ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২১ মার্চ ২০২৫, ৭ চৈত্র ১৪৩১

এখনো সবার হৃদয়ে বসবাস মোনেম মুন্নার

জাহিদুল আলম জয়

প্রকাশিত: ০০:৩৫, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

এখনো সবার হৃদয়ে বসবাস মোনেম মুন্নার

মোনেম মুন্না

বাংলাদেশের ফুটবলের উজ্জ্বল নক্ষত্র মোনেম মুন্না। ‘কিং ব্যাক’ খ্যাত সাবেক এই কিংবদন্তির ২০তম মৃত্যুবার্ষিকী ছিল ১২ ফেব্রুয়ারি। সুদর্শন এই সুপারস্টারের মৃত্যুবার্ষিকীতে তাকে স্মরণ করেছেন বিভিন্ন সংগঠন, সাবেক, বর্তমান ফুটবলার ও ভক্ত-সমর্থকরা। জন্মস্থান নারায়ণগঞ্জে দিনব্যাপী নানা অনুষ্ঠানে কিংবদন্তিকে স্মরণ করা হয়েছে। মৃত্যুবার্ষিকীতে গভীর শোক জানিয়েছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)।  
২০০৫ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি মাত্র ৩৯ বছর বয়সে কিংবদন্তি মুন্না সবাইকে অশ্রুজলে ভাসিয়ে চলে যান না ফেরার দেশে। এত অল্প বয়সে তার চিরবিদায়ে ক্রীড়াঙ্গনে নেমে এসেছিল বিষাদের ছায়া। ২০০০ সালের শুরুতে হঠাৎ করেই কিডনি ফেল করলে ডাক্তাররা দ্রুত কিডনি প্রতিস্থাপনের পরামর্শ দিয়েছিলেন। ওই বছরের মার্চে ভারতের ব্যাঙ্গালুরু থেকে কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয় তার শরীরে।

মুন্নার বড় বোন শামসুননাহার আইভী তাকে একটি কিডনি দিয়েছিলেন। এর পর টানা পাঁচ বছর ভাল থাকলেও ২০০৫ সালে মুন্না আবারও গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। অবশেষে চিরকালের জন্য তিনি বিদায় নেন।
ফুটবলামোদীদের কাছে ‘মুন্না’ নামটি এখনো অন্যরকম এক চমকের ব্যাপার। তিনি শুধু বাংলাদেশ নয়; ছিলেন দক্ষিণ এশিয়ারই অন্যতম সেরা ফুটবলার। স্টপার পজিশনে খেলেও সর্বসাধারণের মাঝে তুমুল জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন। মাঠে শুধু চোখ ধাঁধানো  নৈপুণ্য নয়, দক্ষ নেতৃত্ব এবং ফুটবলে দুর্দান্ত পেশাদারিত্ব প্রদর্শন করে রীতিমতো ‘ফুটবল আইকনে’ পরিণত হয়েছিলেন। আর এ কারণেই ‘কিং ব্যাক’ উপাধি তার জন্য ছিল অবধারিত। ঢাকার মাঠের সবচেয়ে দামি ফুটবলারও ছিলেন তিনি।
১৯৮০-৮১ সালে পাইওনিয়ার লিগে নাম লেখানোর মধ্য দিয়ে প্রতিযোগিতামূলক ফুটবলে অভিষেক ঘটেছিল মুন্নার। এর পর খেলেছেন শান্তিনগর, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, ব্রাদার্স ইউনিয়ন ও আবাহনী ক্রীড়া চক্রে। আবাহনীর হয়েই ক্যারিয়ার শেষ করেন। ফুটবল খেলা ছাড়লেও আবাহনীর কর্মকর্তা-ম্যানেজার হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন আমৃত্যু। আবাহনী মাঠেই তার শেষ জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।

কলকাতা ফুটবল লিগে ইস্ট বেঙ্গলেও ১৯৯১-৯৩ পর্যন্ত খেলে সমান দারুণভাবে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন মুন্না। এই ক্লাবে মুন্না লিবারেল পজিশনে খেলে দারুণ আলোড়ন তোলেন। জাতীয় দলের হয়ে মুন্না ১৯৮৬-’৯৭ সাল পর্যন্ত খেলেন। ’৯৫ সালে তারই নেতৃত্বে মিয়ানমারে অনুষ্ঠিত চার জাতি কাপ ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন হয়ে দেশের বাইরে প্রথম কোনো ট্রফি জিতে বাংলাদেশ। He was mistakenly born in Bangladesh- মোনেম মুন্নার প্রতিভায় মুগ্ধ হয়ে কথাটি বলেছিলেন বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক জার্মান কোচ অটো ফিস্টার। 
 মোনেম মুন্না শুধু বাংলাদেশ নয়, ছিলেন দক্ষিণ এশিয়ার সেরা ফুটবলার। ক্যারিয়ারের মাঝামাঝিতে খেলেছেন কলকাতার ক্লাব ইস্ট বেঙ্গলের হয়ে। এখনো ওপারবাংলার মানুষের কাছে মুন্নার জনপ্রিয়তা আকাশচুম্বী। বাংলাদেশ ফুটবলের কথা উঠলেই তারা স্মরণ করে মুন্নাকে। সাধারণত ফুটবলে যেটা হয় ডিফেন্ডারদের দিকে খুব একটা আলো পড়ে না।

কিন্তু ১৯৬৬ সালে জন্ম নেওয়া মুন্নার বেলায় মুদ্রার উল্টোপিঠ। স্টপার পজিশনে খেলেও সমস্ত আলো নিজের দিকে কেড়ে নিয়েছিলেন। দলের নেতৃত্ব আর দুর্দান্ত পেশাদারিত্ব দেখিয়ে তিনি রীতিমতো ফুটবল আইকনে পরিণত হয়েছিলেন। আশির দশকের শেষ ভাগ আর নব্বই দশকজুড়ে দেশের ফুটবল ছিল মুন্নাময়। ১৯৯১ সালে ঢাকা আবাহনী থেকে মুন্না পারিশ্রমিক পেয়েছিলেন ২০ লাখ টাকা।

যেটা ওই সময় কেবল বাংলাদেশের কোনো ফুটবলারের রেকর্ড পারিশ্রমিক নয়; উপমহাদেশে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। এখনকার ফুটবলাররা তার রেকর্ড ভাঙলেও সেই ২০ লাখের আবেদন এখনো রয়ে গেছে।
 মোনেম মুন্না ১৯৬৬ সালের ৯ জুন  নারায়ণগঞ্জের বন্দরে জন্মগ্রহণ করেন। আশির দশকের মাঝামাঝি বাংলাদেশের ফুটবলে মুন্নার উত্থান। কিংবদন্তি মুন্নাকে স্মরণ করে বুধবার তার জন্মস্থান নারয়ণগঞ্জে দিনব্যাপী কর্মসূচি পালন করে বিভিন্ন সংগঠন। মোনেম মুন্না স্মৃতি সংসদ, নারায়ণগঞ্জ সোনালী অতীত ক্লাব ও নারায়ণগঞ্জ জেলা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে শোক র‌্যালি করা হয়। র‌্যালিতে ছিলেন সাবেক ও বর্তমান জাতীয় দলের ফুটবলার ও সংগঠক। মুন্নার কবরে শ্রদ্ধাঞ্জলি দেওয়া হয় এবং দোয়া মাহফিল হয়। প্রতিবছরই এমন আয়োজন হয়ে থাকে।

×