ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ০৫ অক্টোবর ২০২৪, ২০ আশ্বিন ১৪৩১

চট্টগ্রামে বিএনপির সমাবেশে সালাহউদ্দিন আহমেদ

সংবিধান সংশোধন করবে নির্বাচিত পার্লামেন্ট

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস

প্রকাশিত: ২৩:০৭, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪

সংবিধান সংশোধন করবে নির্বাচিত পার্লামেন্ট

সালাহউদ্দিন আহমেদ

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, সংবিধান সংশোধনের পরামর্শ দিতে পারেন। কিন্তু সংবিধান সংশোধন করবে নির্বাচিত পরবর্তী পার্লামেন্ট। তাই অতিশীঘ্রই নির্বাচনমুখী সংস্কার সাধন করে গণতান্ত্রিক নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করুন। 
মঙ্গলবার বিকেলে চট্টগ্রাম মহানগরীর আলমাস মোড়ে আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস উপলক্ষে চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিএনপির শোভাযাত্রা ও  সমাবেশে অন্তর্বর্তী সরকারকে উদ্দেশ্য করে তিনি এ কথা বলেন। শোভাযাত্রা শুরুর আগে আলমাস মোড়ে একটি ট্রাকে অস্থায়ী মঞ্চে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয়, জেলা ও মহানগরের নেতারা। শোভাযাত্রায় নগর, জেলা এবং বৃহত্তর চট্টগ্রামের সকল জেলার নেতাকর্মীরা অংশ নেন।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উদ্দেশে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আপনারা সংবিধান সংশোধনের জন্য পরামর্শ দিতে পারেন। কিন্তু সে সংবিধান সংশোধন করবে নির্বাচিত পরবর্তী পার্লামেন্ট। সুতরাং প্রধান উপদেষ্টাসহ সকল উপদেষ্টাকে আহ্বান জানাই, যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচনমুখী সংস্কার সাধন করুন এবং গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করুন। তাহলে দেশবাসী আশ^স্ত হবে বাংলাদেশ শীঘ্রই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় যাচ্ছে। 
তিনি বলেন, এত রক্ত, এত ঘাম, এত প্রাণ, এত সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আমরা অর্জন করেছি বাংলাদেশে নতুন স্বাধীনতা দিবস, বাংলাদেশের নতুন গণতন্ত্র দিবস। বাংলাদেশের মানুষ গণতন্ত্রকে ছিনিয়ে নিয়ে এসেছে। কিন্তু গণতন্ত্র, এই নতুন স্বাধীনতা, এই বিজয়কে যদি আপনারা অর্থবহ করতে চান, তাহলে ধৈর্য্য ধরতে হবে। আন্দোলন জারি রাখতে হবে, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রকে মোকাবিলা করতে হবে।

সুতরাং চলমান এ আন্দোলন, যতদিন সত্যিকারভাবে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা না হবে, ততদিন চালু রাখতে হবে। প্রকৃত গণতান্ত্রিক নির্বাচনের মধ্য দিয়ে যতদিন পর্যন্ত একটি রাজনৈতিক সরকার প্রতিষ্ঠিত না হবে, সংসদ প্রতিষ্ঠিত না হবে, ততদিন পর্যন্ত আমরা রাজপথে এ আন্দোলন অব্যাহত রাখব। তিনি বলেন, বাংলাদেশে গণহত্যাকারীর আর কোনোদিন জায়গা হবে না।  শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের, গণহত্যাকারীদের কোনো রাজনীতি চলবে না। যদি গণহত্যাকারীদের রাজনীতি চলে, তাহলে বাংলাদেশ আবার পরাধীন হবে।

কোনো বিদেশী রাষ্ট্রের এখানে তাঁবেদারি চলবে না। যদি সত্যিকারভাবে স্বাধীন, সার্বভৌম, গণতান্ত্রিক, বৈষম্যহীন, যদি সাম্যভিত্তিক একটি রাষ্ট্র নির্মাণ করতে চান, যদি আইনের শাসনের রাষ্ট্র নির্মাণ করতে চান, তাহলে শহীদের রক্তের প্রতি সম্মান দেখিয়ে আমাদের পরস্পরের অধিকারের প্রতি স্বীকৃতি দিতে হবে। কেউ আইনের  চেয়ে বড় নন।
 নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, সবাই ধৈর্য ধরুন। সবাই সুশৃঙ্খল থাকুন। গণতান্ত্রিক আন্দোলন সংগ্রাম জারি রাখুন। যতদিন পর্যন্ত এ অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ফিরে যাবার ঘোষণা না দেয়, ততদিন এ আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা এবং উপদেষ্টাবৃন্দকে আহ্বান জানাই, যতদ্রুত সম্ভব নির্বাচনমুখী সংস্কার সাধন করুন এবং গণতান্ত্রিক নির্বাচনের একটি  রোডম্যাপ আপনারা ঘোষণা করুন। তাহলে এদেশের মানুষ আশ্বস্ত হবে যে, বাংলাদেশ সত্যি প্রকৃত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ফিরে যাবে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে সালাহউদ্দিন আহমেদ আরও বলেন, বাংলাদেশে বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবর্তন করেছিলেন জিয়াউর রহমান। ৯০ স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন খালেদা জিয়া। যার ফলে বাংলাদেশে পুনরায় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়, আমরাই সংসদীয় গণতন্ত্রের প্রবর্তন করি। ৯৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রবক্তাও বিএনপি।

তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিলুপ্ত করে দেওয়ার পর বাংলাদেশে শেখ হাসিনা হয় নতুন করে স্বৈরাচার আর  এ স্বৈরাচার পতনের জন্য নতুন বাংলাদেশ গড়ার জন্য, শোষণহীন বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য ছাত্র-জনতা বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দেয়। এ আন্দোলনে দ্বিতীয় শহীদ চকরিয়া-পেকুয়ার সন্তান ছাত্রদল নেতা ওয়াসিম। সমস্ত আন্দোলন সংগ্রামে ও যুদ্ধে বাংলাদেশে সবসময় নেতৃত্ব দিয়েছে চট্টগ্রাম।

কিন্তু আপনারা যদি মনে করেন, সবকিছু এমনি এমনি এসেছে, তাহলে এটা ভুল কথা। মোট ৪৮৫ জন শহীদের মধ্যে এ গণঅভ্যুত্থানে, এ গণবিপ্লবে ৪২২ জন শহীদ বিএনপির নেতাকর্মী। ১১৩ জনের বেশি ছাত্রদলের নেতাকর্মী। এ আন্দোলন সংগ্রামে ৭শ বেশি মানুষ গুমখুনের শিকার হয়েছে, যার মধ্যে ৪২৩ জন শুধু বিএনপির নেতাকর্মী। দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামে প্রায় ২৭০০ মানুষ বিভিন্নভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছে, বিচার বহির্ভূত হত্যাকা-ের শিকার হয়েছে, তার মধ্যে শত, শত মানুষ বিএনপির নেতাকর্মী।

×