
মই দিয়ে সেতু পারাপার
দুই পাশে সংযোগ সড়ক (অ্যাপ্রোচ রোড) না থাকায় বাঁশের মই দিয়ে পারাপার করতে হয় নরসুন্দা নদীর উপর নির্মিত কালিগঞ্জ সেতুটি। এক বছর আগে সেতুর মূল অবকাঠামো নির্মাণ করা হলেও এরপর থেকে পড়ে আছে সংযোগ সড়কের কাজ। ফলে প্রায় ৭ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই সেতু আট-দশটি গ্রামের কয়েক হাজার মানুষের দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাড়িয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, সেতুটির অবস্থান নান্দাইল উপজেলার রাজগাতি ইউনিয়নের কালিগঞ্জ বাজারের পাশে নরসুন্দা নদীর ওপর। এটি নির্মাণ করেছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর। নির্মাণে ব্যয় প্রায় সাত কোটি টাকা।
সেতুর পশ্চিম পাশে রয়েছে ওই এলাকার প্রধান ব্যবসা কেন্দ্র কালীগঞ্জ বাজার, অগ্রণী ব্যাংকের শাখা ও বেশকয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। বাজার থেকে প্রায় চার কিলোমিটার দূরে ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ মহাসড়ক ও এক কিলোমিটার দূরে মুশুলী রেলওয়ে স্টেশন রয়েছে। এছাড়াও দুই পাড়ের আট-দশটি গ্রামের প্রায় ১৫ হাজার বাসিন্দার বসবাস। ফলে সেতুটির ব্যাপক প্রয়োজনীতা ছিল।
স্থানীয় লোকজন জানায়, সেতু না থাকার সময় দুই পাড়ের লোকজন শুকনো মৌসুমে বাঁশের সাঁকো এবং বর্ষায় ঝুঁকি নিয়ে নৌকা দিয়ে নদী পারাপার হতো। এতে বেশ কয়েকবার নৌকাডুবির ঘটনাও ঘটেছে। এমনকি মৃত্যুর মতো বেদনাদায়ক ঘটনাও ঘটেছে। কালিগঞ্জ বাজার মসজিদের ইমাম মোমতাজ উদ্দিন (৭২) বলেন, নগদাপাড়া গ্রাম থেকে প্রতিদিন এই সেতুর মই বেয়ে মসজিদে আসতে হয়। বাঁশের মইয়ে উঠতে ভয় লাগে। বিকল্প কোন ব্যবস্থা না থাকায় ঝুঁকি নিয়েই প্রতিদিন নামাজ পড়াতে আসি।
বাহাদুরপুর গ্রামের বৃদ্ধ কৃষক ইদ্রিস মিয়া (৭০) বলেন, কোন কাজে বাজারে এলে মই দিয়ে সেতুর উপরে উঠতে পারি না। এজন্য অন্যের সহযোগিতা নিতে হয়। বাজারের ফার্মেসী ব্যবসায়ী জুলফিকার আলী খান (৩৫) বলেন, নরসুন্দার নৌপথ ব্যবহার করে সিলেট থেকে বড় বড় নৌযানে করে তারেরঘাট বন্দরে পাথর আমদানি করেন ব্যবসায়ীরা। নৌপথ ঠিকিয়ে রাখার জন্য সেতুটি উঁচু করে নির্মাণ করা হয়েছে। ফলে সড়ক পথ থেকে সেতুটির দুই প্রান্তের উচ্চতা প্রায় দশ-বারো ফুটের বেশি হয়েছে। তাই সেতুর ওপরে উঠার জন্য সংযোগ সড়ক নির্মাণ করতে হবে।
সেতুর ঠিকাদার আবদুল গণি ভূঁইয়া বলেন, মূল সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ করেছেন। এখন সংযোগ সড়ক নির্মাণ হলে যানবাহন চলাচল করতে পারবে। এই জন্য পরিকল্পনা চলছে। এই বিষয়ে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নান্দাইল উপজেলা প্রকৌশলী শাহাবো রহমান সজীব বলেন, দুইপাশে সংযোগ সড়ক নির্মাণের জন্য জমি অধিগ্রহণ করার প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। এজন্য ইতিমধ্যে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। আপাতত সেতু ব্যবহারের জন্য কয়েক দিনের মধ্যেই একটা ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে।
এমএস