ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১০ জুলাই ২০২৫, ২৬ আষাঢ় ১৪৩২

গুলশান স্পিনিং মিলের জিএম এর হুমকিতে দুটি নিরিহ পরিবার বাড়ি ছাড়া

প্রকাশিত: ২৩:৪০, ১৭ মার্চ ২০১৭

গুলশান স্পিনিং মিলের জিএম এর হুমকিতে দুটি নিরিহ পরিবার বাড়ি ছাড়া

নিজস্ব সংবাদদাতা, ভালুকা, ময়মনসিংহ ॥ ভালুকায় জমি সংক্রান্ত বিরোধকে কেন্দ্র করে গুলশান স্পিনিং মিলের জেনারেল ম্যানেজার (জিএম), হত্যা ও দ্রুত বিচার আইনের মামলাসহ একধিক মামলার আসামী মো: জামির আলীর কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে দুটি নিরিহ কৃষক পরিবার। তার দেয়া একের পর এক মিথ্যে মামলা ও অব্যাহত হুমকীর কারণে বর্তমানে উপজেলার ধামশুর মৌজার আখালিয়া গ্রামের ওই দুটি পরিবারের প্রায় ২৫/৩০ লোক বাড়ি-ঘর ছেড়ে অন্যত্র পালিয়ে বেড়াচ্ছেন বলে ভূক্তভোগী পরিবারের অভিযোগ। ভূক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা জানান, গুলশান স্পিনিং মিলের জেনারেল ম্যানেজার জামির আলী উপজেলার ধামশুর মৌজার ১১৩৯ নম্বর দাগে আখালিয়া গ্রামে ভূয়া কাগজপত্রে কিছু জমি ক্রয় করে দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় নিরিহ কৃষক আব্দুল জব্বার ফকির ও খালেক ফকির গংদের ৫৪ শতাংশ জমি জবর দখলের পাঁয়তারা শুরু করে। এরই জের হিসেবে ১৮ ফেব্রুয়ারী গভীর রাতে গুলশান স্পিনিং মিলের পক্ষে প্রায় দেড় শতাধিক লোক দেশিয় অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে ওই দুই পরিবারের বসতবাড়িতে ঘুমন্ত অবস্থায় হামলা চালায়। এ সময় সেলিনা আক্তার (৩৮), লাভলি আক্তার (৩৬) দিলারা বেগম (২০) নাছিমা (২১), শেফালী (২৩), শেফালীর শিশুকন্যা রাবেয়া (চার মাস), লাকীর শিশু কন্যা তায়েবা (১৪ মাস), রমজান আলী ফকির (৩৫), শিহাব ফকির (১৭), বাছির ফকির (২০) রোকেয়া (৪৪) আহত হন। পরে হামলাকারীরা যাওয়ার সময় বসতবাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করে প্রায় কয়েক লাখ টাকার ক্ষতি সাধন করে। এ ঘটনায় গুলশান স্পিনিং মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সিরাজ উদ্দিন আহমেদ (৫০), জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) মো: জামির আলী (৪৮), উর্ধ্বতন কর্মকর্তা মাসুদুর রহমান চৌধুরী (৪৯) এবং স্থানীয় মো: কবির হোসেন (৩১) ও মো: জামাল মিয়ার নাম উল্লেখসহ আরো ২০/২৫ জনের নামে বৃহস্পতিবার বিরোধপূর্ণ জমির মালিক আব্দুল জব্বারের মেয়ে লাভলী আক্তার বাদি হয়ে ময়মনসিংহ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন। পরে আদালত মামলটি ভালুকা মডেল থানার ওসিকে এফআইআর ভূক্ত করার নির্দেশ দেন। পরে মামলাটি বেশ গড়িমশি করে কিছুদিন পর এফআইর ভূক্ত করা হলেও থানায় এমনকি ভূমি অফিসে পুলিশের সাথে উক্ত জামির আলী প্রকাশ্যে দিনদুপুরে রহস্যজনক কারণে ঘুরাফেড়া করতে দেখা গেছে বলে ভূক্তভোগী পরিবারের লোকজন অভিযোগ করেন। জমির মালিক মো: রমজান আলী জানান, ধামশুর মৌজার আখালিয়া গ্রামের জনৈক হামিজ ফকির ৩০৭৮ নম্বর খতিয়ানের বিআরএস ৮২৭৫ নম্বর দাগে ৮ শতাংশ জমির মালিক ছিলেন। ৩১/০৩/৯৭ তারিখে ৩০৫১ নম্বর দলিলে ৪ শতাংশ জমি জনৈক মোরতজা বেগমের কাছে বিক্রি করেন এবং ১৬/১০/১৬ তারিখে ৪৪৬৫ নম্বর দলিলমূলে ৫ শতাংশ জমি বিক্রি করেন, জনৈক মোস্তাক আলম চৌধুরীর কাছে। তিনি তার প্রাপ্ত জমি থেকে ১ শতাংশ জমি বেশি বিক্রি করেন। তারপরও ০৬/০২/১৭ তারিখে উক্ত জামির আলী ১১১৬ নম্বর দলিলে হামিজ ফকিরের কাছ থেকে একই দাগ ও খতিয়ান উল্লেখ করে গুলশান স্পিনিং মিলের পক্ষে ১০ শতাংশ জমি বায়নানামা দলিল করে এবং এর পর থেকেই জোড় পূর্বক তাদের উক্ত জমি দখলে নিতে পাঁয়তারা শুরু করেন। রমজান আলী অভিযোগ করেন, তার বাড়িতে হামলা, লুটপাট ও শিশুসহ মহিলাদের উপর হামলার কারণে ভালুকা মডেল থানায় একটি ও মামলা ও আদালতে দ্রুতবিচার ধারায় অপর আরেকটি মামলা দায়ের করা হলেও থানার যাওয়া আসা করতে জামির আলীর কোন সমস্যা হচ্ছেনা। তাছাড়া উক্ত জামির আলীর বিরুদ্ধে ভালুকা উপজেলার মাস্টারবাড়িস্থ আরিফ স্পিনিং মিল কর্তৃপক্ষের দেয়া হত্যা মামলার চার্জশিট ভূক্ত আসামী। গুলশান স্পিনিং মিলের জিএম অভিযুক্ত জামির আলীর মোবাইলে বার বার চেষ্টা করেও রিসিভ না করায় তার মন্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। ভালুকা মডেল থানার ওসি (তদন্ত) মো. হযরত আলী জানান, মামলা দুটির ব্যাপারে যথাযথ প্রক্রিয়ায় তদন্তসহ সার্বিক কার্যাবলী অব্যাহত আছে।
×