ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৮ ভাদ্র ১৪৩১

ট্রাফিকের ভূমিকায় শিক্ষার্থীরা

স্টাফ রিপোর্টার, সাতক্ষীরা

প্রকাশিত: ২২:২৬, ৭ আগস্ট ২০২৪

ট্রাফিকের ভূমিকায় শিক্ষার্থীরা

শহরের সাতমাথায় সড়কে ট্রাফিকের দায়িত্ব পারন করছেন শিক্ষার্থীরা

শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর সাতক্ষীরার গ্রামাঞ্চলের হাট বাজারের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান  ভাংচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের মধ্যে এখনো আতঙ্ক বিরাজ করছে। ঘটনার দুই দিন পর বুধবারও  ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চালু করতে পারেনি। সংখ্যালঘু ব্যবসায়ীদের গ্রামের বাড়িতেও হামলা হয়েছে।

ব্যবসায়ীদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজের বিষয়ে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ হুমায়ুুন কবীর বুধবার বলেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে বুধবার থেকে উপজেলা পর্যায়ে সেনা ক্যাম্প বসানো হয়েছে। পরিস্থিতি দু’একদিনের মধ্যে স্বাভাবিক হবে বলে তিনি আশা করেন। এদিকে দেশে চলমান সহিংসতা রোধে জনগণকে শান্ত ও ধৈর্য ধারণের জন্য সেনাবাহিনীর পাশাপাশি সাতক্ষীরা জেলা বিএনপি ও জামায়াতের পক্ষ থেকে সড়ক-মহাসড়কে মাইকিং করা হচ্ছে। 
এদিকে দেশের চলমান পরিস্থিতিতে সড়কে বিশৃঙ্খলা রোধে সাতক্ষীরায় ট্রাফিক জ্যাম নিয়ন্ত্রণ ও পরিষ্কার-পরিচ্ছনতার কাজ করছে সাতক্ষীরার কোটা সংস্কার আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। এতে যান চলাচলে অনেকটাই গতি ফিরেছে।  একইসঙ্গে সড়কে সেই চিরচেনা যানজট না থাকায় স্বস্তি ফিরেছে সাধারণ মানুষের মাঝে। স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে মানুষের জীবনযাত্রা।

বুধবার সকালে শহরের খুলনা রোড মোড়, পাকাপোল মোড়, জজকোর্ট মোড়, সদর হাসপাতাল মোড়, এসপি বাংলো মোড়, বড় বাজার সড়কসহ কয়েকটি জনগুরুত্বপূর্ণ এলাকায় সড়কের যানজট নিরসনে কাজ করতে দেখা যায় শিক্ষার্থীদের। এছাড়াও বিভিন্ন এলাকায় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কর্মসূচি পালন করছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীরা জানায়, শহরে ট্রাফিক পুলিশ দায়িত্বে না থাকায় তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়ে সাধারণ মানুষ ভোগান্তিতে পড়েছিল, এ কারণে তারা গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোতে যানজট নিরসনের জন্য কাজ করছে।

চট্টগ্রাম 
স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস থেকে জানান, সড়কে শৃঙ্খলা রক্ষার কাজে নেমেছে শিক্ষার্থীরা। বুধবার দ্বিতীয় দিনের মতো শিক্ষাথীদের এই তৎপরতা দেখা যায়। 
চট্টগ্রাম মহানগরীর সকল সড়কের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে বিভক্ত হয়ে শিক্ষার্থীরা যানবাহন চলাচলে শৃঙ্খলা রক্ষার কাজ পরিচালনা করছে। এদিন সকাল থেকে পুরোদিন এই কার্যক্রম দেখা যায়। পুলিশ না থাকায় ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের কাজে আনসার সদস্যরাও নিয়োজিত রয়েছেন। গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোতে এমন তৎপরতায় অনেকটাই শৃঙ্খলা ফিরে আসে।

এদিকে, সড়কের শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি শিক্ষার্থীরা নেমেছেন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজেও। সড়ক ও ফুটপাতে গত সপ্তাহখানেক ধরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ইটের টুকরো, ময়লা আবর্জনা পরিষ্কার করতে দেখা যায় ছাত্র-ছাত্রীদের। কিছু প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ইউনিফরম পরিধান করেই এ কাজে নেমে পড়েন। শিক্ষার্থীরা জানিয়েছে, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়করা কেন্দ্রীয়ভাবে যে ঘোষণা দিয়েছেন সেই অনুযায়ী তারা কাজ করছেন। তাদের প্রতি নির্দেশনা রয়েছে সাধারণ মানুষের পাশে থাকতে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সেবা সংস্থাগুলোর অবস্থা স্বাভাবিক পর্যায়ে না আসা পর্যন্ত তারা এ দায়িত্বে নিয়োজিত থাকবেন।

নেত্রকোনা
নিজস্ব সংবাদদাতা, নেত্রকোনা থেকে জানান, ট্রাফিক পুলিশ নেই। কিন্তু তাই বলে রাস্তায় চলতে কারও সমস্যা হচ্ছে না। নিয়মমতো সারি বেঁধে চলছে গাড়ি, ইজিবাইক, রিক্সাসহ ছোট-বড় সব যানবাহন। রোগীবাহী কোনো অ্যাম্বুলেন্স বা গাড়ি দেখলেই যেতে দেওয়া হচ্ছে বিকল্প লেন দিয়ে। ট্রাফিক পুলিশের অনুপস্থিতিতে স্বেচ্ছাশ্রমে এ দায়িত্ব পালন করছেন বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা।

বুধবার জেলা শহরের প্রধান প্রধান সড়কগুলো ঘুরে দেখা গেছে এমন দৃশ্য। এই শিক্ষার্থীরা চলমান বৈষম্যবিরোধী কোটা আন্দোলনের সমর্থক। সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, বুধবার জেলা সদরের কোনো সড়কে ট্রাফিক পুলিশ দায়িত্ব পালন করেনি। এ কারণে সকালের দিকে বিভিন্ন পয়েন্টে কিছুটা যানজট সৃষ্টি হয়। কিন্তু সকাল নয়টার পর শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমে এলে মুহূর্তের মধ্যে দৃশ্যপট পাল্টে যায়।

এরপরে আর কোথাও কোনো যানজট দেখা দেয়নি। ছোট ছোট দলে বিভক্ত শিক্ষার্থীরা কেউ বাঁশি ফুঁকছেন। কেউ স্টিক হাতে গাড়ি থামাবার সংকেত দিচ্ছেন। আবার কেউ হাতের ইশারায় দ্রুত চলে যাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন। তাদের কথামতো চালকরাও সারি বেঁধে যানবাহন চালাচ্ছেন। আবার অকষ্মাৎ কেউ নিয়ম ভঙ্গ করলে দ্রুত কাছে গিয়ে তাকে সারিতে ঢোকাচ্ছেন। মোটরসাইকেল চালকদের মাথায় হেলমেট না দেখলে অনুরোধ করছেন হেলমেট পরার।

ঝালকাঠি 
নিজস্ব সংবাদদাতা, ঝালকাঠি থেকে জানান, ট্রাফিক পুলিশ না থাকায় যানবাহন চলাচলে শৃঙ্খলা রক্ষায় শিক্ষার্থী, রেড ক্রিসেন্ট, স্কাউট, গার্লস গাইড সদস্যরা বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করছে। বুধবার সকাল ১০টা থেকে যানবাহনের চাপ বাড়তে থাকায় তারা মাঠে নামে। শিক্ষার্থীদের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে বিভিন্ন মহল।

তবে, ট্রাফিক আইন ও সংকেত সম্পর্কে প্রশিক্ষণ না থাকায় সাময়িক যানজট পরিস্থিতি মাঝে মাঝে দেখা যায়। ট্রাফিক দায়িত্ব পালনকারী শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে বর্তমানে ট্রাফিক পুলিশ না থাকায় আপতকালীন সমস্যার কারণে তারা এই কাজ করছেন এবং অতিদ্রুত পুলিশের দাবি যুক্তি সঙ্গতভাবে সমাধান করে তাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কাজে নিয়োগ করা দরকার। ট্রাফিক পুলিশ দায়িত্ব নেওয়ার পরে তারা চলে যাবে।
 
জামালপুর 
নিজস্ব সংবাদদাতা জামালপুর থেকে জানান, জেলা জুড়ে শিক্ষার্থীরা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ শুরু করেছেন। এমনিভাবে তারা শহরের যানজট নিরসনে দিচ্ছে ট্রাফিক সেবা। বুধবার শহরের বকুলতলা মোড়ে জেলা আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয় পরিষ্কার করার মধ্য দিয়ে শহরের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ শুরু করেছেন শিক্ষার্থীরা।

সেই সঙ্গে তারা আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়কে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলা শাখার কার্যালয় হিসেবে ঘোষণা করেছেন। শিক্ষার্থীরা জানান, শেখ হাসিনা পদত্যাগের পর জেলাজুড়ে ঘরবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে নৈরাজ্য, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। সেই সকল ঘরবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও রাস্তা-ঘাটের সকল ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার করার কাজ শুরু করেছেন শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীরা জেলা শহরসহ সকল যানজট নিরসনের কাজ করছে। এদিকে গত দুইদিনে জেলাজুড়ে যে লুটপাট হয়েছে তা স্ব-স্ব জায়গায় বিকেল পাঁচটার মধ্যে ফেরত দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। 

ভালুকা 
নিজস্ব সংবাদদাতা, ভালুকা, ময়মনসিংহ থেকে জানান, ভালুকায় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ক্লিন আপ ভালুকার আয়োজনে পরিচ্ছন্নতা অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। বুধবার সকালে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ভালুকা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ওই পরিচ্ছন্নতা অভিযান অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যরা পরিচ্ছন্ন অভিযানের পাশাপাশি রাস্তার ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণেরও কাজ করেন।

জানা যায়, চলমান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণসহ রাস্তাঘাট ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই ক্লিন আপ ভালুকা, ইত্তেফাক ব্লাড ডোনার্স সোসাইটি, ভালুকা সরকারি কলেজ রোভার স্কাউটস গ্রুপ ও ছাত্র-জনতা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যোগাযোগ করে ওই পরিচ্ছন্নতা অভিযান ও রাস্তায় ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে কাজ করতে বাসস্ট্যান্ড এলাকায় একত্রিত হয়। পরে রাস্তার ময়লা পরিষ্কারের পরে সারাদিন রাস্তায় ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে কাজ করে। 

ঠাকুরগাঁও
নিজস্ব সংবাদদাতা, ঠাকুরগাঁও থেকে জানান, মাথার ওপর প্রখর রোদ্রের উত্তাপ, মুখে বাঁশি নিয়ে দু’হাত মেলে ধরে ঈশারায় ঠাকুরগাঁওয়ে সড়কের শৃঙ্খলা ফেরাতে ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্ব পালন করছে এক ঝাঁক ছাত্রসহ বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কর্মীরা। এ সময় বিভিন্ন দোকানপাট লুটপাট ও ভাঙচুর ঠেকাতে দেখা গেছে শিক্ষার্থীদের। আর এ কাজে তাদের পানি, নাস্তা, ছাতাসহ  বিভিন্নভাবে সহায়তা করছেন স্থানীয় লোকজন ও প্রতিষ্ঠান। 
পথ চলাচলে মানুষের যেন অসুবিধা না হয় এবং সড়কে যেন কোনো দুর্ঘটনা না ঘটে এর জন্য সেনাবাহিনীকে সাময়িক সহায়তার উদ্দেশ্যে মাঠে নেমেছেন এসব শিক্ষার্থী ও নিরাপদ সড়ক চাই, স্কাউট ও ইসলামী শাষণ তন্ত্রের যুব সঙ্গের কর্মীরা। বুধবার সরেজমিনে দেখা যায়, ঠাকুরগাঁও শহরের প্রাণকেন্দ্র চৌরাস্তা মোড়, বাসস্ট্যান্ড চত্বরে ঠাকুরগাঁও-পঞ্চগড়-ঢাকা মহাসড়কসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানে যানবাহনের চলাচল নিয়ন্ত্রণ করছে এবং কিছু শিক্ষার্থী ও কর্মী হাতে মাইক নিয়ে সবাইকে আহ্বান করছে যাতে শৃঙ্খলা বজায় রাখে।

×