ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১০ মে ২০২৫, ২৬ বৈশাখ ১৪৩২

পাহাড় কাটলেই হচ্ছে পরিবেশ অধিদপ্তরের মামলা

প্রবীর সুমন, খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি 

প্রকাশিত: ২১:২১, ৯ মে ২০২৫

পাহাড় কাটলেই হচ্ছে পরিবেশ অধিদপ্তরের মামলা

ছবি: জনকণ্ঠ

খাগড়াছড়িতে প্রশাসনের চোখে ফাঁকি দিয়ে অবৈধভাবে পাহাড় কাটার ঘটনায় পরিবেশ আইন লঙ্ঘনের দায়ে মামলা করছে পরিবেশ অধিদপ্তর। চলতি মাসের প্রথম ছয় দিনে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় পাহাড় ও টিলা কাটার ঘটনায় মামলাগুলো দায়ের করা হয়। দ্রুত সময়ের মধ্যে এত সংখ্যক মামলা দায়ের এর ঘটনা খাগড়াছড়িতে এবারই প্রথম।

আজ (৯ মে) শুক্রবার মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেন খাগড়াছড়ি পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক হাছান আহম্মদ।

এসময় হাছান আহম্মদ বলেন, এবছর শুষ্ক মৌসুমের শুরুতেই জেলার বিভিন্ন উপজেলায় পাহাড় কাটার ঘটনা বেড়েছে। খাগড়াছড়িতে পরিবেশ অধিদপ্তরের নিজস্ব কার্যালয় খোলা হয়েছে। এখন থেকে পাহাড় কাটার অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করেছি। এর মধ্যে জেলার কয়েকটি উপজেলায় পাহাড় কাটার ঘটনায় মোট ছয়টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে খাগড়াছড়ি সদর উপজেলায় একটি, মানিকছড়িতে দুইটি, দীঘিনালায় দুইটি, রামগড়ে একটি মামলা দায়ের করা হয়। এছাড়া ভিন্ন দুইটি ঘটনায় তিন লাখ ১৫ হাজার টাকা পরিবেশগত ক্ষতিপূরণ নিরূপণ করা হয়। 

জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের মাধ্যমে জানা যায়, জেলার দীঘিনালার মধ্য বোয়ালখালীর আলী মিয়ার বিরুদ্ধ পোমাংপাড়ার বাসিন্দা প্রীতি রঞ্জন ত্রিপুরার বিরুদ্ধে সহকারী পরিচালক হাছান আহম্মদ বাদী হয়ে ৬ মে দীঘিনালা থানায় ৫ মে মানিকছড়ির গাড়িটানা এলাকার আবু তাহের মোল্লা ও মো. জানে আলমের বিরুদ্ধে মানিকছড়ি থানায় পরিবেশ আইনে মামলা দায়ের করা হয়। এছাড়া ৪ মে পাহাড়ের মাটি কাটার অভিযোগে নুর ইসলাম ও মো. রাসেলের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। রামগড়ের শ্মশান টিলা এলাকায় পাহাড় কাটার অভিযোগে স্থানীয় বাসিন্দা মো. আলমগীর, মো. সবুজ মিয়ার বিরুদ্ধে পরিবেশ আইনে নিয়মিত মামলা রুজু করা হয়। মামলার পাশাপাশি পাহাড় কাটার ঘটনা পরিবেশগত ক্ষতিপূরণ বাবদ আর্থিক জরিমানাও করা হয়। এর মধ্যে রামগড়ে পুতুল বাহাদুর ছেত্রী, পপি রোয়াজা, কমলি ত্রিপুরা, বিজয় চন্দ্র দে, বিনয় ত্রিপুরাকে ৩ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। এছাড়া দীঘিনালার পশ্চিম কাঁঠালতলী এলাকার রোকেয়া বেগম ও রমজান আলীকে পাহাড় কাটার দায়ে পরিবেশগত ক্ষতিপূরণ বাবদ ১৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

এসময় সহকারী পরিচালক হাছান আহম্মদ আরো বলেন, ‘পাহাড় কাটায় আসামিরা বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫ (সংশোধন, ২০১০) এর ধারা ৬(খ) লঙ্ঘন করেছেন যা একই আইনের ১৫ (১) (সংশোধিত, ২০১০) ক্রমিক নম্বর ৫ অনুসারে দণ্ডনীয় ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। পরিবেশের সুরক্ষায় আগামীতে এমন অভিযান অব্যাহত থাকবে।

পাহাড় কাটার দায়ে জরিমানার পাশাপাশি পরিবেশ আইনে মামলা দায়ের করার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে পরিবেশবাদীরা। খাগড়াছড়ির পরিবেশ সুরক্ষায় কাজ করা সংগঠন পিটাছড়া বন ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ উদ্যোগে প্রতিষ্ঠাতা মাহফুজ রাসেল বলেন, ‘শুষ্ক মৌসুম আসলে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে পাহাড় কাটা শুরু করে। লোভের কারণে পরিবেশের অপূরণীয় ক্ষতি সাধিত হয়। আগে কেবল জরিমানা করার কারণে অপরাধীরা জরিমানা পরিশোধ করে পার পেয়ে যেত। এবার মামলা হওয়ায় পাহাড় খেকোরা পুনরায় পাহাড় কাটার সাহস পাবে না।

রবিউল

×