”

বর্তমান সরকার সম্পর্কে তুহিন বলেন, “তারা ডিসেম্বরে নির্বাচনের কথা বলছে। কিন্তু বিএনপির বিজয় নিশ্চিত জেনে নির্বাচন পেছানোর ষড়যন্ত্র চলছে। বিশেষ কিছু মহল বিএনপির বিরুদ্ধে বিষোদগার করছে। কেন এত বিষোদগার?”

তিনি আরও বলেন, “বলা হয় বিএনপি চাঁদাবাজি করে, আর অন্য কোনো দল করলে সেটা হয় ‘হাদিয়া’। বিশেষ একটি দল ব্যাংক দখল করছে। কী হচ্ছে, আমি জানি না।”

নিজেকে বৈষম্যের শিকার দাবি করে তুহিন বলেন, “এই সরকার নাকি বৈষম্য দূর করছে। অথচ আমি ১৮ বছর ২ মাস পর দেশে ফিরে বৈষম্যের শিকার হলাম। একটি বিশেষ দলের নেতারা সরকারের বিশেষ আদেশে জেলে না গিয়েও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। এই সরকার বৈষম্য দূর করতে ব্যর্থ হয়েছে।”

এদিন বেলা বারোটার দিকে ঢাকা থেকে সাবেক এমপি তুহিন সৈয়দপুর বিমানবন্দরে অবতরণ করেন। সেখানে সৈয়দপুর বিএনপির পক্ষ থেকেও তাকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন সৈয়দপুর (সাংগঠনিক জেলা) বিএনপির সভাপতি অধ্যাপক আব্দুল গফুর সরকার। সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক শাহিন আক্তার।

এছাড়া বিকেলে ডোমার উপজেলার বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে উপজেলা বিএনপির আয়োজনে আরেকটি গণসংবর্ধনা প্রদান করা হয়।

প্রসঙ্গত, দীর্ঘদিন দেশের বাইরে থাকার পর ২২ এপ্রিল সাবেক এমপি তুহিন দেশে ফেরেন। এরপর ২৯ এপ্রিল সকালে কর ফাঁকির মামলায় ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৯-এর কবির উদ্দিন প্রামাণিকের আদালতে আইনজীবী সৈয়দ জয়নুল আবেদীন মেজবাহ’র মাধ্যমে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন। আদালত শুনানি শেষে তার জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠান।

একই দিন অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৭-এর বিচারক প্রদীপ কুমার রায়ের আদালতেও আত্মসমর্পণ করে জামিন চান তিনি, কিন্তু সেই মামলাতেও জামিন নামঞ্জুর হয়।

এরপর রংপুর বিভাগীয় শহর ও গোটা নীলফামারী জেলায় বিএনপির নেতাকর্মীরা তার মুক্তির দাবিতে টানা ৭ মে পর্যন্ত বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ চালিয়ে যান। অবশেষে ৮ মে হাইকোর্টের বিচারপতি মোহাম্মদ আলী ও বিচারপতি শেখ তাহসিন আলীর বেঞ্চ তার দণ্ডের বিরুদ্ধে আপিল শুনানি গ্রহণ করে অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দেন।

শাহরিন ইসলাম চৌধুরী তুহিনের পৈতৃক বাড়ি নীলফামারী জেলার ডোমার উপজেলার গোমনাতি গ্রামে। তার পিতা রফিকুল ইসলাম চৌধুরী রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও ডিন ছিলেন। তার মাতা সেলিনা ইসলাম বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বড় বোন। সে হিসেবে তুহিন বেগম খালেদা জিয়ার ভাগ্নে এবং তারেক রহমানের খালাতো ভাই। বর্তমানে তিনি বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাহী সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

এম.কে.

×