ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ১৯ মে ২০২৫, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

মানা হয়নি নীতিমালা, গোয়েন্দারা ছিল অন্ধকারে

টার্গেট কেপিআই!

আজাদ সুলায়মান

প্রকাশিত: ০০:২৩, ২ আগস্ট ২০২৪

টার্গেট কেপিআই!

দুর্বৃত্তদের দেওয়া আগুনে পুড়েছে রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা।

দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা বা কী পয়েন্ট ইনস্টলেশনকে সংক্ষেপে বলা হয় কেপিআই। বঙ্গভবন, গণভবন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, জাতীয় সংসদ, বিমানবন্দর, সচিবালয়, বিটিভি, কারাগার এবং জাতির পিতার সমাধিস্থলসহ সারাদেশে বর্তমানে ৫৮৭টি কেপিআই রয়েছে। এগুলোর নিরাপত্তার কার্যক্রম দেখভাল করার জন্য রয়েছে সরকারের একটি শক্তিশালী  নীতিমালা কমিটি। মূলত একটি দেশের কেপিআইয়ের নিরাপত্তা ব্যবস্থার ওপর সামগ্রিক জাতীয় নিরাপত্তা অনেকাংশে নির্ভরশীল।

এ কারণে ১৯৯৭ সালে ইংরেজিতে প্রণীত কেপিআইয়ের নিরাপত্তাবিষয়ক নীতিমালাটি বাংলায় হালনাগাদ করা হয়। যা কেপিআই নিরাপত্তা নীতিমালা ২০১৩ নামে পরিচিতি পায়। কেপিআইয়ের নিরাপত্তা সংক্রান্ত নির্দেশনায় বলা হয়েছে, নিরাপত্তা বাড়ানোর পাশাপাশি তদারকি বাড়াতে হবে। যেসব কেপিআইয়ের সীমানা নির্ধারণ করা নেই, সেগুলোর সঠিক সীমানা নির্ধারণ করে দ্রুত প্রাচীর দিতে হবে। আগের দেওয়া যেসব সুপারিশ বাস্তবায়ন হয়নি সেগুলো ত্বরিত বাস্তবায়ন করতে হবে।

কেপিআইয়ের আশপাশে অবৈধ দখলদাররা যেসব স্থাপনা নির্মাণ করেছে সে বিষয়ে জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে। সব কেপিআইকে সিসি ক্যামেরার আওতায় আনার পাশাপাশি তার মেমোরি কমপক্ষে এক বছর সিডিতে সংরক্ষণের ব্যবস্থা নিতে হবে। স্থাপনার নিরাপত্তায় পুরো এলাকা ফ্ল্যাড লাইট অথবা সার্চ লাইট দিয়ে আলোকিত করে রাখতে হবে। নষ্ট সিসি ক্যামেরা চালু ও জনবল বাড়াতে হবে। সব কেপিআইয়ের জন্য নিরাপত্তা কমিটি গঠন করতে হবে। যেসব কেপিআইয়ে কমিটি নেই সেখানে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। কেপিআই নীতিমালা অনুযায়ী নিয়মিত এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠাতে হবে। প্রাত্যহিক ঘটনা নোট বইয়ে লিপিবদ্ধ করতে হবে।

যেখানে নিরাপত্তা ব্যবস্থা তুলনামূলক দুর্বল সেখানে দ্রুত প্রহরা চৌকি স্থাপন করতে হবে। বিশেষ প্রয়োজনে কোনো দর্শনার্থী আসলে তাদের নাম-ঠিকানা, আসা ও যাওয়ার তারিখ, সময়, উদ্দেশ্য ইত্যাদি বিস্তারিতভাবে লিপিবদ্ধ ও রেজিস্ট্রারে সংরক্ষণ করতে হবে। এতে কোনো সময় কারা এলো বা গেল এর একটি পরিসংখ্যান থাকবে যা প্রয়োজনীয় মুহূর্তে কাজে লাগতে পারে। প্রতিষ্ঠান ও বাসাবাড়ির চতুর্দিকে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা করতে হবে আলোযুক্ত স্থানে দুষ্কৃতকারীরা সহজে প্রবেশ করতে চাইবে না।

সম্ভব হলে প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে সিসিটিভি লাগানোর ব্যবস্থা করতে হবে। সিসিটিভির ফুটেজ থেকে যে কোনো অপরাধীকে পুলিশের পক্ষে শনাক্ত করা সহজ হবে। যানবাহন তল্লাশির জন্য ভেহিকেল সার্চ মিররের ব্যবস্থা করা আবশ্যক। ভেহিকেল সার্চ মিরর যে কোনো বড় ধরনের বিপদ থেকে আপনাকে রক্ষা করতে সহায়ক হবে। প্রতিষ্ঠান ও স্থাপনাসমূহের প্রবেশ মুখে প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে লাগেজ স্ক্যানার স্থাপন করতে হবে। পর্যাপ্ত সংখ্যক প্রাইভেট সিকিউরিটি গার্ড নিয়োগ করতে হয়। প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে সশস্ত্র আনসার নিয়োগ করতে হবে।
কিন্তু এই নীতিমালা দেশের কেপিআইগুলো কতটা অনুসরণ করে চলছে, তা বড় ফুটে উঠেছে গত সপ্তাহের কোটা আন্দোলনকেন্দ্রিক সহিংসতায়। রাজধানীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা বাংলাদেশ টেলিভিশন, হানিফ ফ্লাইওভার, দুর্যোগভবন, সেতু ভবন, ডেটা সেন্টার, বিদ্যুৎ অফিস, কারাগার, থানা, পুলিশ ফাঁড়ি, মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপেসওয়েসহ অনেক কেপিআই গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, পোড়ানোর পর লুটপাট হয়েছে।

বিটিভির মতো ক শ্রেণির কেপিআই শুধু পুড়িয়েই ক্ষান্ত হয়নি দুর্বৃত্তরা, সেটা দখলও করে রাখতে সক্ষম হয়েছে। এসব ঘটনায় এখন নতুন করে সামনে এসেছে কেপিআইগুলোর নড়বড়ে নিরাপত্তার বিষয়টি। প্রশ্ন উঠেছে, এসব প্রতিষ্ঠানে আদৌ কেপিআইর সর্বশেষ নীতিমালা অনুসরণ করে নিরাপত্তা ব্যবস্থা সাজানো হয়েছে নাকি কোনো ধরনের গাফিলতি ছিল। আর গোয়েন্দারাই কেন বা ছিল এত অন্ধকারে।

এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত সপ্তাহের সহিংসতায় দেশের অনেক কেপিআই হামলার শিকার হয়েছে। অভাবনীয় কায়দায় হামলা চালানো হয়েছে বিটিভিসহ সেতু ভবন, সড়ক ভবন, মেট্রোরেল, এলিভেটেড ও হানিফ ফ্লাইওভারসহ অনেক স্থাপনায়। কীভাবে কারা এসব প্রতিষ্ঠানে হামলা করেছে এবং আগুন  দিয়েছে, গোয়েন্দা সংস্থার তদন্তে সেগুলো বেরিয়ে আসছে। অনেক ঘটনার ভিডিও ফুটেজও পাওয়া গেছে। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের প্রধান হারুন উর রশীদ বলেন, মেট্রোরেল, সেতু ভবন, বিটিভিতে কারা কীভাবে হামলা চালিয়ে আগুন দিয়েছে, লুটপাট করেছে সবই শনাক্ত করা গেছে। ফুটেজ মিলেছে। আরও পাওয়া যাবে। 
এ বিষয়ে একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান বলেন, বিটিভিসহ  অন্যান্য কেপিআইতে যে কায়দায় হামলা চালানো হয়েছে, তাতে কেপিআইর নিরাপত্তা ঘাটতিই বড় হয়ে চোখে পড়ছে। বিটিভি দেশের ‘ক’ শ্রেণির কেপিআই হওয়া সত্ত্বেও সেটা রক্ষা যায়নি। বলা চলে হামলাকারীরা অনেকটা বিনা বাধাতেই গেট ঠেলে ভেতরে ঢুকে আগুন লাগিয়ে তা-ব চালিয়েছে। এখানে নিরাপত্তা ছিল একেবারেই নড়বড়ে। হাতেগোনা ক’জন আনসার পুলিশ ও বিজিবি। প্রতিষ্ঠানটির ডিজি ড. জাহাঙ্গীর আলমের ভাষ্যমতে, এখানে পর পর দুবার হামলা ও দখল করা হয়েছে। নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করার সুযোগ ছিল। 
এ বিষয়ে জানা গেছে, কেপিআইগুলোতে সার্বিক নিরাপত্তা নজরদারি ও হালনাগাদ করার জন্য একটি কমিটি রয়েছে, যা কেপিআই ডিসি নামে অভিহিত। অতিরিক্তি সচিব বা যুগ্ম সচিব পদমর্যাদার একজনকে প্রধান করে গঠিত ওই কমিটি কীভাবে, কত সময় অন্তর অন্তর নিরাপত্তা বিষয়ে কাজ করবে, সেটার সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। সেই নির্দেশনা অনুযায়ী সাম্প্রতিক সহিংসতার শিকার হওয়া কেপিআইগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিতে অনেক ঘাটতি থাকার বিষয়টি সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে।

নরসিংদী কারাগারে যেভাবে হামলা চালিয়ে অস্ত্র লুট, বন্দি ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটেছে সেটা ছিল অত্যন্তু সুপরিকল্পিত। অত্যন্ত ঠান্ডা মাথায় জঙ্গিরা রেকি করে এখানে হামলা চালিয়েছে। কিন্তু গোয়েন্দা সংস্থার পর্যবেক্ষণে সেটা আঁচ করা যায়নি। অথচ ব্রিটিশ আমলের আইনেই কারা নিরাপত্তার বিষয়ে সুস্পষ্ট বিধান রয়েছে, কারাগারের সামনে কোনো উত্তেজিত জনতার সন্দেহভাজন চলাচলে গুলি করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়। কারাগার কর্র্তৃপক্ষকে সেই ক্ষমতা দেওয়া আছে। এমন সুরক্ষা ব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও নরসিংদী জেলা কারাগার কোনো ব্যবস্থা নিয়ে রীতিমতো সন্ত্রাসীদের কাছে আত্মসমর্পণ করে বসে। দেশের অন্যতম কেপিআই হিসেবেও এখানে অনুসরণ করা হয়নি নিরাপত্তা ব্যবস্থা। 
দেশের কেপিআইগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিতে কেপিআইডিসি সার্বক্ষণিক সক্রিয় দায়িত্ব পালন করছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বছরখানেক আগে কেপিআইগুলোতে গতানুগতিক ব্যবস্থার বাইরে পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) তত্ত্বাবধানে তৈরি করা হয় বিশেষ সফটওয়্যার যা কেপিআই ম্যানেজমেন্ট সফটওয়ার হিসেবে পরিচিত। এর মাধ্যমে সারাদেশের সব কেপিআইয়ের নিরাপত্তার নির্দেশনা দেওয়া যায় এক ক্লিকেই।

এর ইনচার্জ হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল বিশেষ পুলিশ সুপার জাহিদ হোসেন ভূঁইয়াকে। কোন মুহূর্তে কার কী দায়িত্ব তা নিরূপণ করে ইভাকুয়েশন প্লানও আধুনিকায়নের ওপর জোর দেওয়া হয়। এর  আওতায় এসবি সদর দপ্তর থেকে ৬৪টি জেলার এসপি, মেট্রোপলিটন উপকমিশনার (ডিসি) এবং কেপিআইর দায়িত্বশীলদের কার্যক্রম মনিটরিং করা হচ্ছে। পাশাপাশি সব কেপিআই প্রধান ও নিরাপত্তা কর্মকর্তার ই-মেইল এবং টেলিফোনে নিয়মিত নতুন নতুন বার্তা দেওয়া হচ্ছে।

এসবি প্রধানের পক্ষে এসব বার্তা পৌঁছে দিচ্ছেন একজন পুলিশ সুপার। এর মাধ্যমে জেলা থেকে শত শত প্রতিবেদন আসে এসবি সদর দপ্তরে। প্রতি উত্তরে সদর দপ্তর থেকেও দেওয়া হয়েছে প্রায় তিন হাজার নির্দেশনা। এসবের মধ্যে ঈদের আগে-পরে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে-পরের নিরাপত্তা করণীয় নিয়ে নির্দেশনা রয়েছে। তারপরও কেপিআইগুলোর নিরাপত্তায় ছিল বড় ধরনের ত্রুটি ও ঘাটতি। 
রাজধানীর আরেক কেপিআই হানিফ ফ্লাইওভারেও  হামলা চালিয়ে ব্যাপক ক্ষতি করেছে দুর্বৃত্তরা। কেপিআই হিসেবে কি ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে জানতে চাইলে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ওয়ারী বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মো. ইকবাল হোসাইন দৈনিক জনকণ্ঠকে বলেন, ওয়ারীর জোনে মোট ১১টি কেপিআইয়ের নিরাপত্তায় বিশেষ নজরদারি ছিল। শুধু সারুলিয়ায় তিতাস গ্যাসের একটা অফিসে হামলা চালিয়ে গেট ভাঙচুর করা হয়েছে।

বাকিগুলো ছিল শ্যামপুর গেন্ডারিয়া ও ওয়ারী থানার অধীন। যাত্রাবাড়ী থানা পয়েন্টে ব্যাপক নিরাপত্তা থাকায় তারা এদিকে ঢুকতে পারেনি। যে কারণে বাকি কেপিআইগুলো ছিল অক্ষত। এগুলো এখন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সরেজমিন পরিদর্শন করছেন। নিয়মিত ব্রিফিং করছেন। তার মধ্যে দুর্ভাগ্যজনকভাবে হানিফ ফ্লাইওভারে হামলাও করেছে দুর্বৃত্তরা। তাদের আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে। চিহ্নিত করা গেছে অনেককেই।

নরসিংদী কারাগারসহ রাজধানীর কেপিআইগুলোর নিরাপত্তা ব্যর্থতার সম্পর্কে জানতে চাইলে সাবেক আইজিপি একেএম শহীদুল হক দৈনিক জনকণ্ঠকে বলেন, ব্যর্থতা ছিল কি ছিল না সেটা তদন্তের ব্যাপার। তবে সামগ্রিকভাবে বলা যেতে পারে কেপিআই নীতিমালা অনুযায়ী নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য কিছু সুনির্দিষ্ট নীতিমালা রয়েছে। প্রতিটি সংস্থার প্রধানই কেপিআই কমিটির প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। তিনি জাতীয় কেপিআই কমিটির নির্দেশনা মোতাবেক নিরাপত্তা নিশ্চিতে কাজ করবেন।

তবে সাম্প্রতিক বিটিভি নরসিংদী কারাগার অন্যান্য কেপিআইয়ে যে ধরনের হামলা ও ভাঙচুর লুটপাট করা হয়েছে তা নজিরবিহীন। এখন ভাবার সময় এসেছে- এগুলো এতদিন যেভাবে চলে আসছিল সেভাবেই চলবে নাকি আরও অত্যাধুনিক কোনো ব্যবস্থা প্রয়োগ করতে হবে। তদন্ত করতে দেখতে হবে কার কি ব্যর্থতা বা ভূমিকা ছিল। 
আপনি পুলিশের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকার সময় হেফাজতের মতো আন্দোলন ও অগ্নিসন্ত্রাস দৃঢ়ভাবেই মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়েছিলেন।

কিন্তু চলমান সহিংসতা দমনে এখনকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কেন এতটা ব্যর্থ হলো জানতে চাইলে শহীদুল হক বলেন, দুটো ভিন্ন ধরনে সহিংসতা ও  আন্দোলন। হেফাজতের আন্দোলন ছিল রাজধানীর ঠিক একটা পয়েন্টে। এবার তো গোটা রাজধানীসহ দেশজুড়ে একযোগে সহিংসতা চালানো হয়েছে। যে কারণে সীমিতসংখ্যক নিরাপত্তা বাহিনীকে হিমশিম খেতে হয়েছে। তখন এক জায়গার ফোর্স অন্যত্র মোতায়েন করা গেছে। এবার সেটা করা সম্ভব হয়নি।

তা ছাড়া এ ধরনের হামলা করা হতে পারে এটাই হয়তো বা কারোর ধারণায় ছিল না। বিটিভি হয়তো কখনো কল্পনা করেনি এভাবে দুর্র্বৃত্তরা আন্দোলনের অজুহাতে হামলা চালিয়ে দখল করে নেবে। এখন দেশের সব কেপিআইকে নিরাপত্ত নিয়ে ভাবতে হবে। খতিয়ে দেখতে কার নিরাপত্তায় কি ত্রুটি আছে। প্রয়োজনে সব কিছু ঢেলে সাজাতে হবে।
এদিকে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো জানিয়েছে, এ ধরনের একটি হামলা হতে পারে সেই আশঙ্কা এ বছরের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই ছিল। প্রধানমন্ত্রী নিজেও বলেছেন, এ ধরনের আশঙ্কা ছিল।
জানা গেছে, গত নির্বাচনের আগেও গোয়েন্দাদের আশঙ্কা ছিল, জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে উন্নয়ন প্রকল্প বা গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাকে ‘টার্গেট’ করতে পারে নাশকতাকারী চক্র। এ কারণে এসব এলাকায় পুলিশের সংখ্যা বৃদ্ধি, সিসি ক্যামেরায় নজরদারি এবং সাদা পোশাকে গোয়েন্দা সদস্য বাড়ানোও হয়েছিল। তখন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প, মাতারবাড়ী কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র, আশুগঞ্জ পাওয়ার প্লান্ট, মোংলা ও পায়রা বন্দরে বাড়ানো হয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা। লোকবলের ঘাটতি সত্ত্বেও বিশেষ নজরদারি নেয়া হয়েছিল।

কেপিআই এলাকার কোথাও কোথাও বাইরের সাধারণ লোকদের যাতায়াত করার সুযোগ ছিল না। এসব এলাকায় উন্নয়ন কেন্দ্রের দেশীয় লোকদের পাশাপাশি বিদেশী লোকদের আনাগোনা সবচেয়ে বেশি। এ কারণে নিরাপত্তার অজুহাত যেন কেউ তুলতে না পারে বিষয়টি মাথায় রেখেই অ্যাডভান্স ইনটেলিজেন্সের অংশ হিসেবে নিরাপত্তা ব্যবস্থা কয়েকগুণ বাড়ানো হয়। প্রায় ৬০০ স্থাপনা বিভিন্ন ক্যাটাগরির আওতায় আনা হয়। এর মধ্যে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের বাইরে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে বিশেষ নজর রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর।
অপর একটি গোয়েন্দা সংস্থা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নাশকতা করতে পারে এমন অনেকে ছিল গোয়েন্দা জালে। সে সময় আমেরিকার নতুন ভিসানীতিতে উজ্জীবিত হয় বিএনপি ও তার সমমনা দলগুলো। তারপর নতুন করে যুক্ত হয় মিশন নিয়ে চক্রান্ত। বিএনপি নেতাকর্মীদের ধারণা এসব চক্রান্ত তাদের ক্ষমতায় যাওয়ার পথ মসৃণ করবে।

এ ধারণা থেকে তারা ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্নে বিভোর ছিল। ফলে তাদের মাঝে নতুন করে উদ্দীপনা তৈরি হয়। এ থেকে তারা গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় হামলা চালিয়ে বহির্বিশ্বের দৃষ্টি আকৃষ্ট করার চেষ্টা চালাতে পারে। বহির্বিশ্বে সব ধরনের পণ্যের দাম বাড়ার কারণে তার প্রভাব পড়েছে দেশের বাজারগুলোতেও। এতে সাধারণ মানুষের স্বাভাবিক জীবন-জীবিকা ব্যাহত হচ্ছে। এ সুযোগ কাজে লাগাতে বিএনপি ও জামায়াত নানা ধরনের তৎপরতা চালায়। গোয়েন্দা প্রতিবেদনে এমন তথ্য পাওয়ার পর নড়েচড়ে বসে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ঊর্ধ্বতনরা।

প্রতিটি বিদ্যুৎকেন্দ্রে বাড়তি পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা নজরদারি রাখার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। একই সঙ্গে থানার ওসিদের নানান দিকনির্দেশনা দেওয়া হয় জেলার পুলিশ সুপাররা। তা ছাড়া রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোতেও নজরদারির আওতায় আনা হয়। কিন্তু হঠাৎ কোটা আন্দোলনে ছাত্রদের আন্দোলন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে হঠাৎ ছিনতাই হয়ে যাবে বিএনপি-জামায়াত-শিবির ও দুবর্ৃৃত্তদের হাতে- সেটা  ছিল গোয়েন্দাদেরও ধারণাতীত। 
মূলত গোয়েন্দারা অন্ধকারে থাকায় এত কেপিআই দুর্বৃত্তদের টার্গেটে পড়ে। অন্যদিকে নীতিমালা অনুযায়ী নিরাপত্তা ব্যবস্থা না নেওয়ায় কেপিআইগুলোতে এত নাশকতা ও লুটপাটের সুযোগ পেয়েছে দীর্ঘদিনের সুযোগে থাকা দুর্বৃত্তদের দল।

×