
ছবি: দৈনিক জনকন্ঠ
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ ও জাপানি কারিগরি সহায়তায় ‘নিরাপদ ও পুষ্টিকর ধান (SaNRice)’ প্রকল্পের আওতায় বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকগণ দ্বারা পরিচালিত এক সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে যে, ৩ দিন ভিজানো এবং ৪ দিন শুকানো (3F4D) ভিত্তিক একটি পরিবর্তিত পর্যায়ক্রমিক সেচ কৌশল চালের মধ্যে অজৈব আর্সেনিকের মাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করে।
আজ মঙ্গলবার (৬ মে),বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ -“নিরাপদ ও পুষ্টিকর ধান উৎপাদনের জন্য প্রজনন ও পানি ব্যবস্থাপনা প্রযুক্তির উন্নয়ন প্রকল্প”কমিটি বাকৃবি'র মৃত্তিকা বিজ্ঞান মাঠ গবেষণাগারে মাঠ দিবস কর্মসূচির আয়োজন করেন।
‘নিরাপদ ও পুষ্টিকর ধান (SaNRice)’ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ও বাকৃবি'র মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর ড. মো. রফিকুল ইসলাম বলেন,“বাংলাদেশের অনেক এলাকার ভূগর্ভস্থ পানি আর্সেনিক দ্বারা দূষিত। অবিরাম জলাবদ্ধতার (CF) অধীনে ধান চাষ করলে চালের মধ্যে এই বিষাক্ত উপাদানের মাত্রা উদ্বেগজনকভাবে বেড়ে যেতে পারে। পূর্ববর্তী গবেষণায় দেখা গেছে, শিষ গঠনের সময় ৩ দিন ভিজানো এবং দিন শুকানো (3F4D) সেচ পদ্ধতি কার্যকর হলেও, নিষ্কাশন সুবিধাবিহীন ক্ষেতে এটি কার্যকর হবে কিনা তা স্পষ্ট ছিল না। এই গবেষণার মূল লক্ষ্য ছিল 3F4D পদ্ধতিকে এমনভাবে উন্নয়ন করা, যাতে তা নিষ্কাশন সুবিধা ছাড়াই প্রয়োগযোগ্য হয় এবং এর প্রভাবে চালের অজৈব আর্সেনিকের মাত্রা ও সেচের পানির চাহিদা হ্রাস পায় কিনা তা যাচাই করা।
বাংলাদেশে টানা তিনটি বোরো মৌসুমে গবেষকরা 3F4D ও 3F7D (৩ দিন জলাবদ্ধতা, ৭ দিন নিষ্কাশন) মধ্য-মৌসুমি নিষ্কাশন (MD) সহ ও ছাড়া, পরীক্ষা করেন। এছাড়াও, এসব পদ্ধতির ফলাফল তুলনা করা হয় AWD এবং প্রচলিত অবিরাম জলাবদ্ধতার (CF) সঙ্গে।
মাঠ পর্যায়ে সংগৃহীত তথ্যে দেখা গেছে, 3F4D পদ্ধতির ৪ দিনের নিষ্কাশন সময়ে মাটির আর্দ্রতা প্রায় ৫% হ্রাস পায় এবং রিডক্স পটেনশিয়াল বেড়ে ১৫০-৫০০ mv পর্যন্ত পৌঁছে, যা একটি অক্সিডেটিভ পরিবেশ সৃষ্টি করে এবং এতে গাছের আর্সেনিক শোষণ কমে যায়। 3F4D পদ্ধতিতে উৎপাদিত চালে অজৈব আর্সেনিকের মাত্রা অবিরাম জলাবদ্ধতার তুলনায় সর্বোচ্চ ৪০% পর্যন্ত কমে। আরও উল্লেখযোগ্য হলো, ধানের ফলন অপরিবর্তিত থাকে। পাশাপাশি, এই পদ্ধতির মাধ্যমে সেচের জন্য ব্যবহৃত পানি ৬৫-৮০% পর্যন্ত সাশ্রয় সম্ভব বলে গবেষণায় উঠে এসেছে।”
প্রধান গবেষক বলেন,“এই গবেষণার ফলাফল প্রমাণ করে যে, সীমিত সম্পদেও কৃষকরা 3F4D পদ্ধতি ব্যবহার করে ফলন ব্যাহত না করেই নিরাপদ চাল উৎপাদন করতে পারেন। এই যুগান্তকারী আবিষ্কার শুধু আর্সেনিকের ঝুঁকি কমাতেই নয়, বরং সেচের পানির চাহিদাও ব্যাপকভাবে হ্রাস করে, ফলে ভূগর্ভস্থ পানিদূষণপ্রবণ অঞ্চলে জনস্বাস্থ্য রক্ষা ও টেকসই ধান উৎপাদনের এক বাস্তবভিত্তিক সমাধান হিসেবে এটি বিবেচিত হতে পারে।”
আয়োজিত মাঠ দিবস কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন প্রফেসর ড. মো. মোশাররফ উদ্দিন ভূঁইয়া, পরিচালক, পরিকল্পনা ও উন্নয়ন, বাকৃবি৷ ড. সালমা লাইজু, অতিরিক্ত পরিচালক, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, ময়মনসিংহ অঞ্চল৷ প্রফেসর ড. মাহমুদ হোসেন সুমন, উপ-প্রকল্প পরিচালক, SaNRice প্রকল্প৷ ড. মোহাম্মদ গোলাম কিবরিয়া, প্রধান, মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগ, বাকৃবি৷ রিউচি কাটসুকি, প্রকল্প সমন্বয়কারী, জাইকা, বাংলাদেশ৷ মো. সোহেল রানা, পিএইচডি ফেলো, মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগ, বাকৃবি৷ এছাড়াও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দ, পিএইচডি শিক্ষার্থীবৃন্দ এবং মাঠ পর্যায়ের প্রান্তিক কৃষকবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন৷
মিরাজ খান