ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

পানিবন্দি শিক্ষার্থীদের বিকল্প ব্যবস্থায় শিক্ষা দান

চৌধুরী নীহারেন্দু হোম, শ্রীমঙ্গল

প্রকাশিত: ১৫:৪৭, ১৮ জুলাই ২০২২

পানিবন্দি শিক্ষার্থীদের বিকল্প ব্যবস্থায় শিক্ষা দান

শ্রেণিকক্ষে প্রধান শিক্ষক ও দাশের বাজার উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা

বন্যা দীর্ঘ মেয়াদী হওয়ায় মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার দাশের বাজার উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আশ্রায়নে থাকা শিক্ষার্থীদের নিজস্ব উদ্যোগে দিচ্ছেন পাঠদান। এতে অন্তত ছেলে মেয়েদের শিক্ষা নিয়ে দুশ্চিন্তা মুক্ত দাশের বাজার উচ্চ বিদ্যালয়ে আশ্রয় নেয়া ৫১টি পরিবার। 
মৌলভীবাজার জেলার ৫ উপজেলা গত ২৬ দিন ধরে তলিয়ে আছে পানিতে। এর মধ্যে মৌলভীবাজার সদর ও রাজনগর উপজেলার পানি কমলেও, কমেনি বড়লেখা, জুড়ি ও কুলাউড়া উপজেলার পানি। এখন ৫০টিরও অধিক আশ্রয় কেন্দ্রে রয়েছেন প্রায় ২০ হাজার মানুষ। যেখান রয়েছে সহস্রাধিক শিক্ষার্থী। এতে বাঁধাগস্থ হচ্ছে সে সব শিক্ষার্থীর লেখা পড়া। 
এই অবস্থায় মৌলভীবাজারের বড়লেখার দাশের বাজার উচ্চ বিদ্যালয় আশ্রয় কেন্দ্রের একটি কক্ষে ওই আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নেয়া প্রথম শ্রেণী থেকে ১০ শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষার্থীকে নিয়মিত পাঠ সহযোগীতা দিয়ে যাচ্ছেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দীপক রঞ্জন দাশসহ অনান্য শিক্ষকরা।
দাশের বাজার উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দীপক রঞ্জন দাশ জানান, এই শিশুদের গণিত ও বিজ্ঞান বিষয়ে পাঠদানের দায়িত্ব নিয়েছেন দাসেরবাজার উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক মো. হাসিম আলী। তিনি সাধারণত সকালের শিফটে ক্লাস নেন।
ক্লাসের এক শিক্ষার্থী উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে বলে, 'দিনের পর দিন এখানে আটকে থাকতে থাকতে হাঁপিয়ে উঠেছিলাম। কিছুই করার ছিল না। পড়ালেখার ক্ষতি হচ্ছিল। এ অবস্থায় দীপক স্যার ক্লাস নিতে শুরু করলে তা আমাদের জন্য দারুন একটি বিষয় হয়ে ওঠে। স্যার তো কেবল পড়ানই না। আমাদের সঙ্গে গল্প করেন। অনেক বিষয় নিয়ে কথা হয়। নতুন অনেক কিছু জানতে পারি।'
আশ্রকেন্দ্রে থাকা শিশুদের ২ অভিভাবক শামীম আহমদ ও আবুল হোসেনের ভাষ্য, দিনের পর দিন বন্দি থেকে তারা শিশুদের পড়ালেখার বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু ২ শিক্ষকের এমন চমৎকার একটি উদ্যোগ তাদের দুশ্চিন্তা কিছুটা হলেও লাঘব করেছে। এর ফলে শিশুরা মানসিকভাবেও প্রফুল্ল হয়ে উঠেছে।
আর এ ব্যাপারে প্রধান শিক্ষক দীপক রঞ্জনের বক্তব্য হলো, 'আমি দেখলাম শিশুরা দিনের পর দিন এমন বন্দি অবস্থায় কাটালে, তা তাদের মনের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। এতে শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার আশঙ্কাও বাড়ে। আমি যেহেতু দিনের একটা বড় অংশ বিদ্যালয়েই থাকি, তাই ভাবলাম এখানে আটকে পড়া শিশুদের জন্য কিছু করা যাক। এখন দেখছি এতে শিশু ও অভিভাবক- ২ পক্ষই খুশি।'
অভিভাবকরা আরো জানান, দীর্ঘ মেয়াদী বন্যায় পড়ে তারা স্কুলে অস্থায়ী আশ্রয় কেন্দ্রে আছেন। এখানে অনেক মানুষের সাথে একসাথে বসবাস করছেন। ছেলে মেয়েদের লেখা পড়া করার কোন সুযোগ ছিলনা। এই অবস্থায় বিদ্যালয়ের একটি কক্ষে তাদের সন্তানদের পাঠদান করানোর ফলে তারা অন্তত ছেলে মেয়েদের লেখা পড়া নিয়ে চিন্তা মুক্ত।
আর বড়লেখা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খন্দকার মুদাচ্ছির বিন আলী জানান, এটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ। বন্যা আরো দীর্ঘস্থায়ী হলে এটিকে অনুকরনীয় হিসেবে অন্য স্কুলেও চালু করা যেতে পারে এমন ব্যবস্থা।


 

×