ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১১ মে ২০২৫, ২৮ বৈশাখ ১৪৩২

পদ্মবিলের রূপমাধুরী

তাহমিন হক ববী, নীলফামারী 

প্রকাশিত: ০১:৪২, ২৫ আগস্ট ২০২৩

পদ্মবিলের রূপমাধুরী

সিংদই বিলে গোলাপি পদ্ম

অনেকে বলে থাকেন ‘পদ্মদিঘি’, ‘পদ্মবিল’, ‘পদ্মপুকুর’ শব্দগুলো আজকাল বইয়ের অক্ষরেই সীমাবদ্ধ। বাস্তবতা যেন তেমন মেলে না। নতুন প্রজন্ম পদ্মবিল কথা শুনেই যেন বড় হচ্ছে। নীলফামারী জেলা সদরের সিংদই বিলে হাজারো পদ্মফুলে ভরে উঠেছে।
আলোর মতো ঝলমলে পদ্মফুল। দেখলেই মন ভরে যায়। যা নীলফামারীবাসীর কাছে একটি আকর্ষণীয় জায়গায় পরিণত হয়েছে। লতাভরা বিলের পানিতে হাজার হাজার গোলাপি পদ্ম। পদ্মপাতার ফাঁকে সূর্যের সোনালি আভা পানিতে প্রতিফলিত হয়ে সৌন্দর্য বাড়িয়েছে কয়েকগুণ।
বিল ভর্তি পদ্মফুল দেখতে সাত সকাল বা বিকাল থেকে সন্ধ্যা সেখানে ছুটে যাচ্ছেন মানুষজন। ডিঙ্গি নৌকায় বিলে ঢুকলে মনে হবে অভ্যর্থনা জানাচ্ছে পদ্মরা। নৌকায় করে পদ্মবিল ঘুরতে সময় লাগবে দুই থেকে তিন ঘন্টা। যাতায়াত ব্যবস্থাও ভালো। মন ভোলানো দৃশ্য দেখলে মুগ্ধ হবেন যে কেউ। 
শুক্রবার সরেজমিনে দেখা যায়, ছুটির দিন হওয়ায় অনেকে পরিবার পরিজন নিয়ে এই বিলে ছুটে এসেছেন। জানা যায়, গত পাঁচ সপ্তাহ ধরে নীলফামারী সদর উপজেলার ইটাখোলা ইউনিয়নের সিংদই গ্রামের সিংদই বিল পদ্মবিলে পরিণত হয়। মানুষজন দীর্ঘ সময় পার করছে সেখানে গিয়ে। সেই বিলে আগত দর্শনার্থীদের জন্য রয়েছে বসার আসন ও বিলে নিয়ে যাওয়ার জন্য নৌকা ও মাঝি। পদ্মফুলের কাছে যাওয়া মাত্রই মাঝিরা দর্শনার্থীদের ফুল না ছেঁড়ার জন্য অনুরোধ করেন।
জেলা শহরের বাবু পাড়ার গৃহিণী ফৌজিয়া জলি বলেন, বয়সের ভারেও থেমে থাকতে পারিনি। ছুটে গিয়েছি পদ্মবিলের সুন্দর পদ্ম দেখতে। মন জুড়িয়ে দুই চোখ মেলে দেখেছি। তিনি মনে করেন সঠিক পৃষ্ঠপোষকতা পেলে মৌসুমি পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব হবে এটি। 
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জেসমিন নাহার জানালেন কাজের অবসরে সময় পেলেই এখানে ছুটে আসি। পদ্মপাতার ফাঁকে সূর্যের সোনালি আভা পানিতে প্রতিফলিত হয়ে সৌন্দর্য বাড়িয়েছে কয়েকগুণ। এখানে এসে দেখতে পাই প্রতিদিনই এই বিলের অপরূপ সৌন্দর্য দেখতে বিভিন্ন প্রান্তের লোকজন আসছেন। নীলফামারী জেলা শহর থেকে ছয় কিলোমিটার দূরে ইটাখোলা ইউনিয়নের সিংদই গ্রামে এই বিলের অবস্থান। দিগন্ত বিস্তৃতি জলরাশির সিগ্ধতা দর্শনার্থীদের মনে আনন্দের দোলা দিয়ে যায়। প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে ওঠা গোলাপি পদ্ম ফুল বিলের সৌন্দর্যকে বাড়িয়ে দিয়েছে। এ বিলে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ পাওয়া যায়। ডিঙি নৌকায় ভেসে জলের ছন্দতালে পদ্মফুল ¯পর্শ করার টানে প্রতিদিনই দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসছেন প্রকৃতিপ্রেমীরা।
ডিঙি নৌকায় বিলে ঢুকলে মনে হবে যেন অভ্যর্থনা জানাচ্ছে পদ্মরা। সিংদই বিলের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে তিস্তা সেচ ক্যানেল। বিলের স্বচ্ছ পানিতে হাত ভিজিয়ে সুখের অনুভূতি নিচ্ছেন হাজারো প্রকৃতিপ্রেমী। পরিবারের ছোট সদস্যদের জলজ উদ্ভিদ স¤পর্কে ধারণা দিচ্ছেন। স্থানীয়রা জানান, ১২ দশমিক ৯ একর বিলের মধ্যে কয়েকটি মাছের ঘেরে এই পদ্ম ফুল ফুটত। ঘের পরিষ্কার করে ফুলগুলো পানিতে ফেলে দেয় তারা। ঘের থেকে অবমুক্ত হয়েছে এখন বিলটি। সেই থেকে চলমান বর্ষাকালে সিংদই বিলজুড়ে পদ্মের এই বিপুল সমাহারে নন্দিত হয়ে উঠছে।

 ইটাখোলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হেদায়েত ফকির শাহ্ বলেন, আমাদের জন্য এই পদ্মফুল আশীর্বাদ হয়ে উঠেছে। বিলের সৌন্দর্য সংরক্ষণের বিষয়ে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করে তিনি বলেন, আমরা চাইব এই পদ্মবিল যেন নষ্ট না হয় সে ব্যবস্থা করতে। 
নীলফামারী জেলা প্রশাসক পঙ্কজ ঘোষ জানান, সিংদই পদ্মবিলটি সংরক্ষণ করার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
তাহমিন হক ববী, নীলফামারী 

×