ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

শিলাইদহ ঘাট বিপর্যয়ের মুখে

পদ্মা শুকিয়ে বিশাল চর

কৃষ্ণ ভৌমিক, পাবনা

প্রকাশিত: ০১:০৬, ২৯ জানুয়ারি ২০২৩

পদ্মা শুকিয়ে বিশাল চর

পদ্মা শুকিয়ে এভাবেই চর জেগেছে 

পদ্মা এখন ধু ধু বালুচর। যতদূর চোখ যায় বালি আর বালি। মাঝ নদীতে চলছে ট্রাক, অটোভ্যান, মোটরসাইকেল। পদ্মা শুকিয়ে চর জেগে উঠায় পাবনা-কুষ্টিয়ার নৌযোগাযোগের একমাত্র ঘাট শিলাইদহঘাট বন্ধ হওয়ার উপক্রম। শিলাইদহ ঘাটের সাড়ে ৫ কিলোমিটার প্রমত্ত পদ্মার সাড়ে ৪ কিলোমিটারই শুকিয়ে গেছে। নদী শুকিয়ে যাওয়ায় দু’পাড়ের মানুষের জীবনযাপনে একদিকে যেমন নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে তেমনি জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হওয়ায় প্রাকৃতিক পরিবেশও হয়েছে বিপর্যস্ত।

পাবনা থেকে কুষ্টিয়ায় স্বল্প সময়ে কম খরচে যাতায়াতে শিলাইদহঘাট বহু প্রাচীনকাল থেকেই ব্যবহার হয়ে আসছে। দুই জেলার কর্মসংস্থানসহ আর্থসামাজিক কর্মকা-ে ঘাটটির রয়েছে ব্যাপক গুরুত্ব। প্রতিদিন কুষ্টিয়া থেকে বহু শ্রমিক এপারের পাবনায় কাজ করতে আসেন। আবার এপারের ব্যবসায়িক পণ্য নদীপথে কুষ্টিয়ায় পরিবাহিত হয়। পাবনার তাঁতিরা নিয়মিত নদীপথেই কুমারখালি হাটে যাতায়াত করেন। আবার পদ্মার এপারে কুষ্টিয়া ওপারে পাবনার বেশ কয়েকটি গ্রাম রয়েছে।

এ গ্রামের বাসিন্দাদের থানা কোর্টকাছারির প্রয়োজনে প্রতিদিন শিলাইদহ ঘাট পার হতে হচ্ছে। কিন্তু নদী শুকিয়ে যাওয়ায় এ ঘাট দিয়ে পারাপারকারী যাত্রীদের এখন অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বৃহস্পতিবার শিলাইদহঘাটে গিয়ে দেখা যায়, প্রমত্ত পদ্মায় পানির কোনো চিহ্ন নেই। যতদূর চোখ যায় বালি আর বালি। ঘাটের শূন্যরেখা থেকে বালুচরের মাঝ দিয়ে রাস্তা করা হয়েছে। এ রাস্তার ৪ কিলোমিটার অটোভ্যানে গিয়ে নামতে হচ্ছে। তারপর বালির ওপর কিছুদূর হেটে খেয়া নৌকায় উঠতে হচ্ছে। খেয়া নৌকায় ১ কিলোমিটার নদীপথ পাড়ি দিতে ৫-৬ কিলোমিটার ঘুরে তারপর শিলাইদহঘাটের ওপারে পৌঁছাতে হচ্ছে। 
এখানে সময় যেমন বেশি লাগছে তেমনি যাত্রীপ্রতি ভাড়াও বেশি গুনতে হচ্ছে। অটো ভাড়া ৩০ টাকার সঙ্গে খেয়া নৌকায় ৩০ টাকা মিলে প্রতি যাত্রীর ৬০ টাকা দিয়ে শিলাইদহ ঘাট পার হতে হচ্ছে। যেসব শ্রমিক দৈনিক পাবনায় লেবার খাটতে আসেন তাদের শুধু ঘাট পারাপারেই ১২০ টাকা ব্যয় করতে হয়। আবার যারা এ পথে ব্যবসা করেন তারাও মালামাল পরিবহনে নানা দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন।
নদীর এপারের ব্যবসায়ী লিটন সেখ জানান, তিনি হার্ডওয়্যার পণ্য কুষ্টিয়ায় পাইকারি সরবরাহ করেন। নদীতে পানি না থাকায় মালামাল পারাপারে একদিকে যেমন ব্যয় বেড়েছে তেমনি তাকে অনেক দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে। পদ্মা শুকিয়ে যাওয়ায় দুপাড়ের জীবনযাত্রায় ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। কয়েক বছর আগেও যারা নৌকার মাঝি বা জেলে ছিল তারা এখন ইটভাঁটি শ্রমিক, অটোড্রাইভারসহ বিভিন্ন পেশায় জীবন কাটাচ্ছেন। অন্যদিকে মরা নদীতে এখন মাছশূন্য যেমন হয়েছে তেমনি জীববৈচিত্র্যও ধংসপ্রায়। নদীপাড়ের বাসিন্দারা জানান, কয়েক বছর আগেও এ শীত মৌসুমে নদীতে বালিহাঁস, চখাসহ অসংখ্য প্রজাতির অতিথি পাখির কলকাকলিতে ভরপুর ছিল। এখন কোনো পাখিই আর নেই। নদীতে পানি না থাকায় তীরবর্তী জমির ফসল চাষেও মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে। 
যৌথ নদী কমিশন ওয়েবসাইট সূত্রে জানা যায়, জানুয়ারির দ্বিতীয় ১০ দিন হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পানির প্রবাহ পরিমাপ করা হয় ৭০ হাজার ৮২৭ কিউসেক। গত বছর একই সময়ে ওই পয়েন্টে ১ লাখের বেশি কিউসেক পানি পরিমাপ করা হয়। হাইড্রলজি বিভাগের পাবনা বিভাগীয় কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী জাহিদুল ইসলাম জানান, এ বছর ফারাক্কা পয়েন্টে পানির প্রবাহ অনেক কম থাকায় গত বছরের তুলনায় এ বছর শুরু থেকেই হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পদ্মার পানি প্রায় ৩০ হাজার কিউসেক কম প্রবাহিত হচ্ছে। হাইড্রলজি বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জাহিদুল ইসলাম আরও জানান, পদ্মা আন্তর্জাতিক নদীর অংশ তাই পানির উৎস আমাদের হাতে নেই। প্রাকৃতিক কারণে পদ্মার যে বিপর্যয় হয়েছে তার চেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে অপরিকল্পিত কাজকর্মে।

×