ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৮ অক্টোবর ২০২৪, ২৩ আশ্বিন ১৪৩১

বেতন পেয়ে বন্ধুদের নিয়ে খাওয়া হলো না আলভীর, ট্রাকচাপায় গেল প্রাণ

প্রকাশিত: ১০:৪৭, ৩ মার্চ ২০২৪

বেতন পেয়ে বন্ধুদের নিয়ে খাওয়া হলো না আলভীর, ট্রাকচাপায় গেল প্রাণ

ট্রাক চাপায় মুমিনুল ইসলাম ওরফে আলভী (২৬) নামের এক যুবক নিহত হয়েছেন

বালুভর্তি ট্রাকের চাপায় মুমিনুল ইসলাম ওরফে আলভী (২৬) নামের এক যুবক নিহত হয়েছেন। ফরিদপুর শহরের মুজিব সড়কে শনিবার (২ মার্চ) রাত নাড়ে ৯টার দিকে শহরের জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সংলগ্ন সাবরেজিস্ট্রি কার্যালয়ের সামনে এ ঘটনা ঘটে।

মুমিনুল পাবনা সদর উপজেলার রাধানগর গ্রামের বাসিন্দা নুরুল ইসলামের ছেলে। তবে গত প্রায় দেড় বছর আগে তিনি ফরিদপুর সদর উপজেলার অম্বিকাপুর ইউনিয়নের চরনসিপুর গ্রামে বিয়ে করেন। তিনি পাঠাও কুরিয়ার সার্ভিসের ফরিদপুর শাখার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ইনচার্জ) হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

মুমিনুলের সহকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত এক বছর আগে কুরিয়ার সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান পাঠাওয়ের ফরিদপুর কার্যালয়ে পাঠাওয়ে ডেলিভারি বয় হিসেবে মুমিনুল চাকরি নেন। ছয়মাস যাওয়ার পর তার চাকরি স্থায়ী হয়। তিনি ওই কোম্পানিতে ফরিদপুর শাখার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে দ্বায়িত্ব পান।

পাঠাও ফরিদপুর শাখার ব্যবস্থাপক শামীম বিশ্বাস (২৬) বলেন, গতকাল আমরা বেতন পেয়ে রাত ৯টার দিকে শহরের নৌফেল চত্বরে অবস্থিত পাঠাওয়ের কার্যালয় থেকে তিনটি মোটরসাইকেলে সহকর্মী নুরে আলম ও মুমিনুলের সঙ্গে বের হই। উদ্দেশ্য ছিল শহরের কোনো রেস্টুরেন্টে বসে খাবার খাব। আমার মোটরসাইকেল সবার আগে ছিল। আমি জেলা প্রশাসকের কার্যালয় পার হয়ে জোরে চালিয়ে কিছুদূর যাওয়ার পর অন্যদুই সহকর্মীকে না দেখে দাঁড়িয়ে যাই। পরে মুমিনুলের মোবাইলে ফোন করলে সে ফোন না ধরায় আমি পেছনে গিয়ে দেখি বালুভর্তি একটি ট্রাক তাকে পেছন থেকে চাপা দিয়েছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, মুজিব সড়কের সুপার মার্কেট পৌরসভা, জেলখানা ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনের বিভিন্ন জায়গায় ছোট ছোট আকারে তিনটি করে গতি রোধক (স্পিড ব্রেকার) দেওয়া। এসব গতিরোধকে কোনও সতর্কীকরণ চিহ্ন দেওয়া নেই।এছাড়া শহরের ভেতরের প্রধানতম এই সড়কে বেপরোয়া বালুর ট্রাকগুলো শহরবাসীর দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসব ট্রাক ওইসব ছোট ছোট গতিরোধের ওপর গতি না কমিয়ে তুমুল গতিতে পার হয়। এজন্য ওইসব গতিরোধকে প্রচুর পরিমাণ বালু জমে থাকে। 

সাড়ে ৯টায় দুর্ঘটনা ঘটার পর ওই সড়কে রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত এক ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ থাকে। পরে পুলিশ গিয়ে উত্তেজিত জনতাকে থামিয়ে রাস্তার যান চলাচল স্বাভাবিক করে। 

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের অনুপ্রেরণায় গঠিত ফরিদপুর সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) ফরিদপুর শাখার সহ-সভাপতি পান্না বালা বলেন, শহরের মুজিব সড়কে হঠাৎ করেই যেসব গতিরোধ দেওয়া হয়েছে তাতে উপকারের চেয়ে ক্ষতিই বেশি হচ্ছে। ছোট ছোট ওই গতিরোধক এক জায়গায় তিনটি করে দেওয়া হয়েছে। যার ফলে ছোট ছোট যানবাহন দুর্ভোগ পোহাচ্ছে তবে ট্রাকসহ বড় যানবাহনগুলো খুব সাবলীলভাবে পার হয়ে যাচ্ছে। ফলে এগুলো কোনো কাজে তো আসছেই না বরং ট্রাকের বালু জমে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা ঘটাচ্ছে। ওইসব ছোট ছোট গতিরোধক উঠিয়ে দেওয়া উচিত বলে মনে করি।

ফরিদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) শৈলেন চাকমা বলেন, ঘটনার পর স্বাভাবিকভাবে স্থানীয় জনতা উত্তেজিত হয়ে পরে। তাদের দাবি ওইসব ছোট ছোট গতিরোধক উঠিয়ে দেওয়া। আমরা সংশ্লিষ্ট বিভাগের সঙ্গে কথা বলে এ ব্যাপারে উদ্যোগ নেব।

তিনি বলেন, নিহত মুমিনুলের মরদেহ ফরিদপুর কোতোয়ালি থানায় রয়েছে। এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এবি 

সম্পর্কিত বিষয়:

×