
সরকার নির্ধারিত দাম থেকে অতিরিক্ত ১শ’ থেকে ১২০ টাকা বেশি দামে এলপিজি সিলিন্ডার
সরকার নির্ধারিত দাম থেকে অতিরিক্ত ১শ’ থেকে ১২০ টাকা বেশি দামে এলপিজি সিলিন্ডার কিনতে হচ্ছে দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার প্রায় ১০ লাখ গ্রাহককে। আর এই সুবিধা নিচ্ছে কোম্পানির মনোনীত ডিলার থেকে শুরু করে খুচরা ব্যবসায়ীরা। অনেক কোম্পানি ডিলারদের কাছ থেকেও বাড়তি দাম নিচ্ছে, এমন অভিযোগ রয়েছে। গত ৩ মাসে সরকারীভাবে এলপিজি সিলিন্ডারের দাম তিন দফা বাড়ানো-কমানো হলেও মাঠ পর্যায়ে ক্রেতা সরকার র্নিধারিত মূলের সুফল ভোগ করতে পারছে না।
কোম্পানির মার্কেটিংয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা কোম্পানির সঙ্গে সুর মিলিয়ে বলছে, ডলারের দাম বৃদ্ধি,পরিবহন খরচ বাড়তি আর আনুষঙ্গিক খরচ মিলিয়ে সরকার যে দাম নির্ধারণ করেছে তা মোটেই বাস্তবসম্মত নয়।
এদিকে ডিলারদের অভিযোগ, কোম্পানি বেশি দাম নিচ্ছে। আর পরিবহন খরচ বেড়েছে। খুচরা বিক্রেতাদের অভিযোগ, ডিলারদের কাছ থেকে ১ হাজার ৩২০ টাকায় কিনে তাদের বিক্রি করতে হলে পরিবহন খরচ দিয়ে ১হাজার ৩৫০ টাকায় বিক্রি না করলে তাদের কোন লাভ থাকে না। এক সপ্তাহ ধরে দক্ষিণাঞ্চলের পদ্মার ওপারের ২১টি জেলার মাঠ চিত্র এমনটি মিললেও মাঠ পর্যায়ের অনেক জেলায় ভোক্তা অধিকারের অভিযান বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এই অঞ্চলের বিপুল গ্রাহক ডিলার ও ব্যবসায়ীদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে।
এদিকে ৭ সেপ্টেম্বর নতুন করে দাম নির্ধারণ করে দেয়ার পর গত ১৫ সেপ্টেম্বর সাতক্ষীরা শহরে ভোক্তা অধিকারের পক্ষ থেকে অভিযান চালিয়ে অতিরিক্ত দামে বিক্রির অভিযোগে ৩ ডিলার ও ২ ব্যবসায়ীকে ৩৩ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এর পর ডিলার ও ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযান ও জরিমানা বন্ধের দাবি জানানো হয়। এ সময় তারা সিলিন্ডার বিক্রি ও দোকান বন্ধ করে দেয়ার কথাও জানান জেলা প্রশাসককে।
সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবীর জনকণ্ঠকে বলেন, বাজারে যাতে কৃত্রিম সঙ্কট না হয় সে জন্য ব্যবসায়ীদের দাবি বিবেচনায় নেবেন বলে আশ্বাস দেন। এ বিষয়ে তিনি গ্যাস মন্ত্রণালয়ে ও কোম্পানির সঙ্গে কথা বলেছেন বলে জানিয়ে বলেন, বাজারে সঙ্কট বন্ধে মনিটরিং করার ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
গত ৭ সেপ্টেম্বর বিইআরসি ১২ কেজি এলপিজি গ্যাসের দাম সিলিন্ডার প্রতি ১৬ টাকা বাড়িয়ে ১ হাজার ২৩৫ টাকা নির্ধারণ করে। এর আগে জুলাইয়ে ১ হাজার ২৪২ টাকার সিলিন্ডার গ্যাসের দাম ১২ টাকা বাড়িয়ে ১ হাজার ২৫৪ টাকা করা হয়। আগস্টে এই দাম সিলিন্ডার প্রতি ৩৫ টাকা কমিয়ে ১ হাজার ২১৯ টাকা করা হলেও সেপ্টেম্বরে পুনরায় ১৬ টাকা বাড়িয়ে সিলিন্ডার প্রতি ১ হাজার ২৩৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। সরকারীভাবে দাম নির্ধারণ করে দেয়ার পরও মাঠ পর্যায়ে এই বাজারমূল্য কার্যকর না হওয়ায় ভোক্তা অধিকারের বাস্তবতা নিয়ে গ্রাহকদের মধ্যে প্রশ্ন ওঠে।
দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, বাজারে লিডিং কোম্পানি হিসেবে বসুন্ধরা, যমুনা, ওমেরা, লাফসসহ ২৭টি কোম্পানির এলপিজি গ্যাস সরবরাহ হয়ে থাকে। পদ্মার ওপারের খুলনা বিভাগে সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট ও নড়াইল জেলা ও বরিশাল বিভাগের বরিশাল, মাদারীপুর, পটুয়াখালী, বরগুনা, পিরোজপুরসহ দুই ডিভিশনের ২১টি জেলায় প্রতিমাসে গড় ১২ লাখ থেকে ১৩ লাখ এলপিজি সিলিন্ডারের চাহিদা রয়েছে। শুধু সাতক্ষীরা জেলাতেই প্রতিমাসে ৮০ হাজার এলপিজি সিলিন্ডারের চাহিদা রয়েছে। সরকার নির্ধারিত দাম থেকে সিলিন্ডার প্রতি ১শ’ টাকা হারে বেশি নেয়া হলে মাসে কমপক্ষে ১২ কোটি টাকা গ্রাহকের পকেট থেকে অতিরিক্ত আদায় করা হচ্ছে বলে সচেতন নাগরিকদের অভিযোগ।