ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১০ জুলাই ২০২৫, ২৬ আষাঢ় ১৪৩২

পরপর দুই বছর লোকসানের কারণে খলাপাড়া গ্রামে মিষ্টি কুমড়া চাষ বন্ধ

প্রকাশিত: ২০:৫৪, ২৯ মার্চ ২০২২

পরপর দুই বছর লোকসানের কারণে খলাপাড়া গ্রামে মিষ্টি কুমড়া চাষ বন্ধ

সংবাদদাতা, নান্দাইল, ময়মনসিংহ ॥ অন্যান্য বছর যেখানে ৮‘শ কাঠা (১০ শতকে কাঠা) জমি চাষ হত সেখানে এ বছর ৫ কাঠা জমিতে মিষ্টি কুমড়া চাষ হয়েছে খলাপাড়া গ্রামে। পরপর দুই বছর লোকসানের কারণে ২‘শ কৃষক এই ফসল ছেড়ে ধান চাষ করেছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, খলাপাড়া গ্রামটির অবস্থান নান্দাইল-তাড়াইল সড়কের রাজগাতী ইউনিয়নে। কম খরচে ও অল্প দিনে ভাল ফলন হওয়ায় প্রতি বছর এই গ্রামের প্রায় সব কৃষকেই মিষ্টি কুমড়ার চাষ করত। এ সময় কৃষকরা জমি থেকে কুমড়া তুলে সড়কের পাশে, বাড়ির আঙিনায় অথবা জমিতে স্তুপ করে রাখত। দূর দুরান্তের পাইকাররা এসে সেই কুমড়া ক্রয় করে নিয়ে যেত। উপজেলার চাহিদা মিটিয়ে এই ফসল যেত রাজধানী শহরে। খলাপাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, পুরা গ্রামে একমাত্র কৃষক জসিম উদ্দিনই ৫ কাঠা জমিতে মিষ্টি কুমড়া চাষ করেছেন। সবাই ধান বা অন্য ফসল করেছেন। এক সাথে গ্রামে মিষ্টি কুমড়া চাষ বন্ধ হওয়ার কারণ জানতে চাইলে কৃষক ভুট্টু মিয়া (৪০) বলেন, প্রতি বছর তিনি ৭০/৮০ কাঠা জমিতে এই ফসল চাষ করতাম। কিন্তু গত দুই বছর লাভ দূরের কথা খরচের টাকাই তুলতে পারেননি। এই লোকসানের কারণে আর মিষ্টি কুমড়া চাষ না করার প্রতিজ্ঞা করেছিলেন। তাই এ বছর কোন জমিতে চাষ করিনি। কৃষক আনজু মিয়া (৬০) বলেন, আগের বছর পাইকার না আসায় শতশত কুমড়া পচে নষ্ট হয়েছে। অনেক কুমড়া গবাদি পশুর খাদ্য হয়েছে। অনেকেই স্থানীয় আড়তে অর্ধেক দামে বিক্রি করে কোন মতে ঋৃণ পরিশোধ করেছে। কৃষক উমেদ আলী বলেন, গত বছর সুদে টাকা এনে ১০ কাটা জমিতে কুমড়া চাষ করেছিলাম। লাভ তো দুরের কথা, ক্ষতির মুখে দাঁড়াতে হয়েছে। কৃষক আব্দুল্লাহ বলেন, এখন বাজারে কুমড়ার ভাল দর থাকলেও গত দুই বছর আমরা ৪/৬ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছি। ঈশ্বরগঞ্জের পাইকার আব্দুল্লাহ বলেন, তিনি গত বছর খলাপাড়া গ্রাম থেকে ৭০ টন মিষ্টি কুমড়া ক্রয় করেছেন। এ বছর এসে সব জমিতে ধান চাষ করা অবস্থায় দেখতে পেয়েছেন। খলাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা প্রভাষক মাহবুবুর রহমান বাবুল বলেন, এ গ্রামের মিষ্টি কুমড়া চাষীদের চোখে মুখে হতাশার ছাপ দেখা যায়। অনিশ্চিত ভবিৎষতের শঙ্কায় তাঁরা অন্য ফসলের দিকে ঝুঁকেছে। জসিম উদ্দিন ছাড়া গ্রামে কেউ কুমড়া চাষ করেনি। সরকার কৃষকদের প্রণোদনার আওতায় আনলেও এই গ্রামের চাষীরা বঞ্চিত হয়েছে। খলাপাড়া ব্লকের উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তা ফজলুর রহমান বলেন, পরপর দুই বছর বাজার ভাল না পাওয়ায় কৃষকরা ক্ষতির সম্মক্ষিণ হয়েছে। প্রণোদনার বিষয়ে আমাদের সেই ভাবে কোন নির্দেশনা ছিল না। রাজগাতী ইউনিয়নে তিনজন উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তা থাকার পরও মিষ্টি কুমড়া চাষীদের সর্ম্পকে কোন তথ্য নান্দাইল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আনিসুজ্জামান জানেন না। তিনি খোঁজ নিয়ে দেখার কথা বলেন। আর ক্ষতিগ্রস্থ চাষীরা প্রণোদনা না পাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ইউনিয়ন কৃষি পূন:গঠন বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি হলো স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান। উনারা অগ্রাধিকার তালিকা প্রণয়ন করে আমাদের কাছে দেন।
×