ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০২ মে ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১

কুষ্টিয়ায় ভূমিদস্যুদের কবলে গড়াই খাল

নিজস্ব সংবাদদাতা, কুষ্টিয়া

প্রকাশিত: ২২:৩৩, ৭ মার্চ ২০২৪

কুষ্টিয়ায় ভূমিদস্যুদের কবলে গড়াই খাল

মিরপুর উপজেলার গড়াই খালের বর্তমান অবস্থা

কুষ্টিয়া সদর ও মিরপুর উপজেলার আংশিক কৃষি জমির জলাবদ্ধতা দূরীকরণ, স্থানীয় জলপথ সম্প্রসারণে খননকৃত সাড়ে আট কিলোমিটার দীর্ঘ ও ২০-২৫ মিটার চওড়া গড়াই খালটি এখন ভূমিদস্যুদের দখলে। অভিযোগ উঠেছে দীর্ঘদিন ধরে নদী কমিশনের বিধি না মেনে কথিত উন্নয়নের অজুহাতে খোদ সরকারি দপ্তরের খামখেয়ালি ও অদূরদর্শিতার কারণেই খালটি বেদখল  হয়ে গেছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের এ খালটি ২০১৮ সালে উন্নয়নের কথা বলে কুষ্টিয়া পৌর কর্তৃপক্ষ অনাপত্তিপত্রের মাধ্যমে নিজেদের আয়ত্বে নেয়। পরে এলজিইডির এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার উদ্যোগে সরকারি অর্থব্যয়ে খালটির মূল প্রবাহ চ্যানেলে মাটি ভরাট করে একাধিক কালভার্ট ও রাস্তা নির্মাণ করার কারণেই দখলবাজির ষোলোকলা পূর্ণ হয়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। তবে এলজিইডির দাবি, খালটির ওপর যে কয়টি ব্রিজ-কালভার্ট করা হয়েছে, তা পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে পরামর্শ করেই করা হয়েছে।

অপরদিকে এলজিইডির এ দাবি নাচক করে বাপাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী জানান, কোনোরূপ এনওসি ছাড়াই এলজিইডি বিধি না মেনে এসব কালভার্ট নির্মাণ করেছে।     
বাপাউবো সূত্র জানায়, ১৯৪৯ সালে কুষ্টিয়া সদর উপজেলার মঙ্গলবাড়িয়া নামক স্থান থেকে গড়াই নদীর ডান তীর হতে উৎসারিত হয়ে কমলাপুর, মঙ্গলবাড়িয়া বাজার, উদিবাড়ি, বাড়াদি, উদিবাড়ি কলোনি, চৌড়হাস মন্দিরপাড়া, চেচুয়া, ফুলবাড়িয়া, জগতি, বাইপাস হয়ে মিনাপাড়া পর্যন্ত নির্মাণ করা হয় সাড়ে আট কিলোমিটার দৈর্ঘের এ গড়াই খাল।

নদী-খাল সুরক্ষা আইন না মেনে খালটির মূল প্রবাহ চ্যানেল ভরাট করে সড়ক বিভাগ একটি এবং এলজিইডি ১৫টি কালভার্টসহ রাস্তা নির্মাণের ফলেই খালটি এখন অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। কমলাপুর এলাকার বাসিন্দা নির্মাণ শ্রমিক ফারুক হোসেনের অভিযোগ, ‘উন্নয়নের কথা বলে খালের পাড়ে মাটি ভরাট করে তা দখল করে নেওয়া হচ্ছে।’ কুষ্টিয়া সদর উপজেলার ফুলবাড়িয়া গ্রামের চাষি হালিম সেখ জানায়, ‘গড়াই খাল ভরাট হয়ে দখল হতে হতে কোনো কোনো জাগায় এর চিহ্নও খুঁজে পাওয়া যায় না।’

নদী পরিব্রাজক দল কুষ্টিয়ার সভাপতি খলিলুর রহমান মজু বলেন, ‘উন্নয়নের নামে পাড় বেঁধে-ভরাট করে কোনোভাবেই খাল দখল করা যাবে না। খাল বা নদীর সীমানার মধ্যে এমন কোনো কাজ করা যাবে না যাতে মূল প্রবাহ বা চ্যানেল বাধাগ্রস্ত হয়। যদিও এ ধরনের কা-জ্ঞানহীন কাজের অভিযোগ সড়ক বিভাগ ও এলজিইডির মতো স্বয়ং সরকারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধেই রয়েছে অসংখ্য।’

এদিকে গড়াই খালটি সংস্কার করতে ২০১৮ সালে বাপাউবোর অনাপত্তিপত্রের মাধ্যমে নিজেদের আয়ত্তে নেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে কুষ্টিয়া পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন, ‘খালটি রক্ষায় প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণে ঘাটতি ছিল। তবে অদূরদর্শিতা, অবহেলা ও অপরিকল্পিত উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের কারণে খাল দখল হয়েছে- এমন অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে এলজিইডি কুষ্টিয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘ওই খালের ওপর ব্রিজ-কালভার্ট যে কয়টা হয়েছে, তার সবগুলোই পানি উন্নয়ন বোর্ডের অনাপত্তি নিয়েই করা হয়েছে।’ 
অপরদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাশিদুর রহমান বলেন, ‘পানি উন্নয়ন বোর্ডের কোনো জায়গায় সরকারি অন্যান্য সংস্থা উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের আবেদন করলে সেখানকার মূল অবকাঠামো অক্ষুণ্ণ রাখাসহ কিছু শর্তসাপেক্ষে আমরা অনাপত্তি দেই। কিন্তু কুষ্টিয়া পৌর এলাকাধীন কমলাপুর ও মঙ্গলবাড়িয়া এলাকায় গড়াই খালের ওপর ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণে এলজিইডি আমাদের কাছ থেকে কোনো এনওসি নেয়নি।’

মোরেলগঞ্জে ৮ বছর ধরে স্লুইসগেটের জলকপাট অকেজো 
নিজস্ব সংবাদদাতা, মোরেলগঞ্জ, বাগেরহাট থেকে জানান, বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে সোলমবাড়িয়া স্লুইসগেটের লিড গেটটি আট বছর ধরে অকেজো অবস্থায় পড়ে থাকায় পানি ওঠা-নামায় মূল ফটকটি দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহারের অনুপযোগী রয়েছে। নতুন করে জলকপাটের তলদেশে হঠাৎ করে ফাটল দেখা দেওয়ায় লবণ-পানি প্রবেশের আতঙ্কে পাঁচ ইউনিয়নের শত শত কৃষক। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে জরুরি ভিত্তিতে ফাটল মেরামতের জন্য জিও ব্যাগের মাধ্যমে ডাম্পিংয়ের নির্দেশনা দিয়েছেন। 
এ বিষয়ে হোগলাবুনিয়া ইউপি চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আকরামুজ্জামান ও ইউনিয়ন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, স্লুইসগেটের মূল ফটকটি অকেজোর বিষয়ে একাধিকবার পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। উপজেলা মাসিক সভায়ও উত্তোলন করা হয়েছে। বর্তমানে বিষখালী খাল পুনর্খননের চলমান কাজের কারণে আপতত ঝগড়ার খালের স্থানে বাঁধ দেওয়া রয়েছে। যে কারণে আপাতত লবণ-পানি প্রবেশ করতে পারছে না। 
এ সম্পর্কে জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু রায়হান মোহাম্মাদ আল বিরুনী বলেন, সোলমবাড়িয়া স্লুইসগেটের ফাটল সরেজমিন দেখে অস্থায়ী ভিত্তিতে জিও ব্যাগের মাধ্যমে ডাম্পিং করে মেরামত করা হচ্ছে। লিড গেট ও বোর্ড পার্কগুলো মেরামতের জন্য ঢাকা থেকে কারিগরি প্রশিক্ষক এনে পরিদর্শন করে মেরামতের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

×