ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

প্রধানমন্ত্রী আজ যাচ্ছেন

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী

প্রকাশিত: ২৩:৩৪, ২৮ জানুয়ারি ২০২৩

প্রধানমন্ত্রী আজ যাচ্ছেন

রাজশাহীর মাদ্রাসা মাঠে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনসভার মঞ্চ প্রস্তুত

আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ রবিবার রাজশাহী আসছেন। দীর্ঘ পাঁচ বছর পর তিনি রাজশাহীর দলীয় জনসভায় প্রধান অতিথির ভাষণ দেবেন। এদিন বিকেলে রাজশাহীর ঐতিহাসিক মাদ্রাসা মাঠে অনুষ্ঠিত হবে এ জনসভা। এর আগে, সকালে রাজশাহীর সারদা পুলিশ একাডেমি পরিদর্শন ও পুলিশ প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজে যোগ দেবেন তিনি। 
দিনব্যাপী এ সফরে প্রধানমন্ত্রী  রাজশাহীতে এক হাজার ৩১৬ কোটি ৯৭ লাখ টাকার ২৫ প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন বলে আশা করছেন নেতারা। এ ছাড়া ৩৭৬ কোটি ২৮ লাখ টাকা ব্যয়ে আরও ছয় প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন। 
স্থানীয় নেতাকর্মী সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘ পাঁচ বছর পর রাজশাহীতে প্রধানমন্ত্রীর সফর উপলক্ষে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে আওয়ামী লীগ।  প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় সভাপতির বরণে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। বঙ্গবন্ধুকন্যাকে বরণ করতে রাজশাহীকে সাজানো হয়েছে বর্ণিল রূপে। রঙ-বেরঙের ব্যানার, ফেস্টুন, নিশান, তোরণের পাশাপাশি চোখ ধাঁধানো আলোকসজ্জায় বিভাগজুড়ে বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ। পুরো রাজশাহীই সেজেছে নতুন রূপে। 
বর্তমানে এক ডজন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ছাড়াও এ অঞ্চলের এমপি, কেন্দ্রীয় নেতা রাজশাহীতে অবস্থান করছেন। দলের নির্বাচনী প্রতীক নৌকার আদলে তৈরি করা হচ্ছে জনসভার মঞ্চ। ঐতিহাসিক মাদ্রাসা ময়দানে দুপুর ১২টায় জনসভা শুরু হবে। বেলা আড়াইটায় জনসভাস্থলে উপস্থিত হবেন প্রধানমন্ত্রী। জনসভায় প্রধান অতিথির ভাষণে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে শেখ হাসিনা দেশ ও জাতির উদ্দেশে দিকনির্দেশনা দেবেন বলে আশা করছেন নেতাকর্মীরা। 
এদিকে দীর্ঘ পাঁচ বছর পর রাজশাহী সফর ও আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে শেখ হাসিনার অংশগ্রহণে সম্ভাব্য শেষ জনসভা হওয়ায় উত্তরাঞ্চলের নেতাকর্মীদের মাঝে উৎসাহ-উদ্দীপনা বিরাজ করছে। বিভাগের প্রায় প্রতিটি জেলা-উপজেলার দলীয় কর্মী-সমর্থকদের জনসভায় পৌঁছে দিতে ট্রেন, বাস, ট্রাক, প্রাইভেট কারসহ বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন শীর্ষ নেতারা। রাজশাহীতে প্রধানমন্ত্রীর এবারের জনসভাকে জনসমুদ্রে রূপ দিতে চায় আওয়ামী লীগ। 
বাস্তবায়িত প্রকল্পগুলো হলো- নগরীর সিঅ্যান্ডবি মোড়ে নির্মিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল। প্রায় পাঁচ কোটি তিন লাখ টাকা ব্যয়ে এ ম্যুরাল নির্মাণ করেছে রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক)। এ ছাড়া রাসিকের বাস্তবায়িত অন্য প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে- শেখ রাসেল শিশুপার্ক, মোহনপুর রেলক্রসিংয়ের ওপর ফ্লাইওভার, চার লেনের সড়ক, ভদ্রা রেলক্রসিং থেকে নওদাপাড়া বাস টার্মিনাল পর্যন্ত ধীরগতির যানবাহনের জন্য পৃথক লেনসহ রোড ডিভাইডার।

আবার, প্রায় ১১৬ কোটি ৮৩ লাখ টাকা ব্যয়ে পুঠিয়া থেকে বাগমারা পর্যন্ত একটি মহাসড়ক নির্মাণ করেছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। প্রায় ১০ কোটি ২১ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রধান কার্যালয়ের ষষ্ঠ থেকে দশম তলা পর্যন্ত সম্প্রসারণ করেছে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক (রাকাব)। প্রায় ২০ কোটি ৮ লাখ টাকা ব্যয়ে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ (আরএমপি) সদর দপ্তর ভবন নির্মাণ করেছে।

এদিকে, নগরীর লক্ষ্মীপুর এলাকায় প্রায় ১৪ কোটি ৪৬ লাখ টাকা ব্যয়ে রাজশাহী ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল, মোহনপুরে ২২ কোটি ১৮ লাখ টাকা ব্যয়ে কারিগরি প্রশিক্ষণকেন্দ্র, ২২ কোটি ৯০ লাখ টাকায় রাজশাহী শিশু হাসপাতাল, ১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজের প্রশাসনিক ভবন, ১২ কোটি ৭৮ লাখ টাকা ব্যয়ে সমাজসেবা ভবন নির্মিত হয়েছে।
রাজশাহী সরকারি মহিলা কলেজে প্রায় পাঁচ কোটি ৫৮ লাখ টাকা ব্যয়ে ছয় তলার ওপর দোতলা মহিলা হোস্টেল ভবন, চারঘাটে ১৭ কোটি ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের পাঁচতলা একাডেমিক ভবন, চার কোটি ২৭ লাখ টাকা ব্যয়ে রাজশাহী সিভিল সার্জনের অফিস নির্মাণ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড চারঘাট ও বাঘা উপজেলায় পদ্মার ভাঙন রক্ষায় ৬৯৪ কোটি ৩৪ লাখ টাকা ব্যয়ে দুটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। 
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) গ্রামীণ সংযোগ উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ৪৩ কোটি ৯৬ লাখ টাকা ব্যয়ে দুটি সড়ক নির্মাণ করছে। এ ছাড়া রাজশাহী পিটিআইতে প্রায় আট কোটি ৯২ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি অডিটোরিয়াম নির্মাণ করা হয়েছে। রাজশাহী নগরীতে প্রায় দুই কোটি ৮১ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয়েছে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন।
এ ছাড়া ২৪ কোটি টাকায় তথ্য কমপ্লেক্স ভবন, ৮ কোটি ৩৫ লাখ টাকা আঞ্চলিক জন প্রশাসন অফিস ভবন, ৬২ কোটি টাকায় শহীদ জননী জাহানারা ইমাম বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, ৫৩ কোটি টাকা ব্যয়ে শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান বালক উচ্চ বিদ্যালয়। ১৬২ কোটি টাকায় বিকেএসপির আঞ্চলিক প্রশিক্ষণকেন্দ্র এবং ৬৬ কোটি টাকা ব্যয়ে রাজশাহী ওয়াসা ভবন নির্মাণকাজ।

আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সারাদেশে ব্যাপক উন্নয়ন দৃশ্যমান হয়েছে। সারাদেশের মতো রাজশাহীর সব উন্নয়নের অবদান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। তিনি রাজশাহী সিটি করপোরেশন এলাকার উন্নয়নে দুই হাজার ৮০০ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছেন। সেই প্রকল্পের মাধ্যমে রাজশাহী মহানগরীকে সাজানো হচ্ছে। 
এবার স্মরণকালের সর্ববৃহৎ জনসভা হবে তিনি আরও বলেন, রাজশাহীতে প্রধানমন্ত্রীর জনসভা সফল করতে জানুয়ারি মাসের শুরু থেকে আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি। রাজশাহীর পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন জেলায় গিয়ে সভা-সমাবেশ ও প্রচার মিছিল করা হয়েছে। সব জায়গা থেকে আমরা ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। কেবল জনসভাস্থল মাদরাসা মাঠই নয়, পুরো রাজশাহীই লোকারণ্য হয়ে যাবে। রাজশাহীতে প্রধানমন্ত্রীর জনসভা স্মরণকালের সর্ববৃহৎ হবে, মানুষের কাছে জনসভাটি স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
রাজশাহীতে প্রধানমন্ত্রীর জনসভা উপলক্ষে বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে ইতোমধ্যে দলে দলে নেতাকর্মী ও সমর্থকরা আসতে শুরু করেছেন। তাদের যাতায়াতের সুবিধার্থে সাতটি বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে।  গত ২৫ জানুয়ারি পশ্চিমাঞ্চল রেল বিভাগের ডেপুটি কমার্শিয়াল ম্যানেজার স্বাক্ষরিত এক পত্রে সংশ্লিষ্ট ওই সাত এলাকার স্টেশন মাস্টারসহ রেলের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের অবগত করা হয়েছে।
রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশন ম্যানেজার আব্দুল করিম জানান, সিরাজগঞ্জ, নাটোর, জয়পুরহাট, শান্তাহার, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, আড়ানী, রহনপুরসহ সাতটি স্থান থেকে রাজশাহী রুটে সাতটি বিশেষ ট্রেন ভাড়ায় রেল বিভাগ থেকে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে আবেদনকারীরা অগ্রিম ট্রেনের ভাড়াও পরিশোধ করেছেন।  
পশ্চিমাঞ্চল রেল বিভাগের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) অসীম কুমার তালুকদার বলেন, ‘বড় ধরনের সামাজিক অনুষ্ঠানে এ ধরনের বিশেষ ট্রেন ভাড়ার বিধান ব্রিটিশ আমল থেকেই রয়েছে। ফলে সাতটি স্থান থেকে রাজশাহী রুটে সাতটি বিশেষ ট্রেন ভাড়ায় রেল বিভাগ থেকে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে আবেদনকারীরা অগ্রিম ট্রেনের ভাড়াও পরিশোধ করেছেন।’
প্রধানমন্ত্রীর আগমনকে ঘিরে প্রশাসনিক ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিñিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে। এর অংশ হিসেবে পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও বাড়তি তৎপরতা চালাচ্ছে। রাজশাহীজুড়ে নিরাপত্তায় জেলা পুলিশ, মেট্রোপলিটন পুলিশ, আর্মড ব্যাটালিয়ন পুলিশ, র‌্যাবসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা মাঠ পর্যায়ে কার্যক্রম চালাচ্ছে। 
রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) কমিশনার মো. আনিসুর রহমান বলেন, সরকার প্রধানের আগমন উপলক্ষে রাজশাহীর সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে আগে থেকে সোচ্চার রয়েছে পুলিশ। এছাড়া নিয়মিত টহলের বাইরেও জনসভার দিনে নগরীতে প্রায় তিন হাজার পুলিশ মোতায়েন করা হবে। তাদের মধ্যে পোশাকধারী পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা পুলিশ ও সাদা পোশাকে পুলিশ দায়িত্ব পালন করবে।
তিনি আরও বলেন, ‘নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জনসভাস্থল মাদ্রাসা ময়দানে এবং সংলগ্ন এলাকায় সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। এ ছাড়া দু’দিন আগে শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে জনসভার পরদিন সোমবার সকাল ৬টা পর্যন্ত শহরে পূর্বানুমতি ছাড়া সব ধরনের আগ্নেয়াস্ত্র, বিস্ফোরক, পটকা, ড্রোন বহন, ব্যবহার ও বিক্রির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এই সময়ে দেশী-বিদেশী মদ বা অ্যালকোহল বিক্রি করা সব বার বন্ধ করতে বলা হয়েছে।

×