ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ফারিয়া নূর

ডিজিটালাইজেশনে সাদিকের ‘লিডসাস’

প্রকাশিত: ০৬:৫৮, ২৩ মে ২০১৭

ডিজিটালাইজেশনে সাদিকের ‘লিডসাস’

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিরাপত্তা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে সম্প্রতি। এ সময়টিতেই বাংলাদেশী তরুণ উদ্যোক্তা সাদিক আল সরকার ২০১৫ তে যা এনেছিলেন, সেই লিডসাস প্রকল্পের ব্যবহার বেড়েই চলেছে। নাম শুনে যারা ভেবে বসলেন ছোট কোন প্রকল্প তাদের জন্য থাকছে চমক! লিডসাস টিম দেশের বিভিন্ন নামকরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দিচ্ছে তাদের সেবা, লিডসাসের প্রকল্পের আওতায় নিরাপদ থাকছে শিক্ষার্থীরা। লিডসাসের প্রতিষ্ঠাতা তরুণ সাদিক আল সরকার জানালেন, ‘বাংলাদেশে বহুসংখ্যক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এখনও আধুনিকায়নের ছোঁয়া লাগেনি। এতে ছাত্রছাত্রীদের নিরাপত্তা যেমন বিঘিœত হচ্ছে, ঠিক তেমনি সেকেলে ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি বহাল থাকায় মূল্যবান সময়ের অপচয় হচ্ছে। তাই উন্নত বিশ্বের মতো এদেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে আধুনিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রূপান্তর করার জন্য প্রয়োজন কার্যকরী পরিকল্পনা ও সময়োপযোগী উদ্যোগ।’ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সাবেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, তথ্য মন্ত্রণালয়ের জয়েন্ট চিফ আনসার আলীর মতে, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের পথে একধাপ এগিয়ে সম্ভাবনার নতুন দ্বার উন্মোচিত করেছে লিডসাস। একঝাঁক মেধাবী তরুণের অদম্য পরিশ্রমে গড়ে ওঠা টিম লিডসাস শুধু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রেই নয়, বরং যে কোন প্রতিষ্ঠানে যুগোপযোগী ডিজিটাল নিরাপত্তা ও যোগাযোগ ব্যবস্থার আধুনিকয়নে কার্যকরী ভূমিকা পালন করছে বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন।‘ লিডসাসের প্রকল্পটি সম্পর্কে জানতে কথা হলো পুরো টিমের সঙ্গে। ২০১৫-এর প্রথম দিকের কথা, সাদিক লক্ষ্য করলেন, শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা বা স্কুল ডিজিটালাইজেশন নিয়ে বাংলাদেশের কোন প্রতিষ্ঠান পূর্ণাঙ্গ কাজ করছে না। এরপর তিনি দেশে ও দেশের বাইরে বিভিন্ন আইটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারেন যে, তিনি যে সার্ভিসগুলো চাচ্ছেন, তা কেউই একসঙ্গে দিচ্ছে না। পরবর্তীতে সাদিক নিজেই একটি পরিকল্পনা সাজান। কী কী সার্ভিস থাকলে কমপ্লিট ডিজিটাল স্কুল, তথা আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে তালমিলিয়ে চলা একটি স্কুল গড়া সম্ভব হয়, তা তিনি তালিকাভুক্ত করতে থাকেন। সাদিক বলেন, ‘একবিংশ শতাব্দীতে বাংলাদেশ ডিজিটাল যুগে প্রবেশ করলেও কিছু প্রতিবন্ধকতা আমাদের মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর পথে অন্তরায় হয়ে ওঠে। বিভিন্ন অপরাধ চক্রের সক্রিয়তা, ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অনিয়মিত থাকাসহ আরও নানা সমস্যা আমাদের সমাজে এখনও বিষফোঁড়ার মতোই অবস্থান করছে। একা কখনই কারও পক্ষে এ সমস্যাগুলো মোকাবেলা করা সম্ভব না। তিনি জানান, তাই টিম লিডসাস একটি কমপ্লিট কনসেপ্ট নিয়ে এগিয়ে যেতে সম্মত হলো, যেখানে আধুনিক নিরাপত্তা ব্যবস্থার পাশাপাশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর সম্পূর্ণ আধুনিকায়ন সম্ভব হবে। এভাবেই মূলত লিডসাস লিমিটেডের যাত্রা শুরু।’ ভিন্নধর্মী চিন্তা থেকে সফল হবার এক অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত সাদিক আল সরকার, তরুণের ভাগ্যে মিলেছেও স্বীকৃতি। ব্যতিক্রমী চিন্তাভাবনাটির জন্য দেশের মূলধারার বেশ কয়েকটি দৈনিক তার সাক্ষাতকার প্রকাশ করেছিল লিডসাসের জন্মলগ্নে, সাদিক বিশ্বাস করেন তার কাজের স্বীকৃতি আরও বাড়বে যখন প্রত্যেকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছড়িয়ে যাবে আমার ‘লিডসাস’ ডিজিটালাইজেশন ধারণাটা খুব বেশি পুরনো না হলেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে আধুনিক নিরাপত্তা পদ্ধতি ও সফটওয়্যারকেন্দ্রিক ব্যবস্থাপনা আমাদের দেশের জন্য অনেকটাই নতুন। অল্প কিছুসংখ্যক প্রতিষ্ঠান ব্যক্তিগত উদ্যোগে এসব পদ্ধতি ব্যবহার করছেন। কিন্তু ব্যক্তিগত উদ্যোগে আধুনিকায়নে বছরজুড়ে রক্ষণাবেক্ষণ সেবা পাওয়াটা দুষ্কর। তাছাড়া ইলেক্ট্রনিক প্রোডাক্টগুলো সম্পর্কে সঠিক ধারণা না থাকলে নিম্নমানের প্রোডাক্ট কিনে অনেকেই প্রতারিত হচ্ছেন। এক্ষেত্রে টিম লিডসাসের লিডসাস ডিজিটাল প্রোগ্রামের কমপ্লিট প্যাকেজগুলো নিঃসন্দেহে যে কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য স্বস্তির কারণ হতে পারে। কেননা এখানে গ্রাহকগণ পাচ্ছেন সর্বাধুনিক তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির মিলিত সকল পরিসেবা। লিডসাসের গবেষণা টিমের জরিপে দেখা গেছে, অনেকেই স্ব-স্ব প্রতিষ্ঠানের আধুনিকায়নে আগ্রহী। আরও উঠে এসেছে যে, সঠিক পরিকল্পনা ও যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ ব্যবস্থা না থাকায় যৌথ মালিকানাধীন কিংবা বড় পরিসরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর আধুনিকায়ন দুরূহ হয়ে পড়েছে। এক্ষেত্রে সেসব প্রতিষ্ঠানগুলো ইচ্ছে করলেই টিম লিডসাসের বিশ্বমানের আইসিটি পরিসেবা গ্রহণ করতে পারে। লিডসাসের বিশ্বমানের আইসিটি সাপোর্ট প্রসঙ্গে রাজধানী ঢাকাস্থ প্রসিদ্ধ বিদ্যাপীঠ ব্রিটিশ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল এ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ জনাব নাজির আহমদ বলেন- ‘যথাযথ নিরাপত্তা ব্যবস্থা সুনিশ্চিত করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে সম্পূণরূপে আধুনিকীকরণে টিম লিডসাসের উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। একইসঙ্গে একাধিক আইটি পরিসেবা গ্রহণ ও রক্ষণাবেক্ষণের ঝক্কিঝামেলা এখন আর নেই বললেই চলে।’ আর নারায়ণগঞ্জের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে আধুনিক নিরাপত্তা পদ্ধতি ও সফটওয়্যারকেন্দ্রিক ব্যবস্থাপনা আমাদের দেশের জন্য অনেকটাই নতুন। অল্প কিছুসংখ্যক প্রতিষ্ঠান ব্যক্তিগত উদ্যোগে এসব পদ্ধতি ব্যবহার করছেন আর আমাদের প্রতিষ্ঠানটিও লিডসাসের মাধ্যমেই নিরাপত্তায় ঢাকা বলে জানালেন নারায়ণগঞ্জের অন্যতম স্কুল চেরিশ বিদ্যানিকেতনের অধ্যক্ষ মোরশেদা হাসিনা। তবে সবচেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে, লিডসাস নিরাপত্তার পাশাপাশি রক্ষণাবেক্ষণের জন্যও আলাদা চিন্তা নিয়ে এগুচ্ছে। টিম লিডসাসের অন্যতম লক্ষ্য হলোÑ যথাযথ প্রযুক্তি সহায়তা প্রদান করে উন্নত বিশ্বের মতো এদেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে আধুনিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রূপান্তরের পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানগুলোতে উচ্চমানের আধুনিক নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা। বাংলাদেশের সর্বস্তরে প্রযুক্তিগত সুবিধা পৌঁছে দিয়ে কাক্সিক্ষত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে দেশবাসীর পাশে থাকা। সাদিক আল সরকার জানালেন, সবার আগে হওয়া উচিত শিশুর নিরাপত্তা। লিডসাস প্রকল্পের আওতায় আসলে আমরা সর্বোচ্চ সহযোগিতা করতে আমাদের সবধরনের প্রস্তুতি শেষ। আপাতত সর্বশেষ তিন বছরে নতুন এই উদ্যোগ কাজে লাগিয়েছে ঢাকা এবং আশপাশের এলাকার স্কুলের মধ্যে অনেকগুলোই।
×