ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১৬ জুন ২০২৪, ২ আষাঢ় ১৪৩১

সবচেয়ে ছোট মসজিদ

আবু কায়সার শিপলু

প্রকাশিত: ০১:১৬, ২৪ মে ২০২৪

সবচেয়ে ছোট মসজিদ

সবচেয়ে ছোট মসজিদ

গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলায় অবস্থিত দেশের সবচেয়ে ছোট মসজিদটি সংস্কার করা হয়েছে। পলেস্তারা খসা, শ্যাওলা পড়া মসজিদটি এখন দূর থেকেই নয়ন কাড়ছে লোকজনের।
এক সময় ভেঙে যাওয়া, কোথাও সাদা রং উঠে শ্যাওলা জমে কালচে হয়ে যাওয়া দেওয়াল, দেখে বোঝার উপায় ছিল না যে এটি মসজিদ। তবে উপরিভাগের একটিমাত্র গম্বুজ জানান দিত এটি আসলে একটি মসজিদ। চুন, সুরকি ও ইট দিয়ে তৈরি এই মসজিদটির চার কোণায় থাকা চারটি পিলারের নান্দনিক কারুকার্য  প্রায় বিলীন হয়ে যাওয়া ছয় ফুট দৈর্ঘ্যরে এক গম্বুজ মসজিদটি নতুন রূপে সেজেছে প্রাচীন স্থাপত্য নকশা ও আরবি হরফে।

স্থাপত্যটিকে ঘিরে শুরু থেকেই মানুষের আগ্রহের শেষ নেই। কে কখন এটি নির্মাণ করেছেন, তার সঠিক কোনো তথ্য নেই। তবে এলাকায় জনশ্রুতি আছে, কয়েকশ বছর আগে এক রাতে অলৌকিকভাবে সৃষ্টি হয়েছে মসজিদটি। কালের বিবর্তনে মসজিদটি জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছিল। দীর্ঘদিন পর মসজিদটি সংস্কার করা হয়েছে। সম্প্রতি এর সংস্কার কাজ শেষ হয়েছে। রং করা হয়েছে।

দেখে মনে হচ্ছে, নবনির্মিত মসজিদ। যা এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে দর্শনার্থীদের মধ্যে। সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, ঐতিহাসিক এ মসজিদটি এক নজর দেখতে ভিড় করছেন কাছের ও দূরের উৎসুক মানুষ। তবে পাশেই বড় একটি মসজিদ নির্মিত হওয়ায় ছোট মসজিদটিতে নামাজ আদায় করা হয় না।
মসজিদটি গাইবান্ধার পলাশবাড়ী পৌর শহরের নুনিয়াগাড়ি গ্রামে অবস্থিত। এর পূর্বে রংপুর-ঢাকা মহাসড়ক ও পশ্চিম পাশ দিয়ে গেছে পলাশবাড়ী-ঘোড়াঘাট সড়ক। দুই সড়কের ঠিক মাঝখানে নুনিয়াগাড়ী গ্রামের বুক চিড়ে নির্মিত পিচঢালা সড়কের দক্ষিণে অবস্থিত ঐতিহাসিক এ মসজিদটি। পলাশবাড়ী জিরো পয়েন্ট চৌমাথা মোড় থেকে মসজিদটির দূরত্ব আধা কিলোমিটার।

এটি দেশের সবচেয়ে ছোট এক গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদ, যা প্রাচীন ইসলামিক ঐতিহ্যের এক অনন্য নিদর্শন। যা কালের সাক্ষী হয়ে আজও দাঁড়িয়ে আছে। এটি প্রতœতত্ত্ব অধিদপ্তরের তালিকাভুক্ত একটি প্রতœতাত্ত্বিক স্থাপনা। অন্তত আড়াইশ বছরের পুরনো এ মসজিদটি এক কক্ষবিশিষ্ট। এর উপরিভাগে একটি গম্বুজ এবং চার কোণায় রয়েছে চারটি পিলার। প্রাচীন এ মসজিদটিতে একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারেন ইমামসহ চার থেকে পাঁচজন।

মসজিদটির অভ্যন্তরে নামাজের জায়গা রয়েছে দৈর্ঘ্য-েপ্রস্থে মাত্র ছয় ফুট। মণ্ডল পরিবারের সদস্য মসজিদ কমিটির সাবেক সেক্রেটারি আব্দুল মতিন মণ্ডল জানান, মসজিদটি সংরক্ষণের জন্য জেলা-উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে সরকারের প্রতœতত্ত্ব বিভাগসহ বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন করা হয়। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর মসজিদটি সংরক্ষিত প্রতœতাত্ত্বিক স¤পদ হিসেবে ঘোষণা করে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়।

ফলে মসজিদটি রংপুর বিভাগের মধ্যে প্রাচীন স্থাপত্যের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে। তিনি আরও জানান, মসজিদটির স্মৃতি রক্ষায় এর পূর্বপাশে নতুন বড় একটি মসজিদ নির্মিত হয়েছে। যেখানে নামাজ আদায় করা হয়।  মসজিদ কমিটির বর্তমান সভাপতি ডা. সায়াদ মিয়া জানান, প্রাচীন এ অনন্য নিদর্শন রক্ষায় যুগ যুগ ধরে বিভিন্ন দপ্তরে সংস্কারের দাবি জানিয়ে আসছিল এলাকাবাসী। কিন্তু কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। 
আবু কায়সার শিপলু, গাইবান্ধা

×